• পুলিশের তোলা আদায়ের ভয়ে ঝাড়গ্রামে মাছ, মুরগি ও সব্জির বহু গাড়ি ঢোকেনি
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: পুলিশের তোলা আদায়ের ভয়ে কালীপুজোর আগে ঝাড়গ্রাম জেলায় মাছ, মুরগি ও সব্জির বহু গাড়ি ঢোকেনি। এমন অভিযোগে জেলাজুড়ে শোরগোল পড়েছে। পুলিশের তরফে অস্বীকার করা হলেও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তোলা আদায়ের বিষচক্র জেলার নানা জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। এতে লরিচালক, মাছ-মুরগি ও সব্জি ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ। বহু গাড়ি না ঢোকায় জেলার ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

    অভিযোগ, জেলার বিভিন্ন থানা এলাকার রাস্তাঘাটে তোলা আদায় তো হচ্ছেই। সেইসঙ্গে ঝাড়গ্ৰাম-বাঁকুড়া ৫নম্বর রাজ্য সড়ক, নয়াগ্ৰাম-পুরুলিয়া ৯নম্বর রাজ্য সড়ক, খড়্গপুর-চিচিড়া ৪৯নম্বর জাতীয় সড়কের বিভিন্ন নাকা চেকিং পোস্টে ‘রাস্তা খরচ’-এর নামে তোলা আদায় হচ্ছে। ব্যবসায়ী ও চালকদের অভিযোগ, ঝাড়গ্রাম ব্লকের মানিকপাড়ার গুপ্তমণি থেকে ক্ষেমাশুলি যাওয়ার রাস্তায় পুলিশের তিনটি নাকা চেকিং পোস্ট থেকেই তোলা আদায় করা হচ্ছে। তার জেরে মাছ, মুরগি ও সব্জিবোঝাই গাড়ি ওই পথে যাতায়াতই বন্ধ করে দিয়েছে। বেলপাহাড়ী বাজার থেকে জামবনির পরিহাটি আসার জঙ্গলপথে সন্ধ্যা হলেই লরি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। লরি থেকে নির্বিবাদে টাকা নেওয়া হচ্ছে।

    ঝাড়গ্রাম জেলার এসডিপিও শামীম বিশ্বাস অবশ্য বলেন, আমাদের কাছে এধরনের কোনও অভিযোগ নেই। অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ করা হবে।

    জেলার মাছ ব্যবসায়ী ও লরি ড্রাইভারদের বিভিন্ন সংগঠন পুলিশের বিরুদ্ধে তোলা আদায়ের অভিযোগ তুলেছে। অভিযোগ, গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকলেও নানাধরনের মামলা দেওয়া হচ্ছে। গাড়ি আটকে রেখে হয়রানি করা হচ্ছে। প্রতিবাদ বা অভিযোগ করলে ব্যবসার লাইসেন্স বাতিল, পুকুরের লিজ পাওয়া নিয়ে জটিলতার মুখে পড়তে হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে বহু সব্জি ও মাছবোঝাই গাড়ি না আসায় জেলার সব্জি ও মাছের বাজারে প্রভাব পড়েছে। অ্যাকোয়া ফার্মাস অ্যান্ড ফিশারমেন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের সভাপতি বিকাশচন্দ্র জানা বলেন, কালীপুজোর আগে থেকেই মাছ ও মাছের চারা রপ্তানির বেশিরভাগ গাড়ি পাঠানো বন্ধ করা হয়েছে। জেলার মাছ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, কোথাও কোথাও দু’হাজার টাকা অবধি দাবি করা হয়েছে। তোলা আদায় তো দেখছি, হকে পরিণত হয়েছে। অপর এক মাছ ব্যবসায়ী বলেন, সংগঠনের তরফে পুলিশের তোলা আদায় নিয়ে প্রকাশ্যে অভিযোগ করা হয়েছে। যার জেরে জেলার অনেক মাছচাষি

    বিপদে পড়েছেন। পুকুরের লিজ নিয়ে তাঁদের হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে। অনেক মুখ বুজে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলছেন ড্রাইভাররাও। অল বেঙ্গল ড্রাইভার সংগঠনের সভাপতি বলরাম কর্মকার বলেন, কিছু নাকা চেকিং পোস্টে গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকলেও ‘রাস্তা খরচ’ বা ‘জলপানি’র নামে টাকা নেওয়া হয়েছে। এমনকী, প্রতিবাদ করলে অন্য গাড়ির নম্বর দিয়ে মামলাও করে দেওয়া হয়েছে।

    জেলার এক সব্জি ব্যবসায়ী বলেন, দুর্গাপুজোর সময় জেলায় সব্জি আমদানি ঠিকই ছিল। কিন্তু কালীপুজোর সময় পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে ঝাড়গ্ৰাম শহরে সব্জি কম এসেছে। স্থানীয় চাষিদের সরবরাহ করা সব্জিতেই কোনওরকমে বাজার সচল ছিল।
  • Link to this news (বর্তমান)