• জনগণনার বিজ্ঞপ্তি হয়নি শুধু বঙ্গে, বিভ্রান্তি
    আনন্দবাজার | ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • নয়াদিল্লি ও কলকাতা, ২০ অক্টোবর: বিভ্রান্ত রাজ্যের জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, বিডিও-রা। বিভ্রান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের জনগণনা বিভাগের আধিকারিকেরাও। কেউই কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না।

    বিভ্রান্তির বিষয়— জনগণনা। স্বাভাবিক নিয়মে ২০২১-এ জনগণনা হওয়ার কথা ছিল। কোভিডের জন্য তা হয়নি। এ বার ২০২৭-এ জনগণনা হবে বলে গত ১৬ জুন কেন্দ্রীয় সরকার জনগণনার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এই জনগণনার কাজ হবে কি না, তা নিয়ে চূড়ান্ত বিভ্রান্তি ও সংশয় তৈরি হয়েছে।

    কেন? কেন্দ্রীয় সরকার জনগণনার বিজ্ঞপ্তি জারি করার পরে আইন অনুযায়ী রাজ্য সরকারকে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে হয়। তাতে জেলাশাসক, পুরকমিশনার থেকে বিডিও পর্যন্ত আধিকারিকদের তাঁদের নিজের এলাকায় জনগণনা আধিকারিক হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। রাজ্য স্তরেও নোডাল বিভাগ তৈরি হয়। সব রাজ্য এই দায়িত্ব বণ্টন করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিয়েছে। একমাত্র পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেনি।

    ফলে মাথায় বাজ পড়েছে দিল্লি ও কলকাতায় জনগণনা ভবনের কর্তাদের। ২০২৭-এর ফেব্রুয়ারিতে জনগণনা হবে। ২০২৬-এর এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে গৃহতালিকা তৈরি ও গৃহগণনার কাজ হবে। আর তার মহড়া বা প্রি-টেস্ট হবে নভেম্বরের ১০ তারিখ থেকে। তাতে গোটা ব্যবস্থা ঠিক ভাবে চলছে কি না, তার পরীক্ষা হবে। মহড়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যেরই তিন-চারটি করে এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে মহড়া কী ভাবে হবে, তা নিয়েই প্রশ্ন। কারণ, রাজ্য সরকার জেলা বা পুরসভার অফিসারদের দায়িত্বই দেয়নি। এ দিকে ওই মহড়া শুরু হতে দিন কুড়ি বাকি। রাজ্য সরকারের এক উচ্চপদস্থ আমলা বলেন, “জনগণনা নিয়ে এই সিদ্ধান্তহীনতার ফলে চূড়ান্ত বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এই রাজ্যেযা অভূতপূর্ব।”

    কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও দিল্লির জনগণনা ভবন থেকে বহু বার নবান্নে চিঠি পাঠানো হলেও সাড়া মেলেনি। এরই মধ্যে দুর্গাপুজোর ঠিক আগে রাজ্যের জনগণনা অধিকর্তার পদ থেকে কৌশিক সাহাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কৌশিক পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারের আইএএস। তাঁকে মেয়াদ ফুরোনোর আগেই রাজ্য ক্যাডারে ফেরত পাঠানো হয়েছে। সরকারি ভাবে ‘প্রশাসনিক কারণ’ দেখানো হলেও এর সঙ্গে নবান্নের বিজ্ঞপ্তি জারি না করার বিষয়টি যুক্ত কি না, তা নিয়ে চর্চা চলছে। আপাতত ওড়িশার জনগণনা অধিকর্তা নিখিল পবন কল্যাণকে পশ্চিমবঙ্গের অতিরিক্ত দায়িত্বদেওয়া হয়েছে।

    কী বলছে রাজ্য সরকার? কেউই এ বিষয়ে মুখ খুলতে রাজি নন। নবান্ন সূত্রের বক্তব্য, ২০২১-এ যখন জনগণনা হবে বলে ঠিক হয়েছিল, রাজ্য সরকার ২০১৯-এর ডিসেম্বরেই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। এ বার কোনও এক অজ্ঞাত কারণে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। রাজ্য সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতর উদ্যোগী হলেও শীর্ষস্তরের সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। রাজ্যের আমলারা মনে করছেন, মুখ্যমন্ত্রী সিএএ, এনপিআর, এনআরসি-র বিরুদ্ধে। পশ্চিমবঙ্গে এনআরসি হতে দেওয়া হবে না বলে ২০১৯-এর ডিসেম্বরেই রাজ্য কেন্দ্রকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিল। এ নিয়ে ২০২০-র জানুয়ারিতে বিধানসভায় প্রস্তাবও পাশ হয়। এ বার জনগণনার সঙ্গে জাতগণনা হওয়ার কথা। তা নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি রয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও কারণ কাউকে জানানো হয়নি।

    রাজ্য সরকারের আমলাদের বক্তব্য, রাজ্যে সঠিক জনগণনা না হলে আনুমানিক জনসংখ্যার ভিত্তিতে কাজ চালাতে হবে। সে ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ বঞ্চিত হবে। যেমন লোকসভার আসন পুনর্বিন্যাস হলে মোট আসন বাড়বে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সাংসদ সংখ্যা একই থাকবে বা জনসংখ্যার অনুপাতে বাড়বে না। অর্থাৎ লোকসভায় রাজ্যের প্রতিনিধিত্ব অন্যদের তুলনায় কমে যাবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে অর্থ কমিশনের প্রস্তাব মেনে কেন্দ্রীয় করের ভাগ-বাঁটোয়ারা ঠিক হয়। জনমুখী প্রকল্পে টাকা আসে। সেখানেও রাজ্য বঞ্চিত হবে। এ বারই প্রথম জনগণনায় স্ব-গণনার ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ চাইলে নিজের তথ্য জনগণনার ওয়েবসাইটে জমা করতে পারেন। তবে সবাই তা করবেন না। ফলে পশ্চিমবঙ্গে জনগণনার কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)