দ্বিতীয় দিনেও লাগামছাড়া বেআইনি আতশবাজি, বায়ু ও শব্দ দূষণ ছাড়াল মাত্রা
আনন্দবাজার | ২১ অক্টোবর ২০২৫
সোমবার কলকাতার আকাশ ঢেকে ছিল ধোঁয়ায়। কালীপুজোর প্রথম দিনে বেআইনি শব্দবাজি নিয়ে কার্যত তাণ্ডব চালানো হয়েছে। যার ফলে ছাপিয়ে গিয়েছিল বায়ু ও শব্দ দূষণের নির্ধারিত ‘ষুষ্ঠু’ মাত্রা। দ্বিতীয় দিনেও অবস্থার খুব একটা পরিবর্তন হল না। আর এতেই প্রশ্ন উঠছে উৎসব মানে কি শুধুই অনিয়ন্ত্রিত উল্লাস? যা উদ্যাপন করতে গেলে অন্যের ক্ষতির পরোয়া থাকে না।
রাত ১০ টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত মৌন ও জনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে নির্ধারিত শব্দমাত্রা যথাক্রমে ৪০ ও ৪৫ ডেসিবেল। মঙ্গলবারেও ‘মাত্রাহীন’ হল সেই মাত্রা। জনবসতিপূর্ণ অঞ্চল ট্যাংরা ও কালিকাপুরে শব্দের মাত্রা ছিল ৭৩ ও ৫৮ ডেসিবেল। মৌন অঞ্চলেও ভাঙল ‘নিয়ম’। বালিগঞ্জে ৬০, লেকটাউনে ৬০, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ৬৪, বেথুন কলেজের কাছে প্রায় ৭৩ ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ৭৮ ডেসিবেল পর্যন্ত পৌঁছেছিল শব্দ। শব্দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দূষণ ছড়িয়েছে বাতাসেও। রাত ১১টার সময়ে পিএম ২.৫ হিসাবে বাতাসের গুণমানসূচক বালিগঞ্জে ১৬৯, যাদবপুরে ২০৪ ও ভিক্টোরিয়াতে ২৫৯ ছিল। প্রসঙ্গত, গুণগত মানের হিসাবে ১০১ থেকে ২০০ পর্যন্ত মাত্রা ‘মাঝারি’ ও ২০১ থেকে ৩০০ পর্যন্ত ‘খারাপ’। পারটিকুলেট ম্যাটার বা পিএম হল বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা, যার মধ্যে ব্ল্যাক কার্বন ও অন্যান্য দূষক মিশে থাকে। দৈনিক প্রতি ঘনমিটার বাতাসে পিএম ১০ ও পিএম ২.৫-এর পরিমাণ যথাক্রমে ১০০ ও ৬০ মাইক্রোগ্রাম অতিক্রম করলে তা জনস্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। এই সীমার বার্ষিক সহনশীল মাত্রা যথাক্রমে ৬০ ও ৪০ মাইক্রোগ্রাম। কলকাতার বাতাসে যে পিএম ২.৫ ধরা পড়ছে, তার অন্যতম প্রধান উৎস জৈব ও কঠিন বর্জ্য পোড়ানো।
কিছু মানুষের ‘অতি উল্লাসে’ আতঙ্কিত শিশু থেকে বৃদ্ধ ও অসুস্থেরা। ভীত পশু- পাখিরাও। ঘরের পোষ্যদের তাও নিরাপত্তা আছে। তবে সেটুকুও নেই পথপ্রাণীদের। এতেই প্রশ্ন উঠছে বেআইনি শব্দবাজি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ‘উপযুক্ত’ ভূমিকা নিয়ে। যদিও কলকাতা পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মার দাবি, দেশের অন্যান্য বড় শহরগুলির তুলনায় কলকাতার পরিস্থিতি ভাল। শুধু তাই নয়, গত বারের চেয়ে এ বারে মহানগরে কমেছে শব্দ ও বায়ু দূষণের মাত্রাও। লালবাজার জানিয়েছে, নিয়মভঙ্গকারীদের গ্রেফতার ও জরিমানা করার পাশাপাশি অভিযান চালিয়ে বেআইনি বজিও বাজেয়াপ্ত করেছে পুলিশ। পলিশের বার্তা, সাধারণ নাগরিকদেরকেও সচেতন হতে হবে।
দীপাবলি মানে আলোর উৎসব। শব্দ ও ধোঁয়ার ‘দাপটে’ দু’দিনে কার্যত অস্তিত্ব হারাল সেই ‘দীপ’-এরই ‘স্নিগ্ধ’ শিখা।