সংবাদদাতা, আলিপুরদুয়ার: একসময় কোচবিহারের পাতলাখাওয়ার রসমতি বনাঞ্চল গন্ডারদের অবাধ বিচরণ ছিল। কোচবিহারের মহারাজাদের মৃগয়াক্ষেত্র ছিল এই রসমতি। এখানেই রাজ্যের তৃতীয় গন্ডার আবাসস্থল গড়ে তোলার জন্য ফের চিন্তাভাবনা শুরু করেছে বনদপ্তর। সেই ভাবনার কথাই জানিয়েছেন রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা।
কিন্তু রসমতিকে কেন ফের গন্ডারের আবাসস্থলে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে বনদপ্তর? সূত্রে খবর, গত ৫ অক্টোবরের দুর্যোগে জলদাপাড়ার পাঁচটি গন্ডার তোর্সা নদী দিয়ে ভেসে রসমতির জঙ্গলে ঠাঁই নিয়েছিল। গন্ডারগুলি ভালোই ছিল সেখানে। কিন্তু এখানে গন্ডারদের নিরাপত্তা নেই। তাই পরে গন্ডারগুলিকে সফলভাবে ঘুমপাড়ানি গুলিতে কাবু করে বনদপ্তর সেখান থেকে জলদাপাড়ায় ফিরিয়ে আনে।
দুর্যোগের সময় রসমতিতে জলদাপাড়ার ওই গন্ডারগুলির আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা নজর এড়ায়নি বনদপ্তরের। মনে করা হচ্ছে, সেই কারণেই রসমতিকে গন্ডারের আবাসস্থল হিসাবে গড়ে তুলতে নড়েচড়ে বসেছে বনদপ্তর। ২০১৪ সালে প্রাক্তন বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের সময় এখানে গন্ডারের আবাসস্থল গড়ে তোলার কাজ শুরু হয়েছিল। তার জন্য সেই সময় কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশমন্ত্রক থেকে সাড়ে ১২ কোটি টাকাও বরাদ্দ করা হয়েছিল। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্য বনপাল প্রদীপ ব্যাস রসমতিতে তৃতীয় গন্ডার আবাসস্থল তৈরির জন্য কেন্দ্রের ছাড়পত্রও আদায় করে নিতে সক্ষম হন। সেই লক্ষ্যে ৮০৮ হেক্টর জুড়ে রসমতির চার দিকে গন্ডারদের নিরাপত্তার জন্য ফেন্সিং ও কয়েকটি নজরমিনারও গড়ে তোলা হয়। তৈরি হয় অন্যান্য পরিকাঠামোও। কিন্তু সেই সময় ফেন্সিং তৈরিতে নিম্নমানের কাজের অজুহাত দেখিয়ে স্থানীয় স্তরে রাজনৈতিক ডামাডোল শুরু হয়। সেই ডামাডোলের জেরে রসমতিতে তৃতীয় গন্ডার আবাসস্থল গড়ে তোলার কাজ থমকে যায়। ফলে সম্পূর্ণ জলে যায় তিন কোটি টাকা।
বনমন্ত্রী বলেন, রসমতিকে রাজ্যের তৃতীয় গন্ডার আবাসস্থল হিসাবে গড়ে তোলার চিন্তাভাবনা করছি আমরা। গন্ডারদের বসবাসের জন্য সেখানকার পরিকাঠামো নিয়ে আলোচনা হবে। একসময় রসমতিতে তো গন্ডার ছিল।
প্রসঙ্গত, কোচবিহারের রসমতি থেকে আলিপুরদুয়ারের জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের দূরত্ব ১৮ কিমি। এক সময় আলিপুরদুয়ারের শিমলাবাড়ি করিডর দিয়ে জলদাপাড়া থেকে গন্ডার যাতায়াত করত রসমতিতে। তার উপর ৫ অক্টোবরের দুর্যোগে জলদাপাড়ার কয়েকটি গন্ডার এখানে আশ্রয় নেওয়ায় ফের প্রমাণিত কোচবিহার মহারাজাদের সেই মৃগয়াক্ষেত্রে গন্ডারদের বসবাসের আদর্শ পরিবেশ রয়েছে। প্রয়োজন শুধু পরিকাঠামো ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা। যদিও বনদপ্তরের শীর্ষ কর্তারা কেউই এনিয়ে এখনই মুখ খুলতে চাইছেন না।