• শ্যামারূপে পুজো মা তারা, দেবী নলাটেশ্বরীর
    বর্তমান | ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: সোমবার শ্যামাকালী রূপে পূজিত হলেন দেবী তারা ও মা নলাটেশ্বরী। এদিন সকাল থেকেই প্রাচীন এই দু’টি মন্দিরে ভক্তের ঢল নামে। সন্ধ্যা হতেই সেই ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এদিন দেবী তারাকে দু’ বার অন্নভোগ নিবেদন করা হয়। অন্যদিকে মা নলাটেশ্বরীকে সারাবছর রাতে অন্নভোগ দেওয়া না হলেও, কালীপুজোর রাতে তা নিবেদন করা হয়। সন্ধ্যা হতেই মাটির প্রদীপের পাশাপাশি নানারঙের আলোয় সেজে উঠে এই দুই মন্দির।  

    সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই এখন তারাপীঠে ভিড় হয় ভক্তের। তার উপরে এদিন ভরা অমাবস্যা ও তারা অঙ্গে কালীপুজোর তিথি পড়ায় ভক্ত সমাগম বেড়ে যায়। এদিন চর্তুদশী তিথি শেষ হয়ে অমাবস্যা তিথি শুরু হয় দুপুর ২টো বেজে ৫৭ মিনিটে। ফলে সন্ধে থেকেই ভক্তদের লম্বা লাইন লক্ষ্য করা যায়। গভীর রাতে একদিকে চলে চণ্ডীপাঠ, অন্যদিকে শুরু হয় তারাঅঙ্গে কালীপুজো। তারাপীঠ মহাশ্মশানে একদিকে শবদাহ হচ্ছে, আর তার পাশেই যজ্ঞের ধুনি জ্বালিয়ে তন্ত্র সাধনায় মগ্ন তান্ত্রিকরা। অন্ধকারে শ্মশান সেই শবদাহের চুল্লির আগুন ও যজ্ঞের আগুনে আলোকিত হচ্ছে। গা ছমছমে সেই পরিবেশে শিমূলতলা, পঞ্চমুন্ডির আসন, বশিষ্ট বামদেবের সিদ্ধিলাভের জায়গা ও মায়ের পাদপদ্মে প্রদীপ জ্বালিয়ে সেবাইত বাড়ির মহিলা ও দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্তরা আকুল প্রার্থনা জানাচ্ছেন মা কালীর কাছে। অন্যদিকে মা তারার স্মৃতি বিজরিত জীবিতকুণ্ডটি প্রদীপের আলোয় সেজে ওঠে। কলকাতার চিরঞ্জিত মাইতি বলেন, সারা বছরই আমরা মায়ের তারারূপ দেখতে পাই। কিন্তু এদিন মা তারা কালীরূপে ভক্তদের পুজো গ্রহণ করেন। তাই এদিন মাকে পুজো দিয়ে অন্ধকার থেকে আলোয় উত্তরণের প্রার্থনা জানাতে এসেছি। মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, আলোর দেবী মা কালী। সকাল থেকে বহু মানুষ মাকে পুজো দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু অমাবস্যা তিথি শুরু হওয়ার পর সেই ভিড় কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। এদিন দুপুরে পোলাও, খিচুড়ি, সাদাভাত, শোলমাছ পোড়া, পাঁচরকম ভাজা, রকমারি সবজি, পায়েস, মিষ্টি, ফল দিয়ে মাকে ভোগ নিবেদন করা হয়। একইভাবে গভীর রাতে মাকে খিচুড়ি, শোলমাছ পোড়া, বলির মাংস ও কারণবারি দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয়।  

    এদিকে নলহাটির মা নলাটেশ্বরী সারাবছর দেবী পাবর্তী রূপে পূজিত হন। কিন্তু কালীপুজোর রাতে তাঁকে শ্যামাকালী রূপে পুজো করা হয়। এদিন সন্ধ্যা নামতেই নলহাটি ছাড়াও আশেপাশের বহু গ্রামের মানুষ মোমবাতি ও মাটির প্রদীপ জ্বালিয়ে আলোকিত করে তোলেন মায়ের মন্দির চত্বর। সেই সঙ্গে জ্বলে ওঠে বাহারি আলো। রাত দশটায় মাকে ডাকের সাজ ও সোনার মুকুট পরিয়ে পুজো শুরু হয়। রাতে ১০৮ প্রদীপ সহযোগে মায়ের বিশেষ আরতি হয়। পুজো ও হোমযজ্ঞ শেষে মাকে খিচুড়ি, পাঁচ রকম ভাজা, শাক ও বলির পাঁঠার মাংস, কারণবারি দিয়ে ভোগ দেওয়া হয়। ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি জগন্নাথ রায়চৌধুরী বলেন, বহু মানুষ এই পুজো দেখতে ভিড় জমান। রাতে উপস্থিত সকলকে মায়ের অন্নপ্রসাদ বিলি করা হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)