কালীপুজোর চাঁদা ২০০১ টাকা। সেই টাকা দিতে দেরি হওয়ায় ৫৭ বছরের এক প্রৌঢ়কে ক্লাবের সামনে থেকে মারতে মারতে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল। রবিবার রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে মানিকতলা থানার মুরারিপুকুর এলাকায়। মারধরে কপাল ফেটে গিয়েছে পেশায় প্রতিমার সাজ শিল্পী ওই ব্যক্তির। লালবাজারের পুলিশকর্তারা চাঁদার জুলুম বন্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়ার পরেও এমন ঘটনা কী ভাবে ঘটে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ এই ঘটনায় চার জনকে গ্রেফতার করেছে। তাদের নাম সন্তু সমাদ্দার, বিশু দাস, বিশ্বনাথ দাস ও রাজা সরকার।
আক্রান্ত শিল্পীর নাম পরিতোষ চক্রবর্তী। তিনি মানিকতলা থানা এলাকার উল্টোডাঙার মুরারিপুকুরের বাসিন্দা। বাড়িতে তাঁর স্ত্রী ছাড়াও ছেলে-বৌমা রয়েছেন। ছেলে পৃথ্বীশ জানান, মুরারিপুকুরে একটি ক্লাবের উদ্যোগে প্রতি বছর কালীপুজো হয়। ক্লাবের পাশেই তাঁদের পরিবারের একটি সেলুন রয়েছে। গত বছরও তাঁদের কাছে কালীপুজোর চাঁদা চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেলুনটি দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকায় তা দেওয়া হয়নি বলে পৃথ্বীশের দাবি। এ বছরও ওই ক্লাবের তরফে সেলুনের জন্য ২০০১ টাকা চাঁদা দাবি করা হয় বলে অভিযোগ। পৃথ্বীশের কথায়, ‘‘সেলুন দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ। তাই গত বছর চাঁদা দেওয়া সম্ভব হয়নি। এ বছর আমরা পুরো টাকাটাই দিয়ে দেব বলে পুজোর উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করেছিলাম। কিন্তু ওরা অপেক্ষা না করেই বাবাকে মারধর করল।’’
জানা গিয়েছে, রবিবার রাত ১১টা নাগাদ প্রতিমা সাজানোর কাজ সেরে বাড়ি ফিরছিলেন পরিতোষ। ওই ক্লাবের সামনে উদ্যোক্তাদের কয়েক জন তাঁর রাস্তা আটকায়। চাঁদা কেন দেননি, জানতে চেয়ে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে। এর পরে পরিতোষকে রাস্তায় ফেলে বেধড়ক মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে মারতে মারতে ক্লাবের সামনে থেকে ২০০-২৫০ মিটার দূরে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিতোষ বলেন, ‘‘ওদের বার বার বলছিলাম, চাঁদা দিয়ে দেব। কিন্তু কোনও কথা না শুনেই ওরা আমাকে ইচ্ছে মতো মারতে থাকে। রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছি।’’ অভিযুক্তেরা মত্ত অবস্থায় ছিল বলেও অভিযোগ।
মারের চোটে কপাল ফেটে যায় পরিতোষের। আঘাত লাগে শরীরের একাধিক জায়গায়। রাতেই এলাকার লোকজন তাঁকে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। প্রৌঢ়ের কপালে পাঁচটি সেলাই পড়েছে। ওই রাতেই পরিবারের সদস্যেরা মানিকতলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। ঘটনার বিষয়ে জানতে পুজোর উদ্যোক্তাদের অন্যতম বুবাই সাহাকে ফোন করা হলে তিনি স্নান করছেন জানিয়ে ফোন রেখে দেন। পরে একাধিক বার ফোন করা হলেও ধরেননি।
কালীপুজোর বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে চাঁদার জুলুমের অভিযোগ আসছিল।পুলিশের শীর্ষ কর্তারা চাঁদার জুলুম বন্ধ করতে নির্দেশও দিয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও মানিকতলার ঘটনা পুলিশের চেষ্টা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এক পুলিশকর্তাবলেন, ‘‘দোষীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’