নিজস্ব প্রতিনিধি, আসানসোল: দেশে লোকসংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি লাফিয়ে বাড়ছে ট্রেনের যাত্রী সংখ্যা। সেই অনুপাতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ছে না। আরও সমস্যা সৃষ্টি করেছে বিজেপির হাতে থাকা রেলমন্ত্রকের একাধিক সিদ্ধান্ত। করোনাকালের পর থেকেই রেলের তরফে জেনারেল কোচ কমিয়ে সংরক্ষিত কামরার সংখ্যা বাড়াতে দেখা গিয়েছে। সেখানেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় সাধারণ যাত্রীরাও সংরক্ষিত কামরায় চেপে পড়ছেন। এখন নতুন সমস্যা, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সংরক্ষিত কামরাগুলিতে বিপুল বাণিজ্যিক সামগ্রী রেখে কোচের দরজাগুলি কার্যত আটকে দিচ্ছে। ফলে নির্দিষ্ট কোচে উঠতে গিয়ে যাত্রীরা চরম সমস্যায় পড়ছেন। আরপিএফ ও রেল আধিকারিকদের উপস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা কীভাবে সংরক্ষিত কামরা দখল করছে? তাহলে কী রেলের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশ করেই অবৈধভাবে মাল পরিবহণ চলছে? সেই প্রশ্ন উঠছে।
১১৪৪৮ হাওড়া-জবলপুর শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস খনি ও শিল্পাঞ্চলবাসীর কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় ট্রেন। এই ট্রেনে হাওড়া থেকে দুর্গাপুর আসতে দু’ঘণ্টারও কম সময় লাগে। আড়াই ঘণ্টায় আসানসোলে ও চার ঘণ্টায় ধানবাদে পৌঁছনো যায়। দুপুরে হাওড়া থেকে শিল্পাঞ্চলে ফেরার সবচেয়ে ভালো ট্রেন এটিই। স্বাভাবিকভাবেই সবশ্রেণির মানুষ এই ট্রেনে যাতায়াত করতে চায়। হাওড়া থেকে দুপুর ১টা ১০ মিনিটে ট্রেনটি জব্বলপুরের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। রবিবার সেখানে দেখা যায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতি। সামনে ও পিছনে মাত্র দু’টি করে জেনারেল কোচ। সেখানে বাদুড়ঝোলার মতো যাত্রীরা ঝুলছেন। সিটের নীচে হোক বা গেটের পাশে, সর্বত্র পণ্যসামগ্রী ঠাসা। গেটে ঝুলে গন্তব্যে যেতে মরিয়া বহু যাত্রী। আরপিএফ হুইসেল দিয়ে কামরার ভিতরে ঢোকানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু কামরায় জায়গা থাকলে তবেই তো ভিতরে ঢোকা সম্ভব! দেখা গেল সংরক্ষিত স্লিপার কোচেও একই অব্যবস্থা। সিটের নীচে হোক বা গেট সর্বত্র বস্তা বস্তা সামগ্রী ভর্তি। বৈধ টিকিট কেটে যাত্রীরা যে নিজের আসনে বসবেন, তারও উপায় নেই। শুধু সামগ্রী মজুত করাই নয়, সংরক্ষিত কামরার আসন দখল করে যাচ্ছেন অবৈধ যাত্রীরাও। কয়েকজন যাত্রী প্রতিবাদ করলেন ঠিকই, তবে বেপরোয়া ব্যবসায়ীরা তা কানেই তোলেননি। নিত্যযাত্রী অনুপম হালদার, দেবেশ চক্রবর্তীরা বলেন, ট্রেনে এখন এটাই নিয়ম হয়ে গিয়েছে। নির্দিষ্ট আসনে নিশ্চিন্তে বসে যেতে গেলে এসি কোচের টিকিট কাটতে হবে। স্লিপার কোচ কার্যত জেনারেল কোচের চেহারা নিয়েছে। আগে অবৈধ যাত্রী উঠে যেত। এখন অসাধু ব্যবসায়ীরা সামগ্রী তুলে যাত্রীবাহী ট্রেনকে মালগাড়ির রূপ দিচ্ছে। বিপুল সামগ্রী নিয়ে ধানবাদ অভিমুখে যাওয়া এক ব্যবসায়ী বলেন, রেল আমাদের খুব সহযোগিতা করে। সংরক্ষিত কামরায় মাল নিয়ে গেলেও কিছু বলে না। হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিলেই হল।
রেলযাত্রীদের এই দুর্ভোগ প্রসঙ্গে দফায় দফায় নিজেদের অবস্থান বদল করেছে রেল। প্রথমে তারা জানায়, এই ধরনের কোনও ঘটনা এখন ঘটে না। আগের পুরনো ছবি দেখিয়ে রেলকে বদনাম করা হচ্ছে। আমরা এর বিরুদ্ধে কয়েকজনের নামে আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিয়েছি। পরবর্তীকালে আবার তারা জানায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সর্বশেষ পূর্ব রেলের মুখ্য সংযোগ আধিকারিক দীপ্তিময় দত্ত বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েই পদক্ষেপ নিয়েছি। আসানসোল স্টেশনে আরপিএফ ৪৯০টাকা ফাইন করেছে। সামগ্রী নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।