• ব্লক সভাপতি হওয়ার মানদণ্ড কী, তা নিয়ে তৃণমূলে জোর জল্পনা
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • তৃণমূলের ব্লক সভাপতি বদল নিয়ে জোর জল্পনা চলছিল। কোন নীতিতে সভাপতি বদল হবে, সেই জল্পনায় একপ্রকার যবনিকাপাত হল বলে মনে করা হচ্ছে। লোকসভায় যেখানে তৃণমূল জিতেছে, সেখানকার ব্লক সভাপতি পদে বহাল থাকবেন। যেখানে তৃণমূল পিছিয়ে সেখানে ব্লক সভাপতিকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে। কয়েকটি জেলা বাদ দিয়ে সারা রাজ্যে সাংগঠনিক রদবদলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতিই কার্যকর করা হচ্ছে বলে খবর। লোকসভা ভোটে হেরে যাওয়ার সূচকই কি তাহলে হবে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী বাছাইয়ের মানদণ্ড? এ নিয়ে এখন আলোচনা তুঙ্গে।

    তৃণমূল সূত্রের খবর, সম্প্রতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠবৃত্তে তাঁর নীতি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা জানিয়েছেন। লোকসভা ভোটে নিজের এলাকায় যিনি জিতিয়েছেন, তিনি কোনও বড় নেতার অপছন্দের হলেও পদে বহাল থাকবেন। আর যিনি জেতাতে পারেননি তিনি কোনও বড় নেতার ‘কাছের লোক’ হলেও সরিয়ে দেওয়া হবে। ‘এক ব্যক্তি-এক পদ’ নীতিও কার্যকর হওয়ার দাবি অভিষেক ঘনিষ্ঠদের। ছাব্বিশের নির্বাচনে টিকিট বণ্টনে সূচক কী হবে তা নিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বেড়েছে কৌতূহল।

    চব্বিশের লোকসভায় যে সব আসনে তৃণমূল হেরেছিল, সেখানে এমন অনেক বিধানসভা রয়েছে, যেখানে ২০২১ সালে তৃণমূল জিতেছিল। গত বিধানসভা ভোটে রায়গঞ্জ লোকসভার অন্তর্গত করণদিঘিতে তৃণমূল জিতেছিল। চব্বিশের লোকসভা ভোটে সেই বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল ২১ হাজার ভোটে পিছিয়ে গেছে। অনেক লোকসভা আসন তৃণমূল অবশ্য পুনরুদ্ধারও করেছে। হুগলি লোকসভা বিজেপির থেক পুনরুদ্ধার করেছে তৃণমূল।

    সেই হুগলির অধীনে রয়েছে সপ্তগ্রাম বিধানসভা। সেখানকার বিধায়ক প্রবীণ তৃণমূল নেতা তপন দাশগুপ্ত। তিনি একবার প্রতিমন্ত্রীও হয়েছিলেন। জেলা সভাপতিও ছিলেন। তাঁর কেন্দ্রেই গত লোকসভা ভোটে তৃণমূলের রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় পিছিয়ে ছিলেন প্রায় দু’হাজার ভোটে। আবার হুগলি লোকসভার অন্তর্গত বলাগড় বিধানসভায় পিছিয়ে তৃণমূল। বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারীকে নিয়ে দলের মধ্যেই রয়েছে অস্বস্তি। ফের তাঁকে প্রার্থী করতে চান না তৃণমূলে একাংশ। পিছিয়ে থাকলে কী কাটা যাবে তপনের মতো দীর্ঘ দিনের নেতার নাম প্রশ্ন উঠছে।

    গত কয়েক বছর ধরেই তৃণমূলে প্রার্থী তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে পরামর্শদাতা সংস্থার সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। তাদের সমীক্ষাকে দলে গুরুত্ব দেওয়া হয়। তাতে ফল মিললেও দলের সুপ্রিমো মমতাই চূড়ান্ত তালিকায় সিলমোহর দেন। তবে জেতা বা হারাকে প্রাধান্য দিলে জেতা বিধায়ক এবং অনুগামীদের মধ্যে সংশয় তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

    তৃণমূল সূত্রে খবর, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে শুধু একটি সূচকই দেখা হবে না। জেতা বিধায়কের বয়স, শেষ পাঁচ বছরের সক্রিয়তা, বিধানসভায় হাজিরা, আলোচনায় অংশগ্রহণ করা— ইত্যাদি নানা বিষয়ও মাথায় রাখা হবে।  কালীপুজোর আগেই বীরভূম জেলায় তৃণমূলে সাংগঠনিক রদবদল করা হয়েছে। রবিবার সেই তালিকা প্রকাশিত করা হয়েছে। বোলপুর, রামপুরহাট শহর সহ বেশ কিছু ব্লকে রদবদল হয়েছে। তবে সিউড়ি-২ ব্লকে ‘পরিবর্তন’ নিয়ে সবচেয়ে বেশি জল্পনা চলছিল। জল্পনায় কার্যত জল ঢেলে ব্লক সভাপতি পদে বহাল রইলেন নুরুল ইসলামই।

    রামপুরহাট শহর সভাপতি পদে শহরের ১১নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকে সরানো হয়েছে। সেখান  আনা হয়েছে ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার শতাব্দী রায় ঘনিষ্ঠ অর্ণব গঙ্গোপাধ্যায়কে। একইসঙ্গে শহর সহ সভাপতি করা হয়েছে ৮নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রিয়নাথ সাউ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলারের স্বামী অনিন্দ্যকুমার সাহাকে। এর আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর সৈয়দ সিরাজ জিম্মিকে জেলা সহ সভাপতি করা হয়েছিল। নতুন তালিকায় তাঁকে পুনরায় সেই পদ দেওয়া হয়েছে।

    একইভাবে শহরের প্রাক্তন সভাপতি সুশান্ত মুখোপাধ্যায়কে জেলা সম্পাদক ও রামপুরহাট-১ ব্লকের সহ সভাপতি সৈয়দ মইনুদ্দিন হোসেনকে জেলা সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। জেলা সহ সভাপতির পদ থেকে বাদ পড়েছেন পুরসভার চেয়ারম্যান সৌমেন ভকত। বোলপুরের শহর সভাপতি পদে সুকান্ত হাজরাকে সরিয়ে সুব্রত হাজরা ওরফে ডালিমকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সুকান্তকে জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।

    ময়ূরেশ্বর-২ ব্লকের সভাপতি ছিলেন প্রমোদ রায়। নতুন তালিকায় তাঁকে রেখে জয়েন্ট কনভেনর করা হয়েছে উলকুণ্ডা অঞ্চলের সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ সামসুল আলমকে। ময়ূরেশ্বর-১ ব্লকের মহিলা সভাপতির পদ থেকে কল্যাণী লেটকে সরিয়ে পরশমণি মুমর্কে আনা হয়েছে।

    দীর্ঘদিন ধরে নলহাটি-২ ব্লকের কোনও সভাপতি নেই। জেলা কোর কমিটি পাঁচজনের কমিটি গড়ে দিয়েছিল। নতুন তালিকায় পাঁচজনের কমিটিই থাকল। এছাড়াও জেলার মহিলা, যুব ও শ্রমিক সংগঠনের পদে একাধিক রদবদল হয়েছে।

     
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)