• ৪ জনের কমিটির উপরই ভরসা রাখল তৃণমূল, কটাক্ষ বিজেপির
    বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব সংবাদদাতা, সিউড়ি: ব্লক সভাপতি মুখের অভাব, নাকি দ্বন্দ্ব এড়াতেই এই পদক্ষেপ? খয়রাশোল ব্লকে কাউকে সভাপতি না করে চারজনের কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকেই এই ধরনের নানা জল্পনা শুরু হয়েছে জেলার রাজনীতিতে। বিজেপির কটাক্ষ খয়রাশোলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই কাউকে ব্লক সভাপতি করতে পারেনি শাসক শিবির। যদিও গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্বকে সরাসরি খারিজ করেছে তৃণমূল। খয়রাশোল ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নতুন নয়। তৃণমূলের একাধিক ব্লক সভাপতিকে খুনও হতে হয়েছে। তার পিছনে বার বার শাসকের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই দায়ী করেছে বিরোধীরা। তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্লকে আগে প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায় ও আর এক প্রাক্তন ব্লক সভাপতি অশোক ঘোষের গোষ্ঠীর লড়াই ছিল। ২০১৩  সালে প্রথম ব্লক সভাপতি অশোক মুখোপাধ্যায় খুন হন। সেই ঘটনার এক বছরের মাথায় খুন হন অশোক ঘোষও। তার ঠিক চার বছর পর খুন হন অশোক ঘোষের ভাই তথা আর এক ব্লক সভাপতি দীপক ঘোষ। এলাকার রাশ হাতে রাখা নিয়ে একাধিকবার দুই গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষও হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দুই গোষ্ঠীর অশান্তি মিটে গেলেও কোন্দল পুরোপুরি থামেনি। দীপক ঘোষের পর খয়রাশোল ব্লকের ব্লক সভাপতি হন কাঞ্চন অধিকারী। তৃণমূলের অন্দরের খবর, এই কাঞ্চন কোর কমিটির অন্যতম সদস্য বিকাশ রায়চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ। কিন্তু ওই ব্লকের পর্যবেক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পান কোর কমিটির অন্য সদস্য সুদীপ্ত ঘোষ। বিভিন্ন কারণে সুদীপ্তর সঙ্গে কাঞ্চন অধিকারীর দূরত্ব তৈরি হয়। তৃণমূলের অন্দরের খবর, ২০২৩ সালে কাঞ্চন দলের রাজ্য নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ করেন যে, সুদীপ্ত ঘোষের জন্য তাঁর স্বাধীনভাবে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। এরপরেই খয়রাশোল ব্লকের পর্যবেক্ষক পদ থেকে সুদীপ্ত ঘোষকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাতে দ্বন্দ্ব আরও বাড়ে। এরপরেই সুদীপ্তকে পর্যবেক্ষক পদে বহাল রাখতে তাঁর সমর্থনে চিঠি দেন সাতজন অঞ্চল সভাপতি। ফের ব্লকের পর্যবেক্ষক হন সুদীপ্ত। কিন্তু এই ঘটনার পর থেকেই নানা কাজে সমস্যায় পড়তে হয়েছে কাঞ্চনকে। বাধ্য হয়ে তিনি ব্লক সভাপতি পদ থেকে সরে যান বলে সূত্রের খবর। এরপরেই পাঁচজনের কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে ওই পাঁচজনের কমিটি থেকেও সরে যান কাঞ্চন। এরপর থেকেই চারজনের কমিটি ওই ব্লক পরিচালনা করছে। সদ্য প্রকাশিত ব্লক সভাপতির তালিকায় খয়রাশোল ব্লকে সেই চারজনের কমিটিই রাখা হয়েছে। সেই চারজন হলেন শ্যামল গায়েন, উজ্জ্বল কাদেরি, কাঞ্চন দে এবং মৃণালকান্তি ঘোষ। এরা চারজনই সুদীপ্ত ঘনিষ্ঠ বলে দলের অন্দরের খবর। তাতেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব খাড়া করছে বিজেপি। দুবরাজপুরের বিজেপি বিধায়ক অনুপ সাহা বলেন, খয়রাশোল ব্লকে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চিরকালের। তা ওরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তাই কমিটি গঠন করে সামাল দিতে চাইছে। কিন্তু লাভের লাভ হবে না। যদিও শাসক দল গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা মানতে নারাজ। তৃণমূলের পাল্টা দাবি, গত বিধানসভা ভোটে ওই ব্লকে সাড়ে তিনহাজার ভোটে পিছিয়ে ছিল তৃণমূল। কিন্তু এই কমিটির পরিচালনায় গত লোকসভা ভোটে সাড়ে চার হাজার ভোটের লিড পেয়েছে। তাই কমিটির উপর আস্থা রেখেছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তৃণমূলের জেলা সহ সভাপতি মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, দলের নজর সবদিকে রয়েছে। এরা ভালোভাবে দল পরিচালনা করছে। আগামী নির্বাচনে ভালো ফল করবে এই আশা রেখেই কমিটির হাতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও ব্যাপার নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)