দলছুট নেতাকর্মীদের মান ভাঙাতে তৃণমূলের দাওয়াই ‘জাদু কি ঝাপ্পি’
বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ‘মুন্নাভাই এমবিবিএস’ ছবিতে রোগ সারাতে মুন্নাভাইয়ের দাওয়াই ছিল ‘জাদু কি ঝাপ্পি’। সেই ‘জাদু কি ঝাপ্পি’-র উপরেই ভরসা রাখছে ঝাড়গ্রামের তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের অভিমানী নেতাকর্মীদের এভাবেই কাছে টানতে চাইছেন তাঁরা। বছর ঘুরলেই বিধানসভা ভোটের দামামা বেজে যাবে। শীর্ষ নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব দল গোছাতে ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে পড়ছে। জেলা নেতৃত্বের বিজয়া সম্মিলনির প্রস্তুতি সভাগুলিতে দলছুট নেতাও কর্মীদের দলে ফেরানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। মতান্তর, অভিমান ভাঙাতে সামনাসামনি কথা বলা, এমনকী ‘জাদু কি ঝাপ্পি’ দেওয়ার কথাও বলা হচ্ছে।
মুন্নাভাই এমবিবিএস সিনেমায় মুন্নাভাই ‘জাদু কি ঝাপ্পি’ দিয়ে সকলকে আপন করে নিয়েছিলেন। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের দূরে সরে যাওয়া নেতাকর্মীদের কাছে টানাতে সেই ‘জাদু কি ঝাপ্পি’-র উপরেই আস্থা রাখতে হচ্ছে। মতান্তর দূর করা, পারস্পরিক আস্থা ফেরানো সামনাসামনি আলোচনাতেই সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে। বছর ঘুরলেই ছাব্বিশের রণদামামা বেজে যাবে। বিরোধী শিবির এবার অনেক আগে থেকেই নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। অন্য জেলার গেরুয়া শিবিরের নেতাকর্মীরা আসা যাওয়া করছেন। পার্শ্ববর্তী ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড থেকে বিজেপি নেতাদের জেলার বিভিন্ন পুজো পার্বণের, অনুষ্ঠানে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। সবুজ শিবিরে সেখানে জেলার নেতাদের মধ্যে মতান্তর, বনিবনা না থাকার ছবি সামনে আসছে। বাম শাসনের সময় এইসব নেতাকর্মীরাই ঝাড়গ্রামে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছিলেন। সিপিএমের তৈরি হার্মাদদের ঘাঁটি উপড়ে ফেলেছিলেন। সামনে থেকে লড়াই করা নেতাও কর্মীদের অনেকেই দল থেকে দূরে সরে গিয়েছেন। জেলা নেতৃত্ব সংগঠনের এই দুর্বলতার কথা স্বীকার করছেন। জেলার প্রবীণ নেতাদের মতে, দলছুট নেতাকর্মীদের রাজনৈতিক লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা প্রশ্নাতীত। ছাব্বিশের ভোটের আগে দলছুট নেতাকর্মীদের কাছে টানার উদ্যোগ আরও আগে নেওয়া দরকার ছিল। জেলাজুড়ে বিজয় সম্মিলনির প্রস্তুতি সভায় বিষয়টি নিয়ে গুরুত্ব সহকারে আলোচনা চলছে। ঝাড়গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দেবব্রত সাহা বলেন, লোধাশুলিতে এদিন আমরা বিজয়া সম্মিলনির প্রস্তুতি সভা করেছি। বৈঠকে দু’দুটো বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ব্লকের যেসব গরিব মানুষ বাড়ি ভেঙে গিয়েছে তাদের নাম ও ঠিকানা ব্লক অফিসে জমা করা। দ্বিতীয়টি ভুল বোঝাবুঝি,মান অভিমান করে দল থেকে যাঁরা দূরে সরে গিয়েছেন তাঁদের দলের কার্যক্রমে ফিরিয়ে আনা। দলের জন্য তাঁরা একসময় লড়াই করেছিলেন। সামনাসামনি কথা বলে বুকে জড়িয়ে তাদের আবার ফিরিয়ে আনতে হবে। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সহ সভাপতি প্রসূণ সড়ঙ্গি বলেন, রাজ্য রাজনীতির পালাবদলে লালগড় আন্দোলন ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে।সেই আন্দোলনে দলের নেতাকর্মীরা একসঙ্গে লড়াই করেছিলেন।আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেই লড়াইয়ের ফলে জেলায় শান্তি ফিরে এসেছে।দেড় দশকে উন্নয়নের হাত ধরে জেলার ছবি পাল্টে গিয়েছে। রাজনৈতিক ক্ষমতার হাত বদল হলেই জেলায় আবার অস্থিরতা ফিরতে পারে। সামনের দিনে মানুষের স্বার্থে আবার সবাইকে এক হয়ে লড়তে হবে। জেলা তৃণমূলের নেতা উজ্বল দত্ত এদিন বলেন, নয়াগ্ৰামে এদিন বিজয়া সম্মিলনির প্রস্তুতি সভা হয়েছে। সেখানে আমার মতো অনেক নেতাকেই ডাকা হয়নি। শীর্ষ নেতৃত্বের চাপে পড়ে মুখে এক হওয়ার কথা বললেই হবেনা। কাজে প্রমাণ দিতে হবে।