• ৭৫০ কেজি পিঁয়াজ বেচে প্রাপ্তি মাত্র ৬৬৪ টাকা! সর্বস্ব খুইয়ে হাহাকার মহারাষ্ট্রের কৃষকের
    প্রতিদিন | ২১ অক্টোবর ২০২৫
  • সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তরতরিয়ে এগিয়ে চলেছে দেশের অর্থনীতি। রাষ্ট্রপ্রধানদের ভাষণে হরদম শোনা যাচ্ছে সেই ঢক্কা নিনাদ। তবে দেশের কৃষকদের অবস্থার আজও কোনও বদল নেই। বরং দেশের অন্নদাতাদের দুর্দশা উত্তরোত্তর খারাপ হচ্ছে। বিজেপি শাসিত রাজ্য মহারাষ্ট্রেই ধরা পড়ল সেই ভয়াবহ ছবি। ৬৬ হাজার টাকা খরচ করে এ বছর পিঁয়াজ চাষ করেছিলেন পুনের সুদাম ইঙ্গেল। অতিবৃষ্টিতে এ বছর চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সুদামের। তারপরও ৭৫০ কেজি তুলতে পেরেছিলেন ওই কৃষক। গত শুক্রবার পুরন্ধর বাজারে সেই পিঁয়াজ বিক্রি করে মাত্র ৬৬৪ টাকা পেলেন তিনি। শুনতে অবাক লাগলেও কৃষক আত্মহত্যায় শীর্ষে থাকা মহারাষ্ট্রে এটাই বাস্তব ছবি। সুদামের দেড় একর জমির পিঁয়াজ এখনও তোলা হয়নি। তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই পেঁয়াজ নষ্ট করে দেবেন।

    সুদামের এই দুর্দশার ছবিই মহারাষ্ট্রের কৃষকদের ঘরে ঘরে। বৃষ্টির মার সামলানোর পর এবার দামের লাগামছাড়া পতনের মার সামলাতে হচ্ছে কৃষকদের। শুধু পিঁয়াজ নয়, টমেটো, আলু, সোয়াবিন-সহ ফলের দামও ব্যাপকভাবে পড়ে গিয়েছে। সবমিলিয়ে দীপাবলির উৎসবে হাহাকার নেমেছে কৃষকদের ঘরে। এই পরিস্থিতিতে সুদাম বলেন, ”আমি না হয় এই ক্ষতি সামলে নিতে পারব। কিন্তু যারা ছোট কৃষক অল্প জমিতে ঋণ নিয়ে চাষ করেন তাঁরা কীভাবে বাঁচবেন! তাঁদের তো আত্মহত্যা ছাড়া গতি নেই।”

    এশিয়ার বৃহত্তম পিঁয়াজের বাজার লাসালগাঁও এপিএমসি। জানা যাচ্ছে, সেখানে দীপাবলির আগে গত সপ্তাহেও পিঁয়াজের দাম ছিল গড়ে ১০৫০ টাকা (১০.৫ টাকা প্রতি কেজি) কুইন্টাল। কিন্তু অভিযোগ, হঠাৎই এই দামে মারাত্মক পতন দেখা দিয়েছে। এপিএমসির একজন সদস্য বলেন, “এই গ্রীষ্মে (মার্চ-এপ্রিল), আমরা পিঁয়াজের বাম্পার ফলন দেখেছি। পিঁয়াজের সংরক্ষণ করে রাখা যায় প্রায় ৭ মাস। তাই অনেক কৃষক যারা তখন বেশি দামের আশায় বিক্রি করেননি, তারা তা সংরক্ষণ করে এখন বিক্রি করছেন। নাসিক অঞ্চলে ৮০% পেঁয়াজ ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় নতুন ফসল বৃষ্টির কবলে পড়েছে। এমনকি উদ্ধারকৃত মজুদও নিম্নমানের এবং খুব কম দামে বিক্রি হচ্ছে।”

    সুদাম বলেন, ক্ষেত প্রস্তুত, চারা কেনা, বীজ বপন, কীটনাশক স্প্রে, জল দেওয়া, আগাছা পরিষ্কার করা, ফসল কাটা, প্যাকিং এবং বাজারে প্টহানো পর্যন্ত খরচ প্রচুর। অথচ এবার আমি ৩৯৩ কেজি পিঁয়াজ প্রতি কেজি ৩ টাকা, ২০২ কেজি ২ টাকা এবং ১৪৬ কেজি ১০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি করতে পেরেছি। অর্থাৎ ১,৭২৯ টাকা থেকে পরিবহন খরচ ১,০৬৫ টাকা বাদ দিয়ে আমি যে মোট অর্থ পেয়েছি তা হল হল ৬৬৪ টাকা।” এই বেহাল অবস্থার জন্য সরকারের দিকে আঙুল তুলছেন কৃষকরা। খুচরো বাজারে পিঁয়াজ ভালো দামে বিক্রি হলেও কৃষকদের থেকে কেনার সময় ফোঁড়ের দল খেয়ে নেয় লাভের বখরা। সরকার এঁদের নিয়ন্ত্রণ করে না। কোল্ড স্টোরেজগুলির অবস্থাও বেহাল।

    এই অব্যবস্থার জন্য সর্বপরি পিঁয়াজ নিয়ে সরকারের নীতিকে দাবি করছেন কৃষকরা। এক কৃষক বলেন, “কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে সরকার রপ্তানি নিষিদ্ধ করে। ফলে অন্যান্য দেশগুলি আন্তর্জাতিক বাজারের দখল নেয়। সরকার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করলেও আমরা গ্রাহক হারিয়েছি। দাম বেড়ে গেলে সরকার যদি রপ্তানি নিষিদ্ধ করতে পারে, তাহলে বাজার ধসে নামলে কি তাদের ভালো দামে পিঁয়া কেনা উচিত নয়? কিন্তু তা কখনও হয় না। যার জেরেই কৃষকদের এই দুরবস্থা।”
  • Link to this news (প্রতিদিন)