নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া: কালীপুজো উপলক্ষ্যে বাঁকুড়া শহর সহ জেলার বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। ওইসব মেলা পুজোর দিন থেকে এক সপ্তাহ ধরে চলে। মেলার দোকানে খাবারে ক্ষতিকর রাসায়নিক রং মেশানো হচ্ছে কিনা সেব্যাপারে কড়া নজর রাখতে চলেছে প্রশাসন। এব্যাপারে খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) নকুলচন্দ্র মাহাত জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাঁকুড়ায় অনুষ্ঠান বাড়িতে ব্যবহৃত ভোজ্য তেলে শহরের চপ, বেগুনির দোকান থেকে রেস্টুরেন্টে দেদার ব্যবহার হয় বলে দীর্ঘদিন ধরেই বাসিন্দারা অভিযোগ তুলছেন। পোড়া তেলে তৈরি খাবার খেয়ে অনেকেই পেটের সমস্যায় ভোগেন। তার উপর মেলার দোকানে মিষ্টি, ঘুগনি সহ অন্যান্য ফাস্টফুডে ক্ষতিকর রাসায়নিক রং মেশানোর ফলে খাদ্য সুরক্ষা কার্যত লাটে উঠতে বসেছে। অভিযোগ, বিষয়টি জানার পরেও খাদ্য সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা কার্যত নীরব। দীর্ঘদিন জেলায় কোনও অভিযানেরও খবর নেই। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে ভুক্তভোগীরা সরব হয়েছেন। কিন্তু, আধিকারিকদের মধ্যে কোনও হেলদোল নজরে পড়ছে না বলে শহরবাসীর অভিযোগ। তবে এবার জেলা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা নির্দেশ দেওয়ায় সমস্যার কিছুটা সুরাহা হবে বলে ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে।
বাঁকুড়ার অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) তথা খাদ্য সুরক্ষা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রশাসনিক আধিকারিক বলেন, সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে খামখেয়ালি বরাদাস্ত করা হবে না। মেলায় খাবারের দোকানে ভেজাল রুখতে অভিযান চালানোর জন্য আধিকারিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে খাবারের গুণগত মান বজায় রাখা হচ্ছে কি না, তা নিয়মিত নজর রাখা হয়। অভিযোগ পেলে মাঝেমধ্যে অভিযানও চালানো হয়। খাদ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার জন্য সকলকে বলা হচ্ছে। ভোগ্যপণ্য ব্যবহারকারীদেরও এব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, খাবারের পাশাপাশি বাঁকুড়ার বিভিন্ন জায়গায় গুঁড়ো হলুদ, জিরা এবং ভোজ্য তেলেও ভেজাল মেশানো হয়। জেলার মফস্সল এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা কারখানায় একাধিক নামকরা ব্রান্ডের লেভেল সাঁটিয়ে সর্ষের তেল পাইকারি হারে বিক্রি করা হয়। আসল সর্ষের তেলের মতো ঝাঁঝ আনতে ভেজাল তরলে রাসায়নিক মেশানো হয় বলেও অভিযোগ। ওই ধরনের রাসায়নিক শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর বলে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন। ওই তেল পরে বাজারে খুচরো দরে বিভিন্ন দোকানে ক্রেতাদের বিক্রি করা হয়। বিভিন্ন ব্লক এলাকায় ভেজাল হলুদের কারবার রমরমিয়ে চলে। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের সময় গোপন ডেরায় সবচেয়ে বেশি ভেজাল মেশানো খাদ্য সামগ্রী তৈরি করা হয়েছিল বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ। ওইসময় প্রশাসনের নজরদারির অভাবকে কাজে লাগিয়ে ভেজালের ব্যবসা রমরমিয়ে চলে। এখনও তা চলছে বলে জেলাবাসীর অভিযোগ। ভেজাল বন্ধে প্রশাসন তথা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকরা সক্রিয় না হলে সমস্যা থেকে বাঁকুড়াবাসী রেহাই পাবে না বলে ভুক্তভোগীরা মনে করছেন।
বাঁকুড়া শহরের বাসিন্দা রীতা পাল, দেবতনু মণ্ডল বলেন, আমরা মেলায় গিয়ে অনেক সময় বিভিন্ন খাবার খেয়ে থাকি। খাবারে ভেজাল দিলে অসুখে ভুগতে হবে। খাবার অযথা আকর্ষণীয় করার জন্য ভেজাল না দেওয়াই ভালো। খাবারে ক্ষতিকর রাসায়নিক রং মেশানোর আগে বিক্রেতারা আমাদের কথা যেন চিন্তা করেন।