নরবলি বন্ধ করেন খোদ তান্ত্রিক, সিমলাগড়ের দক্ষিণাকালী মায়ের ভোগে এখন থাকে পোনা মাছ
প্রতিদিন | ২০ অক্টোবর ২০২৫
সুমন করাতি, হুগলি: কথায় আছে কালীক্ষেত্র কলকাতা! কিন্তু বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা কালীর মাহাত্ম্য কোনও অংশেই কম নয়। শুধু তাই নয়, রয়েছে বিভিন্ন ইতিহাসও। যেমনটা রয়েছে সিমলাগড় কালীকে নিয়ে থাকা বিভিন্ন কাহিনি। প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো হুগলির পাণ্ডুয়ার সিমলাগড়ের দক্ষিণাকালী। একটা সময় একেবারে শ্মশান এবং জঙ্গলে ঘেরা ছিল গোটা এলাকা। ছিল না কোনও জনবসতিও। এতটাই গভীর জঙ্গল ছিল যে, মানুষজন সেই সমস্ত জায়গায় যেতে রীতিমতো ভয় পেতেন। লোকশ্রুতি বলছে, জঙ্গল ঘেরা ওই এলাকার পাশে থাকা পুকুর পাড়ে বসবাস ছিল এক কাপালিকের। পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে ওই কাপালিক এই মা কালীর সাধনা করতেন।
স্থানীয় ইতিহাস বলছে, ডাকাতরা ডাকাতি করতে যাওয়ার সময় ওই ঘন জঙ্গলে গিয়ে এই মায়ের পুজো দিতেন। শোনা যায়, মা কালীর সামনে নরবলিও দিত ডাকাতের দল। যদিও পরে তান্ত্রিকের চাপে বন্ধ হয় সেই বলি। এমনকী রঘু ডাকাতও এই কালীর সাধনা করেছিলেন বলে লোকমুখে শোনা যায়। ধীরে ধীরে সিমলাগড়ের দক্ষিণাকালীর গুরুত্ব বাড়তে শুরু করে। যদিও তৎকালীন সময়ে ওই এলাকার নাম ছিল হরিহরপুর। এই মন্দিরের সংলগ্ন এলাকার রাস্তার গুরুত্ব বাড়তে থাকে। স্থানীয়রা জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর চলাচলের জন্য জিটি রোডের গুরুত্ব বাড়তে শুরু করে। স্থানীয় মানুষজন আতঙ্কে মায়ের শরণ নেন।
দক্ষিণাকালী রূপে এই পূজিত হন মা। তৎকালীন সময়ে মায়ের কোনও নির্দিষ্ট নাম ছিল না। কেউ বলতেন শ্মশানকালী আবার কেউ ডাকাত কালী। স্থানীয়দের কথায়, একদিন তান্ত্রিক নটোবর ভট্টাচার্য মা কালীর পুজো করতে গিয়ে দেখেন মন্দিরের সামনে নরমুণ্ড ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে। যা দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই তান্ত্রিক। পুজো না করে চলে এসেছিলেন। এই ঘটনার চারদিন পর দেবী স্বপ্নাদেশ দেন ওই তান্ত্রিককে। দেবী জানান, আমি উপোসে রয়েছি, আমার পুজো হয়নি। তুই কি চাস? তখন তিনি বলেছিলেন এখানে নরবলি বন্ধ করতে হবে। তখন থেকেই বন্ধ হয়ে যায় নরবলি। যদিও এখন ছাগ বলি প্রথা চালু রয়েছে।
তবে সময়ের সঙ্গে এখন অনেক কিছু বদলে গিয়েছে। ধীরে ধীরে তৈরি হয়েছে মন্দির। দক্ষিণাকালীর মাহাত্ম্যের কথা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছে দূরদূরান্তে। মায়ের কৃপা পেতে প্রত্যেকদিনই ভিড় জমান ভক্তরা। মন্দিরের আশেপাশে গড়ে উঠেছে জনবসতি। তৈরি হয়েছে দোকান। তবে একটা সময় এই মন্দিরের চারপাশে কোনও দোকান ছিল না। বর্ধমান থেকে আগত ট্রাকচালকরা মায়ের পুজোর জন্য নিয়ে আসতেন মিহিদানা, সীতাভোগ। বর্তমানে পুরোহিত অনামিক চট্টোপাধ্যায় বলেন, ”ঠিক কত বছর আগে মায়ের পুজো শুরু হয় তা অজানা অনেকেরই। তবে মন্দিরের মা এখানে খুবই জাগ্রত।” সেবায়েতের কথায়, জিটি রোড দিয়ে যাওয়ার সময় প্রত্যেকটি গাড়ির ড্রাইভারই মায়ের পুজো দিয়ে যান।”
তবে আজ কালীপুজোর দিন মাকে বিভিন্ন ফল দিয়ে পুজো দেওয়া হবে বলে জানান অনামিক চট্টোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, সিমলাগড়ের দক্ষিণাকালী সন্দেশ খেতে খুব ভালোবাসেন। তাই পুজোতে অবশ্যই থাকবে সন্দেশ। শুধু তাই নয়, মায়ের ভোগে থাকবে পোনা মাছ।