সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ত্রাণ নিয়েও বাংলার মানুষের প্রতি কেন্দ্রের মোদি সরকারের বঞ্চনা। উত্তরবঙ্গের ভয়ংকর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কেন্দ্র বাংলাকে একটি পয়সা না দিলেও, মহারাষ্ট্র ও কর্নাটককে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ত্রাণের অনুমোদন দিল। বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্র ও কংগ্রেস শাসিত কর্নাটকে বর্ষাজনিত বন্যা মোকাবিলায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর অনুমোদনে কেন্দ্র সরকার ১,৯৫০.৮০ কোটি টাকার ত্রাণ ঘোষণা করেছে। সরকারি বিবৃতি অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রকে দেওয়া হয়েছে ১,৫৬৬.৪০ কোটি টাকা এবং কর্নাটক পেয়েছে ৩৮৪.৪০ কোটি টাকা। বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে কেন্দ্র সরকার বন্যা, ভূমিধস ও মেঘভাঙা বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত রাজ্যগুলিকে সর্বতোভাবে সাহায্য করতে বদ্ধপরিকর।
উত্তরবঙ্গে প্রবল বৃষ্টি ও ভূমিধসে বিপর্যস্ত দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার-সহ একাধিক জেলা। পাহাড়ে ধস নেমে, নদীর বাঁধ ভেঙে ও গ্রাম প্লাবিত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৩২ জনের। হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। বহু জায়গায় সড়ক ধসে গিয়েছে, ভেঙে পড়েছে সংযোগকারী সেতু। উত্তরবঙ্গের পাহাড় ও ডুয়ার্স কার্যত যোগাযোগবিচ্ছিন্ন ও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। রাজ্য সরকার নিজের সীমিত সম্পদের মধ্যেই ত্রাণশিবির খুলে দুর্গতদের আশ্রয় দিয়েছে, মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সাহায্য দিয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত কেন্দ্র সরকারের তরফে এক টাকাও রাজ্যের হাতে আসেনি।
প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গের বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য রাজ্য সরকারের বিশেষ ত্রাণ তহবিলে ৫ লক্ষ টাকা দেওয়ার ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ইতিমধ্যেই ১ লক্ষ টাকার ত্রাণ তহবিলে দানের ঘোষণা করেছেন। এ ছাড়া, রাজ্যের ৪৪ জন মন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে ১ লক্ষ টাকা করে দান করছেন। তবে কেন্দ্রের তরফে কোনও সাহায্য আসেনি। রিপোর্ট বলছে, চলতি অর্থবছরে কেন্দ্র ২৭টি রাজ্যকে রাজ্য বিপর্যয় ত্রাণ তহবিল (এসডিআরএফ) থেকে মোট ১৩,৬০৩.২০ কোটি টাকা দিয়েছে। আবার ১৫টি রাজ্যকে জাতীয় বিপর্যয় ত্রাণ তহবিল (এনডিআরএফ) থেকে ২,১৮৯.২৮ কোটি টাকাও বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু তালিকায় নেই পশ্চিমবঙ্গের নাম।
রাজ্য সরকারের অভিযোগ, উত্তরবঙ্গের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানির পরও কেন্দ্রের পক্ষ থেকে কোনও আর্থিক সাহায্য বা সহানুভূতির বার্তাও আসেনি। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গের প্রতি এই আর্থিক বৈষম্য কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক পক্ষপাতেরই প্রতিফলন। যেখানে অন্যান্য রাজ্য দ্রুত কেন্দ্রীয় সাহায্য পাচ্ছে, সেখানে উত্তরবঙ্গের দুর্গতরা এখনও শুধুমাত্র রাজ্যের উদ্যোগেই বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।
প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গের বিপর্যয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ৩২ জন মানুষ মারা গিয়েছে। কৃষিজমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। হাজার ঘরবাড়ি ভেঙে গিয়েছে। বহু মানুষ গৃহহীন হয়েছে। তারা এখনও ত্রাণ শিবিরে রয়েছে। তাদের ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে রাজ্যকে। সেতু ভেঙে গিয়েছে। এই সব পুনর্গঠন করতে হচ্ছে। সেই জন্য বিপুল অর্থের প্রয়োজন। কেন্দ্র বাংলার বিপর্যয় থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকলেও রাজ্য সরকারকেই এই কাজগুলি করতে হচ্ছে। বিপর্যয়ে ৩২ জন মৃতের পরিবারকেই চাকরি দেওয়া হয়েছে। পরিবারগুলিকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আহতদেরও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে।