• এবার লোকপালের চাই ৫ কোটি টাকার বিএমডব্লু, পাঁচ বছরে মাত্র ২৪টি দুর্নীতির তদন্ত, অভিযোগের পরই খারিজ ৯০ শতাংশ মামলা
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: পাঁচ বছরের সময়সীমায় মাত্র ২৪টি অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে লোকপাল। তার মধ্যেও আবার মাত্র ৬টি অভিযোগের বিচার প্রক্রিয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যত অভিযোগ জমা পড়েছে সরকারি কর্মী, অফিসার এমনকী প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে, তার ৯০ শতাংশই খারিজ হয়ে গিয়েছে ‘পদ্ধতিগত ত্রুটি’র কারণে। নজরকাড়া বিষয় হল, দুর্নীতি সংক্রান্ত মোট যত অভিযোগ জমা পড়েছিল, তার মধ্যে ৩ শতাংশ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। সংশয় নেই, তার একটাও ধোপে টেকেনি। কিন্তু কাজ থাকুক বা না-ই থাকুক, যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের তদন্তকারী কমিটি দুর্নীতি ও আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে একমাত্র আশা-ভরসা—সেই লোকপাল দপ্তরই এখন বিতর্কের কেন্দ্রে। কারণ, লোকপাল দপ্তর সাতটি ‘উচ্চমানে’র বিএমডব্লু গাড়ি কিনতে চলেছে। সেই টেন্ডার প্রকাশও হয়ে গিয়েছে। প্রতিটির দাম ৭০ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ৫ কোটি টাকা দিয়ে সাতটি বিদেশি গাড়ি কেনা হবে। সাতটি কেন? লোকপালের সদস্য সংখ্যা সাত।

    ২০২২ থেকে লোকপাল পদ ছিল শূন্য। অবশেষে গত বছর চেয়ারম্যান পদে বসানো হয় অজয় মানিকরাও খানউইলকরকে। লোকপাল নিয়ে যে বিজেপি, আম আদমি পার্টি বা মোদি সরকারের কোনও আগ্রহই নেই, সেটা এতদিনে স্পষ্ট। মানুষও বুঝে গিয়েছে, লোকপাল থাকলে যে গোটা দেশে অনিয়ম বন্ধ হয়ে যাবে, তেমনটাও হওয়ার নয়। তারপরও আম আদমির করের টাকায় এই বিপুল অঙ্কের টেন্ডার! এতেই প্রবল আলোড়ন পড়েছে। তৃণমূলের রাজ্যসভার এমপি সাগরিকা ঘোষের আক্রমণ, ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত নয়, জোর দেওয়া হচ্ছে বিলাসিতায়। মনে রাখতে হবে, বিচারপতি হিসেবে অবসর নেওয়ার আগে খানউইলকরের শেষ রায়—তদন্তের নামে ইডিকে দেদার ছাড়পত্র।’ কংগ্রেসের কটাক্ষ, প্রধানমন্ত্রী স্বদেশি ডাক দিচ্ছেন, আর লোকপাল সাত সদস্যের জন্য সাতটি বিএমডব্লু কিনছে? নীতি আয়োগের প্রাক্তন সিইও অমিতাভ কান্তও বলেছেন, লোকপালের উচিত, অবিলম্বে এই টেন্ডার বাতিল করে ইলেকট্রিক গাড়ির বরাত দেওয়া। যদিও প্রধানমন্ত্রীর নিজেরও রয়েছে রেঞ্জ রোভার, বিএমডব্লু বা মার্সিডিজ মেবাখ। ইন্ডিয়া এগেইনস্ট করাপশন আন্দোলনের অন্যতম সদস্য প্রশান্ত ভূষণ বলেছেন, ‘মোদি সরকারের আমলে লোকপাল নখদন্তহীন একটি সংস্থা। দেশবাসী ভুলেই গিয়েছে যে লোকপাল আছে। অথচ এই লোকপাল আন্দোলনে দু’টি সরকারের পতন ঘটেছে। কেন্দ্র এবং দিল্লিতে।’  

    নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে আন্না হাজারে, অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং প্রধান বিরোধী দল বিজেপি বস্তুত একজোট হয়েই সংসদ থেকে সড়ক অচল করে দিয়েছিল ২০১১ সালে। লোকপাল বিল পাশ, লোকপাল নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে সংসদের একের পর এক অধিবেশন অচল করে দিয়েছিল বিজেপি। ২০১৩ সালে অবশেষে সেই বিল পাশ হয়। ঠিক পরের বছরই ক্ষমতায় আসেন নরেন্দ্র মোদি। এবং তারপরই ‘লোকপাল প্রসঙ্গ’ ঠান্ডাঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কারণ, মোদি সরকারের প্রথম ৫ বছরে লোকপাল কমিটি ও চেয়ারপার্সনই নিয়োগ করা হয়নি। এরপর ২০১৯ সালের মার্চ মাসে প্রথম লোকপাল হিসেবে মনোনীত হন বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ। ২০২২ সালে তিনি সরে যান। এরপর লোকপাল পদ শূন্য ছিল টানা দু’বছর। ২০২৪’এ আবার নতুন লোকপাল দায়িত্ব নেন। অর্থাৎ ১২ বছরে দু’জন মাত্র লোকপাল। সরকারি রাঘববোয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত করে সাজা? শূন্য! লোকপালের নিজের আদালতই নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)