• হাসপাতালের ভিতরেই চিকিৎসকের উপর হামলা হোমগার্ডের, নার্স এবং আয়ারা এসে উদ্ধার করলেন...
    আজকাল | ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • আজকাল ওয়েবডেস্ক: ট্রাফিক হোম গার্ড এবং তার আত্মীদের হাতে নিগৃহীতা হলেন এক মহিলা জুনিয়র ডাক্তার। সোমবার কালীপুজোর সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটে হাওড়া উলুবেরিয়া শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে।

    মহিলা জুনিয়র ডাক্তারকে হেনস্তার অভিযোগে পুলিশ দু'জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের নাম শেখ বাবু ও শেখ হাসিবুর। শেখ বাবু উলুবেরিয়া ট্রাফিক পুলিশের হোম গার্ড।

    পুলিশ সূত্রে খবর, সোমবার সকালে খড়িয়া ময়নাপুরের লোহানগরের বাসিন্দা এক প্রসূতিকে  নিয়ে  হাসপাতালের প্রসূতি বিভাগে চিকিৎসার জন্য উলুবেড়িয়া মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালে ভর্তি করান উলুবেরিয়া ট্রাফিক গার্ডের হোম গার্ড শেখ বাবুলাল।

    ওই প্রসূতি শেখ বাবুলালের আত্মীয়। বিকেলে তাঁর বাড়ির লোকজন তাঁদের দেখতে আসেন। সঙ্গে আরও ১০ থেকে ১২ জন লোক ছিলেন। সেই সময় প্রসূতিকে হাসপাতালের ওয়ার্ডে পরীক্ষা করছিলেন অভিযোগকারী ওই চিকিৎসক।

    মহিলা চিকিৎসকের অভিযোগ, ওই প্রসূতিকে পরীক্ষা করার পরে তিনি তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে চিকিৎসক পরিবারের লোকজনকে জানান সন্ধ্যা ৬টার পরে ভিজিটিং আওয়ার্স শেষ হয়ে গেলে একজন সিনিয়র চিকিৎসক প্রসূতিকে পরীক্ষা করবেন।

    অভিযোগকারী মহিলা চিকিৎসকের অভিযোগ, ‘ওই প্রসূতির আত্মীয়রা আমার কোনও কথা শোনেননি। উল্টে আমাকে হুমকি দিতে শুরু করেন।’ এর পরেই হাসপাতালের তরফে পুলিশে খবর দেওয়া হয়। সেই অভিযোগের উপর ভিত্তি করেই শেখ বাবু এবং শেখ হাসিবুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

    ওই মহিলা চিকিৎসকও উলুবেড়িয়া থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। জানা গিয়েছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ১২১(১) ধারা (সরকারি কর্মীকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছায় আঘাত), ১৩২ ধারা (সরকারি কর্মীকে তাঁর দায়িত্ব পালনের সময়ে আক্রমণ), ৭৯ ধারা (নারীর মর্যাদা হানি হয় এমন শব্দের ব্যবহার, অঙ্গভঙ্গি বা আচরণ), ৩৫১(২) ধারা (হুমকি দেওয়া), ৩(৫) (একাধিক ব্যক্তির সাধারণ উদ্দেশ্য নিয়ে করা অপরাধ) ধারা অনুযায়ী মামলা দায়ের করা হয়েছে।

    এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই ডাক্তার। তখন ওয়ার্ডের মধ্যে অন্যান্য নার্স এবং আয়ারা ছুটে এসে ডাক্তারকে নিগ্রহের হাত থেকে উদ্ধার করেন। ঘটনার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই মহিলা ডাক্তার।

    রাতে তিনি উলুবেরিয়া থানায় যান এবং লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর অভিযোগ যখন তাকে নিগ্রহ করা হচ্ছিল সেই সময় ওয়ার্ডের আশেপাশে কোন নিরাপত্তা রক্ষী ছিলেন না।

    ফলে হামলাকারীদের হামলা করতে সুবিধা হয়। পুলিশের পক্ষ থেকে গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। ওই হোম গার্ড-সহ দু'জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।

    এই ঘটনার পর আতঙ্কে রয়েছেন নিগৃহীতা ওই মহিলা ডাক্তার। তিনি বলেন, 'প্রতিদিনের ডিউটি করতে এসেছিলাম। রোগী আসার পর আমি পরীক্ষা করতে গিয়েছিলাম কিন্তু তিনি পরীক্ষা করতে দিচ্ছিলেন না। এমনকী সেই রোগী আমাকে লাথি মারেন। রোগীর শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল দেখে অন্য রোগী দেখতে শুরু করি। তখন রোগীর আত্মীয়রা আমাকে অত্যন্ত খারাপ ভাষায় কথা বলতে থাকেন। হাসপাতাল থেকে বেরোলে দেখে নেওয়ারও হুমকি দেন তাঁরা। এমনকি হাতও মুচড়ে দেন । ঘটনাটি ঘটেছে ওয়ার্ডে। সমস্ত ঘটনাটি ওয়ার্ডে উপস্থিত নার্স এবং আয়ারা দেখেছেন। ঘটনার সময় কোন নিরাপত্তারক্ষী সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।' তিনি  জানান, সেই ওয়ার্ডে ১০-১২ জন ভেতরে ঢুকে পড়ে। তারা নিজেদের রোগীর আত্মীয় বলে পরিচয় দিয়েছিল।  

    হাওড়া গ্রামীণ পুলিশের সুপার  সুবিমল পাল জানান, এই ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে দু'জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে একজন উলুবেড়িয়া ট্রাফিক পুলিশের অস্থায়ী হোমগার্ড।  

    কালীপুজোর দিন রাতে গর্ভবতী  অবস্থায় সেই হোম গার্ডের এক আত্মীয়কে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে ওই রোগী চিকিৎসা করতে দিচ্ছিলেন না। তখন এই চিকিৎসক তাঁর সিনিয়র ডাক্তারকে ডাকেন। সেই সময়ই সেই হোম গার্ডের এক আত্মীয় আঘাত করতে যান সেই মহিলা ডাক্তারকে।

    এমনকি ডাক্তারকে হুমকিও দেন বলে অভিযোগ করেন ওই ডাক্তার। এই অভিযোগ পাওয়ার পরেই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কেন এমন ঘটনা ঘটাল তা জানতে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গোটা ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
  • Link to this news (আজকাল)