নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: মঙ্গলবার সকালে শহর, শহরতলি যেন যুদ্ধ ক্লান্ত। আইনের তোয়াক্কা না করে প্রায় সারারাত বাজি পুড়িয়ে সবাই রণক্লান্তও বটে। কালীপুজোর পরের দিন, মঙ্গলবার বাজি পোড়ানো আইনত নিষিদ্ধ। তবে সে নিষেধ খুব একটা তোয়াক্কা করেনি শহর, শহরতলির মানুষ।
অন্যদিকে কালীপুজোর পরের দিন, মঙ্গলবার শহরের রাস্তার সর্বত্র পড়ে বাজির পোড়া খোল। আর জি কর হাসপাতালের ভিতরে একটি শেলের খোল আকাশের দিকে তাক করে পড়ে আছে। এক্ষুণি যেন আকাশে গিয়ে ঘায়েল করবে শত্রুকে। হাসপাতালের ভিতরেই এন্তার বাজি পোড়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ। পরিবেশ কর্মীদের অভিযোগ, শিশুমঙ্গল হাসপাতালের বাইরেও রাত ১১টা নাগাদ দেদার বাজি পুড়েছে। শেল যেহেতু আকাশে অনেকটা উপরে গিয়ে ফাটে তাই তার ধোঁয়া বাতাসের অনেকক্ষণ স্থির হয়ে থাকে। বাজি পোড়ানোর পরও বাতাসে ভাসমান ধূলিকণা ভাসে। মঙ্গলবার সকালে শহর-শহরতলির বিভিন্ন এলাকার বাতাসে থাকা দূষণের সূচক সে কথাই প্রমাণ করছে।
এদিন সকালে নিউটাউন, উত্তর দমদম, ভিক্টোরিয়া, বেলুর মঠ, হাওড়ার বোটানিক্যাল গার্ডেন, পদ্মপুকুর এলাকার বাতাসে দূষণের সূচক ছিল যথাক্রমে ২৯৩, ২৩৫, ২২১, ২০৫, ২২৭, ২০২। তবে এ তো সরকারি হিসেব। বেসরকারি তথ্য বলছে অন্য কথা। এদিন সকালে রিষড়া, বারাকপুর এলাকার দূষণ সূচক ছিল ২০০ ছুঁইছুঁই। আর কালীপুজোর মধ্য রাতে কোন্নগর ও সোদপুরের সূচক ৫০০ ছাড়িয়ে গিয়েছিল। প্রসঙ্গত বাতাসে দূষণের সূচক ১০০ পেরলেই তা অস্বস্তিজনক হিসেবে ধরা হয়।
কালীপুজোর রাত আটটা থেকে ১০টা পর্যন্ত শুধুমাত্র সবুজ বাজি পোড়ানোর নিদান দিয়েছিল প্রশাসন। তা কতটা মেনেছে মানুষ? তা পরখ করতে পরিবেশ কর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’ উদ্যোগ নিয়েছিল। শহরের হাসপাতালগুলিতে সংগঠনের কর্মীরা পরিদর্শন করেন। মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত বলেন, ‘রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ আমরা আর জি কর হাসপাতালের ভিতরে গিয়ে দেখতে পাই সেখানকার পড়ুয়ারা দেদার বাজি ফাটাচ্ছেন। আমরা তাঁদের জানাই, বাজি জনস্বাস্থের কতখানি ক্ষতি করে তা তো হবু ডাক্তাররা জানেন। তবুও তাঁদের এমন আচরণ কেন?’ জানা গিয়েছে, এরপর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিআইএসএফ, কলকাতা পুলিশের লোকজন আসে। পরিবেশ কর্মীদের সঙ্গে পড়ুয়াদের বচসা বাধে। পরিবেশ কর্মীদের বক্তব্য, একসময় বেশ কয়েকজন পড়ুয়া এসে ভিড় করেন। তারপর সিনিয়ররা এসে মিটমাট করে দেন। বাজি পোড়ানোও বন্ধ করেন। আর জি কর হাসপাতালের রেসিডেন্ট চিকিত্সকদের সংগঠনের তরফে অনিকেত মাহাতো বলেন, ‘যদি সত্যি এমন ঘটনা ঘটে থাকে তবে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা নিক। আমরা কখনওই এই কাজ সমর্থন করি না।’ হাসপাতালের এমএসভিপি সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করা হলে তিনি উত্তর দেননি। দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের আধিকারিকদের বক্তব্য, যে সময় তাঁরা হাসপাতালগুলিতে গিয়েছিলেন তখন তেমন কোনও সমস্যা দেখতে পাননি। যদিও মঙ্গলবার সকালে আর জি কর হাসপাতালের অ্যাকাডেমিক বিল্ডিংয়ের সামনে গিয়ে দেখা গিয়েছে, পড়ে রয়েছে মাটির তুবড়ি, শেলের খোল। সবুজ মঞ্চের বক্তব্য, ‘আমরা যখন ১১টা নাগাদ শিশুমঙ্গল হাসপাতাল চত্বরে গিয়েছিলাম সেখানেও হাসপাতালের বাইরে বাচ্চারা দেদার শব্দবাজি পোড়াচ্ছিল। পুলিশও ছিল। তবে তারা এসে বাজি পোড়ানো বন্ধ করতে বলে।
অন্যদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে শব্দবাজির আওয়াজ আসতে শুরু করে বলে অভিযোগ। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কন্ট্রোল রুমে মঙ্গলবার রাত ন’টা পর্যন্ত শব্দবাজি সংক্রান্ত পাঁচটি অভিযোগ আসে বলে জানা গিয়েছে। তার মধ্যে চারটি কলকাতা ও একটি দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে এসেছে। কলকাতার মধ্যে যাদবপুর, লেকটাউন, বটতলা এলাকা থেকে শব্দবাজির অভিযোগ জমা পড়েছে।