• মালতীপুরে রাজ আমলের কালী দৌড়ে ভক্তদের ঢল
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • উজির আলি,  চাঁচল:

    ঢাকের বাদ্যি, বাজি, পটকার রোশনাই আর হাজার হাজার মানুষের উল্লাস। বিসর্জনের আগে মঙ্গলবার রাতে মালদহের মালতীপুরে আয়োজন হয়েছিল রাজ আমল থেকে চলে আসা ঐতিহাসিক কালী দৌড়। প্রায় তিনশো বছরের পুরনো এই কালী দৌড় দেখতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভিড় জমিয়েছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। রাতভর মালতীপুর এলাকা ছিল পটকার শব্দ ও আলোর রোশনাইয়ে রাঙানো।

    প্রতিটি মাতৃ প্রতিমাকে দৌড়ের উপযোগী করে গড়ে তোলেন উদ্যোক্তারা। রাজ আমল থেকে চলে আসা রীতি অনুযায়ী এদিনও প্রতিমা কাঁধে নিয়ে ছুটছিলেন যুবকেরা। আমকালী বিসর্জনের পর শুরু হয়েছিল মূল দৌড়। সেখানে অংশ নেয় চনকা কালী, হাট কালী, শ্যামা কালী, হ্যান্টা কালী, বুড়ি কালী ও বাজার কালী। পাটকাঠি জ্বালিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে দৌড়। চারপাশে তখন ভক্তরা উলুধ্বনির পাশাপাশি নানা রঙের আতসবাজি ফাটাতে থাকেন। দৌড়ের সময় কাশীপাড়ার গলিপথে সাতবার ঘুরিয়ে প্রতিটি প্রতিমা মালতীপুর সর্বজনীন দুর্গামণ্ডপের সামনে আনা হয়। প্রতিমাগুলি একত্রিত হওয়ার মুহূর্তে আবেগে ভেসে যান ভক্তরা। 

    কথিত আছে, কালীদৌড়ের সূচনা করেছিলেন চাঁচলের রাজা শরৎচন্দ্র রায় বাহাদুর। রাজপরিবারের সদস্যরা একসময় হাতিতে চেপে দৌড় দেখতে যেতেন। শুরুতে রাজার বুড়িকালী ও প্রজাদের বাজারকালী দিয়েই প্রতিযোগিতা হত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও পাঁচটি কমিটি অংশ নিতে শুরু করে দৌড়ে। বর্তমানে রাজা না থাকলেও সেই ঐতিহ্য বজায় রেখেছেন স্থানীয়রা। প্রথম হওয়া কমিটিকে আগে পুরস্কার দিতেন রাজা। তবে, গত চার বছর ধরে দৌড়ে অংশ নেওয়া কমিটিগুলিকে স্মারক উপহার দিয়ে আসছেন মালতীপুরের বিধায়ক আব্দুর রহিম বক্সি। তিনি বলেন, দৌড় দেখতে আসা কয়েক হাজার ভক্তের জন্য খিচুড়ি ভোগের আয়োজন করি। সবকিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য চাঁচলের এসডিপিও সোমনাথ সাহার নেতৃত্বে মোতায়েন ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী।

    বুড়িকালী কমিটির সম্পাদক অমিত কর্মকার বলেন, রাজ আমলের এই ঐতিহ্য ধরে রেখে আজও আমরা একত্রিত হয়ে দৌড়ে অংশ নিই। দৌড়ের সময় আলদা একটা অনুভুতি হয়, যা প্রকাশ করা যায় না।
  • Link to this news (বর্তমান)