ভাসানে আঁটসাঁটো নিরাপত্তা শহরে থাকছে ড্রোনে নজরদারির ব্যবস্থা
বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: আজ কৃষ্ণনগর শহরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে কালীপুজোর ভাসান উৎসব। সেই উপলক্ষ্যে শহরজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যেহেতু প্রতি বছর এই দিনে বিপুল ভিড় জমে এবং ভাসান ঘিরে উত্তেজনা বাড়ে, তাই এ বছর নিরাপত্তা নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে চাইছে না প্রশাসন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় ৮০০ জন পুলিশকর্মী। এর মধ্যে স্থানীয় পুলিশের পাশাপাশি অন্য জেলা থেকেও অতিরিক্ত ফোর্স আনা হয়েছে। কৃষ্ণনগর শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়, রাস্তা ও ঘাটে পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে। নজরদারির ক্ষেত্রেও এবার আরও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। শহরের হাই স্ট্রিট এলাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ভাসানপথে ড্রোনের মাধ্যমে সর্বক্ষণ পর্যবেক্ষণ চলবে। পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে, যা সরাসরি কোতোয়ালি থানার কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। সেইসঙ্গে প্রতিমা নিরঞ্জনের সময়ে গদা ব্যবহারেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। চলতি বছরের সরস্বতী পুজোর সময়ে কৃষ্ণনগরে ব্যাপক অশান্তির ঘটনার পর, পুলিশ প্রশাসন এবার বিশেষ সতর্ক। যাতে তেমন কোনও পরিস্থিতি না তৈরি হয়, তার জন্য বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। শহরের প্রত্যেক গলিতে পেট্রোলিং পার্টি টহল দেবে এবং ঘূর্ণি, শক্তিনগর, রাধানগর সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় পুলিশের বাইক বাহিনী মোতায়েন থাকবে। ভাসান প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত ও শৃঙ্খলাপূর্ণ ভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১২টি ‘পুশিং পার্টি’ গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পুরো কৃষ্ণনগর শহরকে ছয়টি পৃথক জোনে ভাগ করা হয়েছে, যাতে প্রতিটি জোনের নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণ কার্যকরভাবে পরিচালিত হয়। যদিও প্রশাসনের তরফে এতসব উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও ভাসান প্রক্রিয়া নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন অনেকে। তবে পুলিশ প্রশাসনের দাবি, এবার শহরবাসীর সহযোগিতায় শান্তিপূর্ণভাবেই সম্পন্ন হবে কালীপুজোর ভাসান অনুষ্ঠান।
কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার এসপি অমরনাথ কে বলেন, ভাসান প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সমস্ত রকম ব্যবস্থা করা হয়েছে। আটশো পুলিস মোতায়েন থাকবে। ড্রোনের পাশাপাশি সিসি ক্যামেরার নজরদারিতেও জোর দেওয়া হয়েছে।
কৃষ্ণনগরে বড় পুজোর ভাসান মানেই এখন যেন অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার প্রতিচ্ছবি। শহরের বারোয়ারি পুজো কমিটিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা যেন ক্রমশ রূপ নিচ্ছে সংঘর্ষে। ভাসানের শোভাযাত্রা চলাকালীন প্রায়ই দেখা যায় একে অপরের সঙ্গে হাতাহাতি, লাঠালাঠি এমনকি পাথর ছোড়াছুড়ির ঘটনাও। শহরবাসীর দাবি, এই প্রবণতা এখন প্রায় ‘প্রথা’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময়ে কৃষ্ণনগরের দুর্গাপুজোর ভাসান শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হতো। কিন্তু গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি আমূল বদলে গিয়েছে। দুর্গাপুজোর ভাসানেও ঘটেছে ব্যাপক অশান্তি। এমনকী একবার রাস্তায় ফেলে এক যুবককে গণপিটুনিও দেওয়া হয়েছিল— যা নিয়ে শহরজুড়ে তৈরি হয়েছিল তীব্র প্রতিক্রিয়া। স্থানীয়দের মতে, এই ধরনের ঘটনা মৃৎশিল্পের শহর কৃষ্ণনগরের ভাবমূর্তিকে গভীরভাবে আঘাত করছে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পুজো কমিটির মদ্যপ সদস্যদের লাগামছাড়া আচরণেই গোলমাল বাধে। গত বছর জগদ্ধাত্রী পুজোর ভাসানের এক পর্যায়ে পুলিশের ব্যাপক লাঠিচার্জের ঘটনাও ঘটেছিল। এ বছর সরস্বতী পুজোর ভাসানেও একই চিত্র দেখা গিয়েছিল। একাধিক পুজো কমিটি ও ক্লাবের মধ্যে সংঘর্ষে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাথরবৃষ্টি ও ইট ছোড়াছুড়ির মাঝে পুলিশকে বারবার লাঠিচার্জ করতে হয়। ঘূর্ণি এলাকায় দু’টি পুজো কমিটির মধ্যে সংঘর্ষের সময়ে উভয়পক্ষই ধারালো অস্ত্র নিয়ে একে অপরের উপর চড়াও হয়েছিল। সেই ঘটনার পর থেকে ওই এলাকায় এবার বিশেষ নজরদারি রাখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। তবে শুধু ঘূর্ণিই নয়, রাজবাড়ি, আমিন বাজার, ফোয়ারার মোড় এবং চকের পাড়া এলাকাতেও বারবার উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। চকেরপাড়ার কাছে এক পুজো কমিটির শোভাযাত্রাকে লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়ার ঘটনায় পুরো এলাকা প্রায় যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নিয়েছিল। বারবার লাঠিচার্জ, পাথরবৃষ্টি, আহত সাধারণ মানুষ— সব মিলিয়ে কৃষ্ণনগরের ভাসান উৎসবের আনন্দ এখন আতঙ্কে পরিণত হয়েছে বলে মত শহরবাসীর।