• একদিনে ২২ মৃত্যু, মেডিকেলে বিতর্ক, সিনিয়র ডাক্তার, আধিকারিকরাও গরহাজির
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • সঞ্জিত সেনগুপ্ত , শিলিগুড়ি:

    কালীপুজোর দিন উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মোট ২২ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। একদিনে এত রোগীর মৃত্যুতে হাসপাতালের চূড়ান্ত গাফিলতির পাশাপাশি পুজোর আবহে সিনিয়র ডাক্তারদের দলবেঁধে ছুটি নেওয়ার অভিযোগটি জোরালোভাবে উঠেছে। দুর্গাপুজোর দিনগুলিতেও রোগীর মৃত্যুর হার বেড়ে থাকে প্রতিবছর। এবার দুর্গাপুজোয় ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত রোগী মৃত্যুর হার কিছুটা কমলেও সোমবার কালীপুজোর দিন ২২ জন রোগীর মৃত্যুতে প্রশ্নের মুখে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ।  

    হাসপাতালে কর্মীদের একাংশের বক্তব্য, সিনিয়র ডাক্তারদের অধিকাংশই কালীপুজোয় বাইরে চলে গিয়েছেন। জুনিয়রদের ওপরই চলছে হাসপাতাল। এ কারণেই চিকিৎসায় গাফিলতির কারণে একদিনে রোগীর মৃত্যু বেড়েছে। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাফাই, বিষয়টি তা নয়। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ রেফারেল সেন্টার। বাইরে থেকে বহু মুমূর্ষু রোগী সংকটজনক অবস্থায় এসে ভর্তি হন। যাঁদের চিকিৎসা করার সুযোগ পাওয়া যায় না। এর পাশাপাশি দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু থাকে। সব মিলিয়ে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির ক্ষেত্রে হাসপাতালের গাফিলতির দিকটি এভাবে মূল্যায়ন করা ঠিক নয়। 

    কিন্তু কর্তৃপক্ষের এই সাফাই মানতে নারাজ হাসপাতালেরই চিকিৎসকদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, রোগীর মৃত্যু বৃদ্ধি পেলে এটাই যদি কারণ হয়, তাহলে বছরের অন্য দিনগুলিতে রোগী মৃত্যুর সংখ্যা এর থেকে কম থাকে কী করে। তাদের অভিযোগ, পুজোয় দলবেঁধে সিনিয়র ডাক্তারদের বাইরে চলে যাওয়ার কারণেই হাসপাতালের এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। অন্যান্য দিনে গড়ে ১৫-১৬ জন রোগী মারা যান। সব থেকে আশ্চর্যের ঘটনা পুজোর ছুটির আবহে হাসপাতাল পরিচালনা বা দেখভাল করার ক্ষেত্রে শীর্ষ আধিকারিকদের অনুপস্থিতি। হাসপাতালের প্রিন্সিপাল কাম এমএসভিপি, অ্যাডিশনাল সুপারদের এই দিনগুলিতে দেখা যায়নি। হাসপাতাল সামলানোর ক্ষেত্রে একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের ভরসাতেই চলে উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। 

    হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীপুজোর ছুটির দিন, গত ২০ অক্টোবর হাসপাতালে মোট ২২ জন রোগী মারা গিয়েছে। এরমধ্যে দু’জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। এই ২২ জনের মধ্যে এক শিশুর মৃত্যুতে পরিবারের লোকেরা সরাসরি  চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ করেছেন। ওই দিন তাঁরা বিক্ষোভও দেখান। সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। যদিও পুলিশের হস্তক্ষেপে পরপস্থিতি স্বাভাবিক হয়। অভিযোগ জানানো জন্য সুপার, অ্যাডিশনাল সুপার কারও দেখা পায়নি ওই শিশুর পরিবার। তাই তারা লিখিত অভিযোগ জানায়নি। 

    এই ঘটনায় পুজোর দিনে হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতি, চূড়ান্ত অব্যবস্থার নিদর্শন বলে মনে করছেন সকলে। প্রিন্সিপাল ডাঃ সঞ্জয় মল্লিক বিষয়টি এভাবে মানতে নারাজ। তিনি বলেন, রোগী মৃত্যুর প্রকৃত কারণ কী, সবটাই হাসপাতালে গিয়ে জানতে হবে। তারপরই এ বিষয়ে বলতে পারব। 
  • Link to this news (বর্তমান)