• ‘বোঝাপড়া’র সঙ্কেতে ফের দুর্যোগ বিজেপিতে
    আনন্দবাজার | ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে ঘুঁটি সাজাচ্ছে বঙ্গ বিজেপি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার ও কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ভূমিকা বিজেপি শিবিরের একাংশের মধ্যে ফের সংশয়তৈরি করছে।

    গত এক দশকে বাংলার বিভিন্ন ঘটনায় কেন্দ্রীয় সংস্থার তদন্ত চেয়ে সরব হয়েছেন বিজেপি নেতারা। তদন্ত হলেও তার অধিকাংশেরই ফল ‘কাঙ্ক্ষিত’ জায়গায় পৌঁছয়নি। সারদা, নারদ থেকে শুরু করে আর জি কর-কাণ্ড পর্যন্ত তার উদাহরণ অজস্র। যা সামনে রেখে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে বোঝাপড়ার অভিযোগে সরব সিপিএম ও কংগ্রেস। সম্প্রতি রাজ্যে ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিল সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘিরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কিছু মন্তব্য নিয়ে আদালত অবমাননার অভিযোগে সরব হয়েছিলেন বঙ্গ বিজেপির নেতারা। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অবমাননার মামলার জন্য প্রয়োজনীয় অনুমতি দেওয়া হয়নি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে। আবার সারদা-কাণ্ডে রাজ্য পুলিশের বর্তমান ডিজি রাজীব কুমারের জামিনের মামলা সুপ্রিম কোর্ট খারিজ করার সময়ে যে ভাবে সিবিআইয়ের তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে, তাতেও কেন্দ্রের ভূমিকা কাঠগড়ায় উঠেছে, ‘সেটিং তত্ত্ব’অক্সিজেন পেয়েছে।

    সাম্প্রতিক জোড়া ঘটনার প্রেক্ষিতে রাজ্য বিজেপির এক নেতার বক্তব্য, ‘‘সিবিআইয়ের ভূমিকায় আমরাও খুশি নই। সাধারণ মানুষের তো খুশি হওয়ার প্রশ্নই নেই। এখনও যদি চুনো-পুঁটিদের নিয়ে প্রতিদিন কুমিরছানা দেখানোর মতো ঘটনা হয়, জনগণ রাস্তায় বুঝে নেবে!’’ বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি তথাগত রায়ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উদ্দেশে আবেদন জানিয়েছেন, ২০২৬ সালের নির্বাচন বিজেপি জিততে চাইলে এই মুহূর্তে দু’টি প্রধান কাজ— মানুষকে বিশ্বাস করানো যে বিজেপি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে ‘গোপন বোঝাপড়া’ নেই! দ্বিতীয়ত, বিজেপি কর্মীদের তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের হাতে নিগ্রহ থেকে রক্ষা করা। রাজ্যের মন্ত্রী সুজিত বসুর বাড়ি ও দফতরে সাম্প্রতিক ইডি হানার সময়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য-সহ একাধিক নেতাও কেন্দ্রীয় সংস্থার শুধুমাত্র দৌড়োদৌড়ি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন।

    বিজেপি শিবিরের এই অস্বস্তির সময়ে সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য সৃজন ভট্টাচার্যের মন্তব্য, ‘‘বিজেপিকে ভোট দেওয়া মানেও আসলে তৃণমূলকেই ভোট দেওয়া! বিজেপির আগডুম-বাগডুম নেতারা যা চাইছেন বা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কি কখনও সেটা চাইছেন বা বলছেন? তৃণমূলকে যদি কেউ হারাতে চান, তা হলে তাঁদের কাছে একমাত্র বিকল্প বামপন্থীরা।’’ এই সূত্রেই রাজ্যের একাধিকজায়গায় ‘সেটিং’ লেখা পোস্টার দেখা গিয়েছে।

    তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের অবশ্য দাবি, ‘‘সিবিআই এত দিন ফেলে রেখে নির্বাচনের মুখে সক্রিয়তা দেখালে তো প্রশ্ন উঠবেই, এই তদন্ত কি আদৌ প্রয়োজনীয় নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। যদি কোনও পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকে কিংবা আইনের চোখে গ্রহণযোগ্য না হয়, তা হলে আদালত মান্যতা দেবে না। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।’’

    রাজ্য বিজেপির নেতৃত্ব জানেন, বিষয়টি তাঁদের হাতে নেই। এই নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক বলছেন, ‘‘আমরা হতাশ, বিরক্ত! মনে রাখতে হবে, আমরা মানুষের আদালতে দায়বদ্ধ।’’ তাঁর ব্যাখ্যা, ‘‘কংগ্রেস আমলে সিবিআই ছিল রাজনৈতিক হাতিয়ার। বিজেপি আমলে যে সংস্থাগুলির স্বতন্ত্রতা রক্ষা হচ্ছে, তা এই ঘটনাগুলো থেকেই প্রমাণিত।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)