নগদেই চলছে পার্কিং-ফি নেওয়া, সমস্যা কি ই-পস যন্ত্রে?
আনন্দবাজার | ২০ অক্টোবর ২০২৫
পার্কিং-ফি আদায়ের প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে অ্যাপ-ভিত্তিক পার্কিং-ফি আদায়ের ব্যবস্থা চালু করেছিল কলকাতা পুরসভা। কিন্তু অভিযোগ, দু’বছর পরেও পুরসভার বরাতপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থা কলকাতা শহরের অধিকাংশ এলাকায় নগদে পার্কিং-ফি আদায় করে চলেছে। অ্যাপ-ভিত্তিক পার্কিং-ফি আদায় চালু করতে ৪০টি বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার হাতে প্রায় ৬০০টি ই-পস যন্ত্র দিয়েছিল পুরসভা। যদিও অধিকাংশ যন্ত্রই ব্যবহার করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। সেখানে নগদে পার্কিং-ফি আদায় চলছে। পার্কিং-ফি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও পুরসভার নির্দিষ্ট বিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। ফলে, পার্কিং-ফি বাবদ আদায় করা টাকার কতটা অংশ পুরসভার কোষাগারে জমা পড়ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গিয়েছে।
পার্কিং-ফি আদায়ের অ্যাপ-ভিত্তিক ব্যবস্থা চালু থাকলেও সাধারণ মানুষের থেকে কেন নগদে ফি আদায় করা হচ্ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে পুরসভা, বিভিন্ন বরাতপ্রাপ্ত সংস্থা এবং ই-পস যন্ত্র সরবরাহকারী সংস্থা— সব পক্ষই একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করেছে।
পুরসভার পার্কিং দফতর সূত্রের খবর, কলকাতার প্রায় ৭০০টি রাস্তায় পার্কিং-ফি আদায় করা হয়। এই কাজের জন্য পুরসভা ৪০টি বেসরকারি সংস্থাকে বরাত দিয়েছিল। বড়বাজারের ব্রেবোর্ন রোডে পার্কিং-ফি আদায়ের কাজে নিযুক্ত একটি সংস্থার এক প্রতিনিধি দাবি করলেন, ‘‘ব্রেবোর্ন রোডে পার্কিং-ফি আদায়ের জন্য আমাদের ৫০টি ই-পস যন্ত্র দেওয়া হলেও কোনওটাই কাজ করে না। তাই বাধ্য হয়েই নগদে পার্কিং-ফি আদায় করতে হয়। যন্ত্র সারানোর জন্য সরবরাহকারী সংস্থাকে বহু বার বলেও লাভ হয়নি।’’
পার্কিং-ফি আদায়ের বরাতপ্রাপ্ত অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিদের মুখেও শোনা যাচ্ছে একই কথা। একটি সংস্থার প্রতিনিধির কথায়, ‘‘ই-পস যন্ত্র থাকলেও ইন্টারনেট কাজ করে না। ফলে, যন্ত্র থেকে বিল বেরোতে খুব দেরি হয়।’’ আর একটি সংস্থার প্রতিনিধি বললেন, ‘‘বেআইনি ভাবে পার্কিং-ফি আদায় ঠেকাতে ই-পস যন্ত্র চালু করা নিঃসন্দেহে খুব ভাল উদ্যোগ। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ঠিকঠাক তৈরি হয়নি। সারা শহরে পুরসভার দেওয়া মোট ৬০০টি যন্ত্র ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা, তা দেখার জন্য সরবরাহকারী সংস্থার নিযুক্ত মাত্র চার জন কর্মী রয়েছেন। তাই কোনও যন্ত্রে সমস্যা হলে তা ঠিক করতে দিন কাবার হয়ে যায়।’’
পার্কিং-ফি আদায়কারী সংস্থাগুলির প্রতিনিধিরা আরও জানাচ্ছেন, প্রতিটি ই-পস যন্ত্রের সার্ভিস-ফি বাবদ মাসে প্রায় ৫০০ টাকা সরবরাহকারী সংস্থাকে দিতে হয়। অর্থাৎ, সরবরাহকারী সংস্থা বিভিন্ন পার্কিং-ফি আদায়কারী সংস্থার কাছ থেকে মাসে মোট তিন লক্ষ টাকা পাচ্ছে। পার্কিং-ফি আদায়কারী সংস্থাগুলির প্রতিনিধিদের সাফ কথা, ‘‘ই-পস যন্ত্রের জন্য প্রতি মাসে মোটা টাকা দিলেও পরিষেবা যথাযথ মিলছে না। ফলে, নগদহীন পার্কিং-ফি আদায় করা সম্ভব হচ্ছে না।’’
এই প্রসঙ্গে ই-পস যন্ত্র সরবরাহকারী সংস্থার অধিকর্তা তুহিনশুভ্র বিশ্বাস বললেন, ‘‘প্রতিটি ই-পস যন্ত্রেই দু’টি করে সিম ঢোকানোর ব্যবস্থা রয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই, নেটওয়ার্ক পেতে একটি সিম ব্যর্থ হলে অন্য সিম কাজ করবে। সংস্থার তরফে প্রতিটি যন্ত্রে একটি করে সিম দেওয়া হয়েছিল। পুরসভার সঙ্গে চুক্তি হয়েছিল, আর একটি সিম পুরসভা বা পার্কিং-ফি আদায়কারী সংস্থা দেবে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সমস্ত ই-পস যন্ত্রে একটি সিমেই কাজ চলছে। ফলে, নেটওয়ার্কের সমস্যা রয়েই গিয়েছে।’’ তুহিনশুভ্রের আরও অভিযোগ, ‘‘আমাদের একটি ওয়টস্যাপ গ্রুপ রয়েছে। ওই গ্রুপে পার্কিং-ফি আদায়কারী সংস্থার প্রতিনিধি ও পুরসভার কর্তারাও রয়েছেন। কিন্তু সেখানে আজ পর্যন্ত ই-পস নিয়ে কেউ অভিযোগ করেননি।’’ যদিও পার্কিং-ফি আদায়কারী সংস্থার প্রতিনিধিরা এ কথা অস্বীকার করেন।
সমস্ত অভিযোগ শুনে পুরসভার মেয়র পারিষদ (পার্কিং) দেবাশিস কুমার বলেন, ‘‘ই-পস যন্ত্র তো সবই ঠিকঠাক চলছে বলে জানি। যে সমস্ত বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মীরা অভিযোগ করছেন, তাঁরা লিখিত অভিযোগ দিন। নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’’