• পাহাড়ে বিপর্যয়ের পর স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় উদ্বেগ, দার্জিলিংয়ে পূর্ণাঙ্গ ট্রমা সেন্টারের দাবি জোরালো
    দৈনিক স্টেটসম্যান | ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • সাম্প্রতিক বৃষ্টি, ধস ও বন্যার ভয়াবহতা থেকে উত্তরবঙ্গ এখনও পুরোপুরি সামলে উঠতে পারেনি। যে কোনও বিপর্যয় মোকাবিলায় সারাবছর জুড়ে প্রস্তুতি ও সতর্কতা যে কতটা জরুরি তা বুঝিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির এই তাণ্ডব। বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন পরিস্থিতিতে দার্জিলিং পাহাড়ে একটি পূর্ণাঙ্গ ট্রমা সেন্টার, ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট বেড এবং প্রয়োজনে এয়ার লিফটিংয়ের মতো আধুনিক অসামরিক ব্যবস্থার প্রয়োজন।

    সেই কারণেই দার্জিলিং জেলা হাসপাতালকে কেন্দ্র করে পাহাড়ের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর দাবি উঠে আসছে। বর্তমানে দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার স্বাস্থ্যব্যবস্থা নানাভাবে পিছিয়ে আছে। সরকারি সূত্রে জানা গেছে, এই দুই জেলা হাসপাতাল মিলিয়ে প্রায় ১৬০ জন চিকিৎসক ও নার্সের ঘাটতি রয়েছে। দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক পদটি দীর্ঘদিন ধরে ফাঁকা।

    শুধু দার্জিলিং জেলা হাসপাতালেই অন্তত ২৮ জন মেডিকেল অফিসারের অভাব। অন্যদিকে, ২০১৭ সালে কালিম্পং জেলা হওয়ার পর সেখানকার প্রাক্তন মহকুমা হাসপাতাল জেলা হাসপাতালের মর্যাদা পেলেও এখনও সেখানে শূন্য রয়েছে প্রায় ২৫টি চিকিৎসকের পদ। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে আরও জানা গেছে, পাহাড়ে রোগীর চাপ তুলনামূলক কম হওয়ায় এখানকার অনেক মেডিকেল অফিসার বা জিডিএমও চিকিৎসকেরা কিছুটা নিশ্চিন্তে এমডি-এমএস পড়ার প্রস্তুতি নিতে পারেন।

    তাই সার্ভিস কোটায় ট্রেনি রিজার্ভ (টিআর) হিসেবে অন্য জেলার তুলনায় এখান থেকে বেশি চিকিৎসক উচ্চশিক্ষায় যোগ দেন। শুধু এই বছরই প্রায় ২০ জন চিকিৎসক দার্জিলিং থেকে এমডি-এমএস পড়তে গিয়েছেন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল ১৫। এর ফলে পাহাড়ের চিকিৎসা পরিষেবায় কার্যত শূন্যতা তৈরি হয়েছে।

    এমনিতেই দার্জিলিংয়ের ভৌগোলিক অবস্থান কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত সংবেদনশীল। ‘চিকেন নেক’ বা উত্তরবঙ্গের সরু সংযোগপথের কাছাকাছি হওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তার দিক থেকেও এখানে সবসময় একটা চাপা আশঙ্কা কাজ করে। তার ওপর বছরভর পর্যটকদের আগমন, ঘনঘন পথ দুর্ঘটনা এবং উচ্চতাজনিত অসুস্থতা, সব মিলিয়ে স্বাস্থ্যব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ছে প্রতিনিয়ত।

    সাম্প্রতিক বিপর্যয়ের সময়ও চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সীমিত পরিকাঠামো নিয়েই অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। শুধু দার্জিলিং জেলা হাসপাতালেই ওই সময় চিকিৎসা পেয়েছেন প্রায় ১৭৩ জন মানুষ, যার মধ্যে ৩৭ জনের অস্ত্রোপচার হয়। গুরুতর আহত পর্যটকসহ ছ’জনের বড় অপারেশন করা হয় জরুরি ভিত্তিতে।

    তবে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের ঘাটতি ও পরিকাঠামোর সীমাবদ্ধতা নিয়ে প্রশাসনিক স্তরে উদ্বেগ বাড়ছে। দার্জিলিংয়ের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডা. তুলসী প্রামাণিক জানিয়েছেন, ‘যে সব সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা আছে, সবই স্বাস্থ্যভবনে জানানো হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি যাতে ভবিষ্যতের বিপর্যয়ের আগে সব রকম প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা যায়।’
  • Link to this news (দৈনিক স্টেটসম্যান)