স্টাফ রিপোর্টার, ঝাড়গ্রাম: যৌথ আলোচনাকে গুরুত্ব না দিয়েই খেমাশুলি থেকে ঝাড়গ্রাম স্টেশনের আগে পর্যন্ত ট্রেন লাইনের দু’পাশ বরাবর গার্ডরেল দিয়ে ঘেরার কাজ শুরু করল রেল। তা নিয়ে বিতর্ক। বনদপ্তর বলছে এই রেলিং ঘেরার কাজ শেষ হলে হাতির যাতায়াতের পথ বন্ধ হবে, বিপদ আরও বাড়বে। আর এই বিপদ ঠেকাতে কাজ বন্ধ করার জন্য দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়গপুর ডিভিশনের ডিআরএমকে চিঠি দিয়েছেন ঝাড়গ্রাম বনদফতরের ডিএফও।
গত জুলাই মাসে ঝাড়গ্রাম ব্লকের বাঁশতলা এলাকায় ট্রেন লাইন পারাপার করতে গিয়ে ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল এক শাবক-সহ তিন হাতির। সেই ঘটনার পর ট্রেন লাইনে দুর্ঘটনা এড়াতে দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়াপুর ডিভিশন এবং ঝাড়গ্রাম ফরেস্ট ডিভিশন যৌথ আলোচনা এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করেছিল। ঝাড়গ্রাম বনদফতরের পক্ষ থেকে রেলকে লাইনে হাতি মৃত্যু বা দুর্ঘটনা ঠেকাতে ওভারপাশ, ট্রেনের গতি কমানো, সফট পেডিং, বারে বারে হর্ন দেওয়া সহ বেশ কিছু প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে সব বিষয় নিয়ে আলোচনা না করেই হঠাৎ করেই রেলের খড়গপুর ডিভিশনের পক্ষ থেকে খেমাশুলি থেকে ঝাড়গ্রাম স্টেশনের আগে পর্যন্ত ট্রেন লাইনের দুপাশ বরাবর গার্ডরেল দিয়ে ঘেরার কাজ শুরু হয়েছে।
অভিযোগ, রেলের পক্ষ থেকে বনদফতরকে এই বিষয়ে কোন তথ্যই না দিয়েই দ্রুত গতিতে কাজ চলছে। প্রশ্ন উঠেছে তাহলে যৌথ বৈঠকের কী প্রয়োজন ছিল। খেমাশুলি, সড়ডিহা, বাঁশতলা, ঝাড়গ্রাম এই রেলপথ হল হাতির উল্লেখযোগ্য করিডর। জঙ্গল ঘেঁসা এই রেল পথ পারাপার করা হাতির দীর্ঘ কয়েক দশকের অভ্যাস। এখন হাতির পছন্দের এই পথ দু’পাশ থেকে আটকে দিলে মানুষের বিপদ আরও বাড়বে। পারাপার করতে না পেরে তারা দলবল নিয়ে গ্রামে ঢুকবে। সেক্ষেত্রে দল হাতিকে গ্রাম থেকে ড্রাইভ করাই মুশকিল হয়ে যাবে।
বনদফতরের অভিযোগ, রেলকে এই সমস্যার কথা বলা সত্বেও লোহার গার্ড দেওয়ার কাজ বন্ধ তো দূরের তারা কর্নপাতও করেনি। দক্ষিণ পূর্ব রেলের খড়াপুর ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক নিশান্ত কুমার বলেন, “যদি কোনও সমস্যা হয় তাহলে আমরা আলোচনা করে সমস্যা মিটিয়ে নেব।” যদিও প্রশ্ন উঠছে আলোচনা যদি করতেই হয় তাহলে কাজটি শুরু করার আগে কেন রেল বনদফতরকে জানাল না? যেখানে হাতির সমস্যা বনদপ্তরকেই মটেটাতে হয় বা সামলাতে হয় তাহলে রেল কেন লাইনের দু’পাশ তড়িঘড়ি ঘেরা শুরু করল? এই ভাবে লাইন ঘিরে দেওয়ার ফলে হাতি পারাপার করতে না পারার কারনে কোনও বিপদ ঘটলে সেই দায় কি রেল নেবে? এই সব প্রশ্ন উঠছেই।
ঝাড়গ্রামের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, “আমাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে বা কোনও ইনটিমেশন না দিয়ে খেমাশুলি থেকে ঝাড়গ্রাম স্টেশনের আগে পর্যন্ত রেলের পক্ষ থেকে গার্ডরেল দিয়ো দু’পাশ থেকে লাইন ঘেরা হচ্ছে। এটা হলে হাতির করিডর বন্ধ হয়ে যাবে এবং বিপদ বাড়ার আশঙ্কা থাকবে। এই পরিস্থিতি যাতে না তৈরি হয় সেই জন্য খড়গপুর ডিভিশনের ডিআরএমকে চিঠি দিয়েছি। আমরা এই কাজটি বন্ধ করার জন্য বলেছি তাদের।”