পুনের ঐতিহাসিক দুর্গে নামাজ, গোমূত্রে ‘শুদ্ধকরণ’ বিজেপির, তুঙ্গে রাজনৈতিক তরজা
বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৫
পুনে: পুনের ঐতিহাসিক শনিওয়ার ওয়াড়া দুর্গের ভিতর কয়েকজন মুসলিম দর্শনার্থীর নামাজ পড়ার ভিডিও ঘিরে রাজনৈতিক উত্তাপ তুঙ্গে। দলের রাজ্যসভার সদস্য মেধা কুলকার্নির নেতৃত্বে প্রতিবাদে শামিল হন বিজেপি কর্মীরা। দুর্গের ভিতর যেখানে নামাজ পড়া হয়েছিল, সেই স্থানটির ‘শুদ্ধকরণে’ গোবর ও গোমূত্র ছড়ান তাঁরা। বিজেপি সাংসদের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আবার সুর চড়িয়েছে শরিক অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন এনসিপি। সরব হয়েছে বিরোধীরাও।
পুনের শনিওয়ার ওয়াড়া দুর্গটি তৈরি হয়েছিল ১৭৩২ সালে। ১৮১৮ সাল পর্যন্ত মারাঠা সাম্রাজ্যের পেশোয়ারা এই দুর্গ থেকেই শাসনকাজ চালিয়েছিলেন। এই দুর্গের ভিতরে নামাজ পড়ার ভিডিও সামনে আসার পর রবিবার বিজেপি সাংসদ কুলকার্নি এক্স হ্যান্ডলে বিক্ষোভ প্রদর্শনের ডাক দেন। তিনি লেখেন, ‘এই ঘটনায় পুনেবাসীর মনে উদ্বেগ ও ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। পুনে প্রশাসন কী করছে? হেরিটেজ সাইটগুলি নিয়ে আমাদের সম্মান উধাও হয়ে গেল? আসুন, নিজেদের সংস্কৃতির সম্মানে আমরা একত্রিত হই।’ পরে সাংবাদিকদের বিজেপি সাংসদ বলেন, রাজ্য প্রত্বতাত্ত্বিক বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। আমাকে জানানো হয়, যাঁরা নামাজ পড়ছিলেন, তাঁদের দুর্গ থেকে বেরিয়ে যেতে বলা হয়েছিল। অর্থাৎ ঘটনাটা সত্যি। হামেশাই দেখা যায়, যেখানে নামাজ পড়া হচ্ছে সেটিকে ধর্মীয় স্থানে পরিণত করে ফেলা হয়। সেই কারণেই আমরা বিক্ষোভ দেখিয়েছি। শনিওয়ার ওয়াড়া দুর্গ ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের স্বরাজ্যের প্রতীক। সেখানে কোনও একটি নির্দিষ্ট ধর্মের রীতিনীতি পালনের অনুমতি পাওয়া উচিত নয়। দুর্গের ভিতর ‘শুদ্ধকরণ’ চালানোর সত্যতাও স্বীকার করে নেন কুলকার্নি। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘কেউ এসে ওখানে নামাজ পড়বে, আমরা তা বরদাস্ত করব না।’
বিজেপি সাংসদের ডাকা বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকেই কিছু লোক কাছেই অবস্থিত হজরত খোয়াজা সইদ দরগাকে নিশানা বানানোর চেষ্টা করায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করায় সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। প্রায় দু’ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন বিজেপিরই শরিক এনসিপির অজিত পাওয়ার গোষ্ঠীর মুখপাত্র রূপালি পাতিল থোম্বারে। তাঁর তোপ, ‘মেধা কুলকার্নি পুনে শহরে ধর্মীয় অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অবিলম্বে মামলা দায়ের হওয়া উচিত। কুলকার্নির এইসব কাজে লাগাম টানা উচিত বিজেপির।’ যদিও কুলকার্নির পাশে দাঁড়িয়েছেন মহারাষ্ট্রের মন্ত্রী নীতেশ রানে। তাঁর বক্তব্য, ‘ঐতিহাসিক শনিওয়ার ওয়াড়া দুর্গ আমাদের পরাক্রমের প্রতীক। হিন্দুদের হৃদয়ে তার বিশেষ স্থান রয়েছে। সেখানে কিছু লোক নামাজ পড়তে চাইছেন। তাহলে হিন্দুরা যদি হাজি আলিতে ঢুকে হনুমান চালিশা পড়েন, তাহলে তা সঠিক হবে? ভাবাবেগে আঘাত করা হবে না? শুধুমাত্র নির্দিষ্ট স্থানেই প্রর্থনা হওয়া উচিত, অন্যত্র নয়। হিন্দুত্ববাদী কর্মীরা যুক্তিসঙ্গত কারণেই প্রতিবাদ করেছেন।’ অন্যদিকে, বিজেপির ‘শুদ্ধকরণে’র প্রতিবাদ করে মহারাষ্ট্রের সমাজবাদী পার্টি সভাপতি আবু আসিম আজমির তোপ, ‘মুসলিমরা এই দেশের জন্য প্রাণ বলি দিয়েছেন। আর যারা ব্রিটিশদের সমর্থন জানিয়েছিল, এখন তারা ক্ষমতায়। ওরা যোগ্য জবাব পাবে।’