নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: রবিবার রাতেই ঘরের ওয়ারড্রোব থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয়েছিল ১১ বছর বয়সি কিশোরী সঞ্জনা সিংয়ের নিথর দেহ। সোমবার অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্তে নামে আলিপুর থানার পুলিশ। ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে আত্মহত্যার ইঙ্গিত দেন চিকিৎসকরা। ওইদিন রাতেই পুলিশ জানতে পারে, মৃত কিশোরীর পরিচয়। আর জি কর ধর্ষণ-খুন কাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের ভাগ্নি এই সঞ্জনা। মঙ্গলবার সকালে সেই খবর কাগজে প্রকাশিত হতেই উত্তপ্ত হয়ে উঠলেন মৃত কিশোরীর পড়শিরা। তাঁদের দাবি, নিত্যদিন সঞ্জনার উপর শারীরিক নির্যাতন চালাত তার বাবা ও সৎ মা। মেয়েটাকে খুন করে আত্মহত্যা বলে সাজানোর চেষ্টা করছে ওরা।’ মৃতের বাবা ভোলা সিং ও সৎ মা পূজা সিংকে বাড়ি থেকে বের করে চড়াও হন স্থানীয়রা। চলে গণপিটুনি। খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তাঁদের উদ্ধার করে আলিপুর থানার পুলিশ।
১৩ বছর আগে সঞ্জয় রায়ের বড়দিদির সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ভোলার। তাঁদের সন্তান সঞ্জনা। শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার আসার সূত্রেই মেজ শ্যালিকা পূজার সঙ্গে আলাপ হয় ভোলার। ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে জামাইবাবু ও শ্যালিকার। স্বামীর পরকীয়া সম্পর্ক জানতে পেরেই অবসাদে ভুগছিলেন গৃহবধূ। ভোলাকে ডিভোর্স দেন তিনি। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিজের বোনের সঙ্গে প্রাক্তন স্বামীর সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে আত্মহত্যা করেন গৃহবধূ। বছর তিনেক আগে মেজ শ্যালিকা পূজাকে বিয়ে করেন ভোলা। শুভ্রা মণ্ডল নামে এক প্রতিবেশীর অভিযোগ, ‘মেয়েটা খুবই ভালো। কিন্তু, মা চলে যাওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন বাবা ওর উপর নির্যাতন চালাত। আমি দেখেছি, মেয়েটার চুলির মুঠি ধরে দেওয়ালে মাথা ঠুকে দিত ভোলা। এই নির্যাতন চোখে দেখা যেত না।’ অমানবিক সেই অত্যাচার দেখে তখন কেন চুপ ছিলেন প্রতিবেশীরা? এখানেই উঠছে প্রশ্ন। পড়শিদের দাবি, ‘আমরা কেউ বুঝিনি মেয়েটার এমন পরিণতি হবে।’ এদিন সকালে জড়ো হয়ে সেই ক্ষুব্ধ পড়শি মহিলারা ভোলা ও পূজাকে ঘর থেকে টেনে বের করে চড়, থাপ্পড় এমনকী জুতোপেটাও করে।
পুলিশের কাছে স্থানীয়দের মৌখিক দাবি, ‘কিশোরীকে খুন করা হয়েছে। গলা টিপে খুন করে ওয়ারড্রোবে ঢুকিয়ে ওরা বাজারে চলে গিয়েছিল। এখন মেয়ের আত্মহত্যার নাটক করছে।’ পড়শিদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সৎ মা পূজার দাবি, ‘মেয়ে পড়াশোনা করতে চাইত না। তার জন্য সব বাবা-মা’ই শাসন করে। আমরাও করতাম। কিন্তু, নির্যাতন করতাম না। ওর স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা সব জানেন। ওঁদের জিজ্ঞাসা করলেই আপনারা সব জানতেন পারবেন।’ পুলিশের দাবি, পড়শিরা কেউ মনে করলে কিশোরীর আত্মহত্যায় বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে প্ররোচনার অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু, পড়শিরা কেউই লিখিত অভিযোগ করতে চাইছেন না।