সশক্তিকরণ, রাজ্যে জমি-বাড়ি ক্রেতাদের ৬৪ শতাংশই মহিলা
বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৫
প্রীতেশ বসু, কলকাতা: বিগত বছরগুলির তুলনায় রাজ্যে জমি-বাড়ি কেনার হার বেড়েছে অনেকটাই। এমনকি, কোভিড আমলে রেজিস্ট্রেশন ফি এবং স্ট্যাম্প ডিউটির উপর দেওয়া ছাড় ২০২৪ সালের জুলাই মাসে তুলে নেওয়ার পরেও ভাটা পড়েনি জমি-বাড়ি কেনাকাটায়। কিন্তু এই পরিসংখ্যানের মুদ্রার একটা উলটো পিঠ আছে। আর তা হল, সম্পত্তি ক্রয়ে পুরুষদের সঙ্গে রীতিমতো পাল্লা দিচ্ছেন রাজ্যের মহিলারা। কোনও কোনও ক্ষেত্রে ছাপিয়েও যাচ্ছেন। তারই প্রমাণ মিলছে রাজ্যের সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, জমি-বাড়ি ক্রেতার তালিকায় ৬৩.৮৪ শতাংশই মহিলা।
কিন্তু কীসের জোরে সম্পত্তি কেনাবেচায় অংশীদারিত্ব বাড়ছে রাজ্যের মহিলাদের? অর্থনীতিবিদ অভিরূপ সরকারের ব্যাখ্যা, ‘বর্তমানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চাকরিজীবী। সে ক্ষেত্রে একজনের আয়ের অর্থ ব্যবহার করে সংসার চলে। আর অপর জনের উপার্জিত টাকা জমিয়ে জমি, বাড়ি, গয়না কেনা, বা বছরে একবার পছন্দের ডেস্টিনেশনে ঘুরতে যাওয়ায় কোনও বাধা থাকে না। দু’জনের চেষ্টায় সম্পত্তি কিনলে অনেকেই স্ত্রীয়ের নামে তা রেজিস্ট্রি করেন। এছাড়াও বর্তমানে মহিলারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়ায় জমি-বাড়ি কেনার ব্যাপারেও তাঁদের আর কারও উপর নির্ভর করতে হয় না। তারই ফল মিলছে পরিসংখ্যানে।’
কী বলছে সম্প্রতি প্রকাশিত রাজ্যের রিপোর্ট? পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অর্থদপ্তরের অধীনস্থ ডিরেক্টরেট অব রেজিস্ট্রেশন অ্যান্ড স্ট্যাম্প ডিউটির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষে (২০২৫-২৬) এ পর্যন্ত মোট ১৪ লক্ষ ৮০ হাজার ৬৬১টি রেজিস্ট্রেশন হয়েছে। তার মধ্যে মহিলাদের নামেই হয়েছে ৯ লক্ষ ৪৫ হাজার ৩৯৯টি। অর্থাৎ, মহিলাদের নামে রেজিস্ট্রেশন ৬৩.৮৪ শতাংশ। এখানেই শেষ নয়। বাণিজ্যিক কারণে কেনা জমি-বাড়ির ক্ষেত্রেও সমানে সমানে পুরুষদের টক্কর দিয়ে চলেছে নারী সমাজ। এ ক্ষেত্রে প্রায় ৫১.৮৫ শতাংশ রেজিস্ট্রেশনই হয়েছে মহিলাদের নামে। সংখ্যার বিচারে বাণিজ্যিক কাজের জন্য মোট ৮৩ হাজার ৭৭০টি রেজিস্ট্রেশনের মধ্যে ৪৩ হাজার ৪৩৮টিতেই নাম আছে মহিলাদের।
এবিষয়ে রাজ্যের এক পদস্থ কর্তা জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে মহিলাদের স্বনির্ভরতার লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাঁদের জন্য কাজের সুযোগও বেড়েছে। এমনকি, রাজ্য বাজেটেও নারী উন্নয়ন নিয়ে বিশেষ অংশ ধার্য হয়েছে। পাশাপাশি, বেসরকারি ক্ষেত্রেও বিপুল বেতনের চাকরিতে সামনের সারিতে থাকছেন মহিলারা। ফলে জমি-বাড়ি কেনায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষজ্ঞ মহলের মত, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বহু রাজ্যে মহিলাদের নামে জমি-বাড়ি রেজিস্ট্রেশনে ছাড় মিললেও বাংলায় কিন্তু তেমন সুবিধা নেই। তা সত্ত্বেও মহিলাদের জমি-বাড়ি কেনার হার বেশি হওয়া রাজ্যের উন্নত আর্থিক পরিস্থিতির দিকটাই সামনে নিয়ে আসছে। কিন্তু এর কোনও সামাজিক কারণ আছে কি? সমাজতত্ত্ববিদ দেবদ্যুতি কর্মকার জানিয়েছেন, নিজের নামে কোনও সম্পত্তি থাকলে সামাজিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি হয়। সেই কারণেও মহিলাদের মধ্যে নিজের নামে জমি-বাড়ি রেজিস্ট্রেশনের ঝোঁক বাড়ছে বলেও ধরা যেতে পারে।