দেবী চৌধুরাণীর শ্মশানকালী মন্দিরে সকাল থেকে পুজোর প্রস্তুতি, মাকে পরানো হল অলঙ্কার
বর্তমান | ২০ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিবেদন, জলপাইগুড়ি: সোমবার সকাল থেকে জলপাইগুড়ির গোশালা মোড়ের কাছে দেবী চৌধুরাণীর মন্দিরে শুরু হয়েছে মা কালীর পুজোর প্রস্তুতি। দেবীকে অলঙ্কার পরাতে ব্যস্ত মন্দিরের পুরোহিত। ইতিমধ্যেই কয়েকশো বছরের প্রাচীন এই মন্দিরে শুরু হয়ে গিয়েছে ভক্তদের আনাগোনা। যত বেলা গড়াবে ভিড় ততই বাড়বে বলে জানিয়েছেন মন্দির কমিটির সম্পাদক দেবাশিস সরকার। এই মন্দিরে দিনেও গা ছমছমে পরিবেশ। সন্ধ্যা নামতেই নিঝুম হয়ে যায় চারদিক। আজও বহাল রয়েছে বলির প্রথা। শ্মশান কালীর পুজোতে মাকে শোল মাছ, বোয়াল মাছ সহ আমিষ ভোগ নিবেদন করা হয়। মায়ের একহাতে রক্তমাখা নরমুণ্ড আর একহাতে সুরাবাটি। মায়ের হাতে নেই কোনও অস্ত্র। রীতি মেনে পুজোয় মাকে সুরা বা মদ দেওয়া হয়। বলা হয়, এই পুজোর প্রথম পুরোহিত ছিলেন ভবানী পাঠক।জঙ্গলে ঘেরা চারদিক। পাশ দিয়ে বয়ে গিয়েছে রুকরুকা নদী। পাশেই রয়েছে শ্মশান। তারই মাঝে দেবী চৌধুরাণীর এই কালীমন্দির। মন্দির ঘিরে রয়েছে কয়েকশো বছরের ইতিহাস। জনশ্রুতি, মন্দিরের পাশ থেকে বয়ে যাওয়া রুকরুকা নদী দিয়ে বজরায় চেপে আসতেন দেবী চৌধুরাণী। তাঁর হাতেই পুজো শুরু হয় এখানে। আগে বটগাছের নীচে মায়ের পুজো হতো। সেসময় বিশালাক্ষী রূপে দেবীর পুজো করতেন ডেঙ্গুয়াঝাড় চা বাগান এলাকার আদিবাসীরা। এরপর বেশ কিছুদিন এখানে পুজোর দায়িত্ব নেয় জলপাইগুড়ির রাজ পরিবার। কিন্তু জঙ্গলের মাঝে মায়ের পুজো খুব বেশিদিন চালাতে পারেনি তারা। রাজ পরিবার হাতগুটিয়ে নিলে এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের কাঁধে তুলে নেন পুজোর দায়িত্ব। অনেক পরে তৈরি হয় পাকা মন্দির। বর্তমান মন্দিরে যেখানে বিগ্রহের বেদী, সেখানে নাকি একসময় বিশাল এক কপিকল ছিল। সেটি ঘোরালেই খুলে যেত গুহার দরজা। সুড়ঙ্গপথে এখান থেকে পৌঁছে যাওয়া যেত জলপাইগুড়ির পান্ডাপাড়ায়। এছাড়াও মন্দির চত্বরে একাধিক গুহার চিহ্ন রয়েছে। স্থানীয়দের দাবি, রুকরুকা নদীতে যে বজরা চলাচল করত, কয়েক দশক আগেও তার প্রমাণ ছিল। নদীর ঘাটে বজরা নোঙর করার জন্য ছিল বিশাল থাম। তার গায়ে ছিল লোহার আংটা। ওই আংটায় শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হতো বজরা। মন্দির চত্বরে যে বটগাছ রয়েছে, ইংল্যান্ডের এক উদ্ভিদ বিজ্ঞানীকে দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে জানা গিয়েছে সেটির বয়স চারশো বছরেরও বেশি।মন্দির কমিটির সম্পাদক দেবাশিস সরকার বলেন, “এই মন্দিরের সঙ্গে দেবী চৌধুরাণীর প্রত্যক্ষ যোগ রয়েছে। রুকরুকা নদীর সঙ্গে যোগ রয়েছে করলার। আর করলা গিয়ে মিশেছে তিস্তায়। বজরায় চেপে এই নদীপথে যাতায়াত ছিল দেবী চৌধুরাণীর। তখন জঙ্গলে ভরা ছিল চারদিক। শ্বাপদসঙ্কুল। তারই মাঝে বটগাছের নীচে মা কালীর পুজো করেন দেবী চৌধুরাণী।”