• ফ্যাক্টর ‘এম-ওয়াই’ বনাম ‘এম-ওয়াই’, বিজেপি-আরজেডি দু’পক্ষেরই ভয় প্রশান্ত কিশোরকে
    বর্তমান | ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ‘এম-ওয়াই’ বনাম ‘এম-ওয়াই’! এবার বিহারে দুই ‘এম-ওয়াই কম্বিনেশন’। দু‌’পক্ষই শঙ্কিত। আশঙ্কার কারণ পিকে-প্রশান্ত কিশোর। গত শতাব্দীর নয়ের দশক থেকে মুসলিম এবং যাদব সম্প্রদায়কে প্রধানত নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক বানিয়ে রাজনীতি করছেন লালুপ্রসাদ যাদব। রাষ্ট্রীয় জনতা দলের (আরজেডি) সর্ববৃহৎ ভোটব্যাঙ্ক এটাই। অর্থাৎ, মুসলিম-যাদব বা ‘এম-ওয়াই’। কিন্তু বিগত ৫ বছরে বিজেপি বিহারে নিজেদের জন্য আর একটি ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করেছে এবং সুফলও পেয়েছে। তা হল, মহিলা এবং ইউথ বা যুবসমাজ। এও এক নতুন ‘এম-ওয়াই’। সুতরাং ধরে নেওয়া হয়েছিল যে, ২০২৫ সালের আরজেডি জোট বনাম বিজেপি জোটের অন্যতম একটি লড়াই হবে দুই ধারার ‘এম-ওয়াই’ ভোটব্যাঙ্কের মধ্যে। কিন্তু দুই পক্ষের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছেন একজন—প্রশান্ত কিশোর। মুসলিমদের কাছে এতকাল ধরে কোনও বিকল্প ছিল না। তাই তারা ভোটের পর ভোটে যাদবদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ভোট দিয়েছে লালুপ্রসাদের দলকে। কিন্তু এত করেও বিজেপির উত্থান কিংবা রমরমা বন্ধ করা যায়নি। তাছাড়া সম্প্রদায় হিসেবেও তাদের লাভ হয়নি সামাজিক উন্নয়নে। এই মোহভঙ্গ হওয়া মুসলিমদের কাছে টানতে আহ্বান জানিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। এখনও পর্যন্ত সবথেকে বেশি মুসলিম প্রার্থী তিনিই দিয়েছেন। ১১৬ আসনে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে তাঁর জন সুরাজ পার্টি। তার মধ্যে ২১ জন মুসলিম। আবার তাঁর সভায় ভিড় বাড়ছে তরুণ সম্প্রদায়ের। 

    বিহারে সাড়ে ৭ কোটি ভোটারের মধ্যে সাড়ে ২ কোটিই মহিলা। দেড় কোটি যুবক-যুবতী। এই পরিসংখ্যান প্রায় বাংলারই মতো। ২০২৩ সালের রাজ্য স্তরের ‘কাস্ট সেন্সাস’ অনুযায়ী, ৪৩ শতাংশ মোট ওবিসির মধ্যে যাদব সম্প্রদায় ১৪.২৬ শতাংশ। মুসলিম ১৭.৭০ শতাংশ। তপশিলি জাতি ২০ শতাংশ। উচ্চবর্ণ (ব্রাহ্মণ, রাজপুত, ভূমিহার, কায়স্থ) ১০ শতাংশ। এর বাইরে রয়েছে মহাদলিত। বিহারে ৭০টি আসনের ফলাফল নির্ধারণ করবে মুসলিম ভোটাররাই, যার সিংহভাগ সীমাঞ্চলে। অর্থাৎ কিষানগঞ্জ, আরারিয়া, পূর্ণিয়া এবং কাটিহার। মুসলিম ভোটের সুফল সবথেকে বেশি পেয়েছে ২০১৫ সালের মহাজোট, যে জোটে আরজেডি, নীতীশ কুমার এবং কংগ্রেস ছিল। ২৪ জন মুসলিম বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। প্রত্যেকেই এই মহাজোটের প্রার্থী। কিন্তু ২০২০ সালে আরজেডির প্রথম ক্ষতি করেন আসাদউদ্দিন ওয়েইসি। সীমাঞ্চল থেকে তিনি পাঁচটি আসন ছিনিয়ে নিয়েছিলেন। এবারও আসাদউদ্দিন ওয়েইসি আসরে। তাঁর সঙ্গে আবার যোগ হয়েছে প্রশান্ত কিশোরের দল। সুতরাং বিজেপির আশঙ্কা যুব ভোটে অনেকটাই থাবা বসাতে চলেছেন পিকে। মুসলিম ভোটের একাংশ তাঁর দিকে চলে গেলে আরজেডির ক্ষতি হবে। ওয়েইসি তো আছেনই। বিজেপি সর্বদাই চায় মুসলিম ভোট বিভাজিত হোক। বিহারে যদি সেটা ঘটে, তাহলে বিরোধী মহাজোট ‘ইন্ডিয়া’র জন্য দুঃসংবাদ। সবথেকে আকর্ষণীয় হল, এবার দলিত, উচ্চবর্ণ নয়, সম্ভবত নির্ণায়ক হচ্ছে দু’রকম ‘এম-ওয়াই’। মুসলিম-যাদব বনাম মহিলা-যুবা!  
  • Link to this news (বর্তমান)