‘ছিল ১২৬, রইল বাকি ১১’, শাহী সুরে মাওবাদী মুক্ত ভারতের ‘গ্যারান্টি’ মোদির
প্রতিদিন | ২০ অক্টোবর ২০২৫
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মাওবাদের শিকড় গোড়া থেকে উপড়ে ফেলতে কোমর বেঁধে মাঠে নেমেছে কেন্দ্র। ২০২৬ সালের মার্চ মাসের মধ্যে দেশকে মাওবাদী মুক্ত করার ঘোষণা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সেই সুরই এবার ধরা পড়ল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির গলায়। সোমবার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী জানালেন, “গত ১১ বছরে দেশের মাওবাদী প্রভাবিত জেলার সংখ্যা ১২৬ থেকে কমে ১১তে দাঁড়িয়েছে। গত ৭৫ ঘণ্টায় ৩০৩ জন মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন।” এর পরই মোদি বলেন, তিনি গ্যারান্টি দিচ্ছেন, দেশ থেকে মাওবাদ পুরোপুরি নির্মূল হবে।
নিরাপত্তাবাহিনীর প্রশংসা করে এদিন প্রধানমন্ত্রী বলেন, “ক্ষমতায় আসার পর আমাদের সরকার মাওবাদ নির্মূল করতে নিরন্তর কাজ করছে। দেশ তার ফলাফল দেখছে। একটা সময় দেশে ১২৫টির বেশি জেলা মাও-সন্ত্রাসে আক্রান্ত ছিল, যা কমে এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ১১তে। এর মধ্যে আবার ৮ জেলায় মাওবাদের প্রাদুর্ভাব কমেছে, মাত্র ৩টি জেলায় ওদের প্রাদুর্ভাব বেশি। গত দশকে প্রচুর মাওবাদী আত্মসমর্পণ করেছেন, যাঁদের কাছ থেকে প্রচুর অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে।” প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, “একটা সময় মাওবাদীদের দুর্গ বলা হল বস্তারকে। আজ সেখানকার পথভ্রষ্ট যুবকরা মূল স্রোতে ফিরে আসছেন। এই পথে তাঁরা তাঁদের যৌবন কাটিয়ে ফেলেছেন। পরিবর্তন আনতে যে পথকে তাঁরা সঠিক বলে ভেবেছিলেন যে ভুল তাঁদের ভেঙেছে। এখন তাঁরা সংবিধানের পথে। একদা মাও-অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিও আজ দীপাবলির আলোয় আলোকিত হচ্ছে। সেখানেও আনন্দের প্রদীপ জ্বলবে। আমি দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছি যে সেই দিন খুব বেশি দূরে নয় যখন দেশ সম্পূর্ণরূপে মাওবাদী সন্ত্রাস থেকে মুক্ত হবে। এটিও মোদির গ্যারান্টি।”
দেশে মাওবাদের বাড়বাড়ন্তের জন্য কংগ্রেসকেও তোপ দাগতে ছাড়েননি মোদি। তিনি বলেন, “কংগ্রেসের শাসনে দেশে মাওবাদের লাগাতার শ্রীবৃদ্ধি হয়েছে। এদের মদতেই ‘আরবান নকশাল’ দেশে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। মাওবাদীদের সন্ত্রাসের কথা যাতে দেশের মানুষের কানে না পৌঁছয় তার জন্য একটা বড় চক্র কাজ করত। দেশে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনা হয়েছে, ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার নিয়ে বিতর্ক হয়েছে, কিন্তু কংগ্রেস শাসনে মাওবাদীরা কীভাবে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দখল করে সেসব ধামাচাপা দেওয়া হয়।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাওবাদের কারণে দেশ যুবসমাজকে হারিয়েছে। মাওবাদীরা স্কুল, হাসপাতাল তৈরি করতে দেয়নি। যা তৈরি হয়েছিল তা বোমা মেরে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। আদিবাসীরা উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল। দলিত, আদিবাসীদের উপর দারিদ্র চরম আকার নিয়েছিল। বহু মা তাঁর সন্তান হারিয়েছেন। গত ৫০ বছরে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন। তবে সে পরিস্থিতি এখন বদলে গিয়েছে।”
প্রসঙ্গত, মাওবাদীদের অস্ত্র ত্যাগ করাতে ‘নকশাল আত্মসমর্পণ এবং আক্রান্তদের পুনর্বাসন নীতি ২০২৫’-এ বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে ছত্তিশগড় সরকার। যেখানে আত্মসমর্পণকারী মাওবাদীদের পুনর্বাসন, চাকরি, আর্থিক পুরস্কার এবং আইনি সুরক্ষা প্রদান করা হয়। মাওবাদী নেতাদের পদ অনুযায়ী সুবিধা প্রদান করা হয় নয়া পুনর্বাসন নীতিতে। রাজ্য কমিটি, আঞ্চলিক কমিটি, কেন্দ্রীয় কমিটি এবং পলিটব্যুরোর সদস্যদের মতো উচ্চপদস্থ ক্যাডারদের এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়। যাঁরা লাইট মেশিনগান-সহ আত্মসমর্পণ করবেন, তাঁরাও পাবেন পাঁচ লক্ষ টাকা নগদ পুরস্কার। যে সব ক্ষেত্রে মাওবাদী ইউনিটের ৮০ শতাংশ সদস্য একসঙ্গে আত্মসমর্পণ করবেন, সেখানে দ্বিগুণ পুরস্কার প্রদান করা হবে। পুনর্বাসনের এই প্যাকেজে রয়েছে চাকরি এবং সন্তানদের শিক্ষায় সাহায্যও।