• সুদৃশ্য দফতর, এসি ঘর থাকবে না, বৈঠকেও লোক পাবেন না! এসআইআর নিয়ে বঙ্গ বিজেপির একাংশকে হুঁশিয়ারি শমীকের
    আনন্দবাজার | ২০ অক্টোবর ২০২৫
  • জেলায় জেলায় সুদৃশ্য পার্টি অফিস থাকবে না! শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসা আর হবে না! এমনকি, ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক ডেকেও লোক পাবেন না, যদি ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সমীক্ষার (এসআইআর) কাজ গুরুত্ব দিয়ে না করেন! দলের বিভিন্ন স্তরে এই বার্তা দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য।

    এসআইআর প্রক্রিয়া ‘সফল’ করতে জেলায় জেলায় ঘুরে বিজেপির রাজ্যস্তরের নেতারা বৈঠক করছেন। বুথস্তরীয় এজেন্টদের (বিএলএ-২) প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। এসআইআর ঠিকমতো হল কি না, তা বুঝে নেওয়ার সূচকও বাতলে দিচ্ছেন। কিন্তু তার মধ্যেই এই অভিযানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কিছু নেতাকে ভার্চুয়াল বৈঠকে ‘সতর্কবার্তা’ শুনতে হল।

    ওই ভার্চুয়াল বৈঠকে রাজ্য বিজেপির প্রথম সারির নেতারা ছিলেন। ছিলেন জেলা সভাপতিরা। বিএলএ-২ প্রশিক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও ছিলেন। বিজেপি সূত্রের খবর, নৈশকালীন বৈঠকে শেষ বক্তা ছিলেন শমীক। এসআইআর প্রক্রিয়া পশ্চিমবঙ্গে সুসম্পন্ন করা কতটা জরুরি, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি দলকে কার্যত হুঁশিয়ারিই দিয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। শমীক বৈঠকে যা বলেছেন, তার সারমর্ম হল— যাঁরা বিএলএ প্রশিক্ষণ তথা এসআইআর রূপায়ণের দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরা যদি মনে করেন, যে আর পাঁচটা কাজের মতো এই কাজটাও ‘করতে হয়, তাই করছেন’, তা হলে ভুল করছেন। কর্তব্যে কারও গাফিলতির কারণে যদি এসআইআর রূপায়ণে রাজনৈতিক দল হিসাবে বিজেপির ভূমিকায় ঘাটতি থেকে যায়, তা হলে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের পরে রাজ্যে দলের নেতা-কর্মীদের কঠিন পরিস্থিতির মুখে দাঁড়াতে হবে। কোনও রাখঢাক না-করে রাজ্য সভাপতি শমীক বলেন, জেলায় জেলায় দলের যে সব সুদৃশ্য কার্যালয় গড়ে উঠেছে, সে সব তৃণমূল দখল করে নেবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে গিয়ে বসা আর হবে না। এমনকি, ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠক করার লোকও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

    শুধু রাজ্য সভাপতি নন, বঙ্গ বিজেপির প্রথম সারির অন্য নেতানেত্রীরাও জেলায় জেলায় ঘুরে প্রায় একই ধাঁচের সতর্কবার্তা শোনাচ্ছেন। রাজ্যস্তরের এক নেতা সম্প্রতি দক্ষিণবঙ্গের একটি জেলায় গিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বকে বলেছেন, ১০০ শতাংশ দরকার নেই, এসআইআর যদি ৮০ শতাংশও সফল করা যায়, তা হলে কেন্দ্রীয় বাহিনী লাগবে না। সিভিক ভলান্টিয়ার দিয়ে তৃণমূল ভোট করালেও জিততে পারবে না। কিন্তু পরের বাক্যেই তাঁরও সতর্কবার্তা, এসআইআর সফল ভাবে করানো না গেলে ন্যাটো বাহিনী নামিয়ে ভোট করলেও তৃণমূলকে হারানো যাবে না।

    জেলায় জেলায় গিয়ে বিজেপি নেতারা এসআইআর তথা বিএলএ প্রশিক্ষণের কর্মশালায় ব্যাখ্যা করছেন, এসআইআর হয়ে যাওয়ার পরে ভোটার তালিকার চেহারা দেখে কী ভাবে সাফল্য বা ব্যর্থতা বোঝা যাবে। কোন বিধানসভা আসনে কত ভোটার কমতে পারে, তার আনুমানিক হিসাবও দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতাদের। বিজেপি সূত্র বলছে, রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২৫৮টি আসনে ভোটারসংখ্যার ‘অস্বাভাবিক বৃদ্ধি’ চিহ্নিত হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্বের ব্যাখ্যা, ‘‘বৃদ্ধির হার স্বাভাবিক হলে ১৫ বছরে সর্বোচ্চ ২০-২১ শতাংশ ভোটার বাড়তে পারে। কিন্তু ২০১১ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ২৫৮টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোটার বৃদ্ধির হার তার চেয়ে অনেক বেশি। এসআইআর হয়ে যাওয়ার পরে যদি দেখা যায় যে, স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত সংখ্যাটা তালিকায় নেই, তা হলেই বোঝা যাবে এসআইআর সফল।’’

    ভোটারসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমাপ ‘স্বাভাবিক’ না ‘অস্বাভাবিক’, তা মাপা হয় তিনটি সূচকের ভিত্তিতে। জনসংখ্যা, দশকপ্রতি জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার এবং জনসংখ্যা-ভোটারসংখ্যা অনুপাত। বিজেপি সূত্রের দাবি, এই সূচকগুলিকে কাজে লাগিয়েই হিসাব কষা হয়েছে। তাতেই বোঝা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে গত ১৪-১৫ বছরে সর্বোচ্চ ২০-২১ শতাংশ ভোটার বৃদ্ধি পাওয়া ‘স্বাভাবিক’। কিন্তু বেড়েছে ৩৫ শতাংশেরও বেশি। রাজারহাট-নিউটাউন বিধানসভা কেন্দ্রে ৭৪ শতাংশের মতো ভোটার বৃদ্ধি হয়েছে। এই বিধানসভা আসনের বিষয়ে তৃণমূলের পাল্টা ব্যাখ্যাও অবশ্য রয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতারা বলছেন, ‘‘গত ১৫ বছরে নিউটাউনে অজস্র নতুন ফ্ল্যাট, আবাসন, বাড়ি হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ নিউটাউনে থাকতে এসেছেন। তাই ভোটার বেড়েছে।’’ কিন্তু বিজেপির পাল্টা বক্তব্য, ‘‘১৫ বছরে ভোটারসংখ্যার স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার যেখানে ২০ শতাংশ, সেখানে এই অভ্যন্তরীণ পরিযানের কারণে তা দ্বিগুণ, অর্থাৎ ৪০ শতাংশ হতে পারে। সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৭৫ শতাংশ।’’ বিজেপির অভিযোগ, নিউটাউনের বিভিন্ন এলাকায় বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী এবং রোহিঙ্গাদের জায়গা দেওয়া হয়েছে। কোন কোন এলাকায় তাদের বসানো হয়েছে, তা-ও চিহ্নিত হয়ে গিয়েছে বলে বিজেপির দাবি।

    শুধু রাজারহাট-নিউটাউন অবশ্য নয়, বারুইপুর পূর্ব, সোনারপুর উত্তর, ক্যানিং পূর্ব-সহ আরও বেশ কিছু আসনে ভোটার বৃদ্ধির হার এমনই ‘অবিশ্বাস্য’ বলে বিজেপির অভিযোগ। তবে ভোটার কমার নমুনাও রাজ্যে রয়েছে। তিনটি বিধানসভা আসনে গত ১৫ বছরে ভোটারের সংখ্যা কমেছে। তিনটিই কলকাতায়। একটি হল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আসন ভবানীপুর। একটি তার লাগোয়া রাসবিহারী। অন্যটি উত্তর কলকাতার জোড়সাঁকো। শেষোক্তটিতেই সবচেয়ে বেশি কমেছে ভোটারের সংখ্যা।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)