নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ঘড়ির কাঁটায় রাত ১০টা। নিয়ম অনুযায়ী, বাজি (পড়তে হবে সবুজ বাজি) পোড়ানোর সময় শেষ। কিন্তু কে মানে? নিউটাউনের বিশ্ব বাংলা সরণির আশপাশে একের পর এক ব্লকের রাস্তায় গাড়ি লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে। সিগন্যাল নয়, দেদার আতশবাজি পোড়ানো হচ্ছে। অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে গাড়ি। স্থানীয়দের উদ্যোগেই চলছে নিয়মভাঙার উত্সব। ব্লকের অন্দরে প্রতি রাস্তায় চলছে শব্দ-তাণ্ডব। আশপাশ থেকে বাজি নিয়ে এসে নিউটাউন-রাজারহাটের ফাঁকা জায়গাতেও ফাটাচ্ছেন মানুষ। অতঃপর, রাত বাড়ার সঙ্গে কলকাতার চারপাশ সাদা ধোঁয়ার চাদরে ঢেকে গেল। রাত ১১টায় নাগাদ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য বলছে, নিউটাউনের বাতাসে দূষণের সূচক ২২১, যা সুস্থ মানুষকেও অস্বস্তি দেয়। তখন উত্তর দমদমের বাতাসে দূষণের সূচক ১৫১।
এভাবেই কালীপুজোতে দূষণে কলকাতাকে পিছনে ফেলল নিউটাউন। সোমবার রাত ১২টা ৩৫ মিনিটের তথ্য বলছে, নিউটাউনের শব্দ দূষণের মাত্রা ৭২ ডেসিবেল। ততক্ষণে অবশ্য কলকাতাও পিছিয়ে নেই। ওই সময় লরেটো কলেজ চত্বরে শব্দ দূষণের মাত্রা ৭৬। রাত পৌনে বারোটা নাগাদ যাদবপুর এলাকার শব্দ দূষণ পৌঁছেছিল ৭৮’এ। রুবি এলাকায় সাড়ে ১১টা নাগাদ ওই মাত্রা ছিল ৭৬। পিছিয়ে ছিল না মধ্যমগ্রাম, বারাসত, বারাকপুর, হাওড়া। ১৯-২০ তারিখ বিধাননগর কমিশনারেট ৩৬ কেজি অবৈধ বাজি উদ্ধার ও ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ৮৮ জনের বিরুদ্ধে ৩৫টি মামলা রুজু করা হয়েছে। ২৩ তারিখ পর্যন্ত বিকেল ৫টা থেকে বহুতল আবাসনের ছাদে ওঠা নিষিদ্ধ করেছিল বিধাননগর কমিশনারেট। তত্পর ছিল কলকাতা পুলিশও। লালবাজার জানিয়েছে, এক রাতে শহরে নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানো ও আইনভঙ্গের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে ৬৪০ জন। তার মধ্যে বেআইনি বাজি পোড়ানোর অভিযোগে ১৮৩ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে মামলা রুজু হয়েছে। লালবাজারের দাবি, সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে, গড়িয়াহাট, গোলপার্ক চত্বর থেকে। শব্দের দাপট ছিল বেহালা, সিঁথি, বেলেঘাটা, পাটুলিতেও। রাতভর শহরে অভিযান চালায় কলকাতা পুলিশ। ৮৫২ কেজি নিষিদ্ধ শব্দবাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ৬৮ লিটারের বেশি মদ উদ্ধার হয়েছে। জুয়া খেলার অভিযোগে ৬ জন গ্রেফতার হয়েছে। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কন্ট্রোল রুমে বিকেল ৫টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত গোটা রাজ্য থেকে ৪৭টি অভিযোগ এসেছে। কলকাতা, নিউটাউন, সোনারপুর, বারাসত, বারাকপুর থেকেও শব্দবাজির অভিযোগ এসেছে।
পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র বলেন, ‘কলকাতায় মাঝরাতে দাপট বেড়ে গিয়েছিল। একটা বিষয়, যে বাজিগুলো কলকাতার বিভিন্ন জায়গাকে বিষিয়ে দিয়েছে, সেগুলো সস্তার নয়। এগুলো সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। কিছু অবস্থাপন্ন মানুষ এই কাণ্ড করেছেন। মধ্যবিত্ত শিক্ষিত নাগরিকরা এই কাজ করেননি।’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজকুমার ভার্মা বলেন, ‘শব্দ ৯০ ডেসিবলের থেকে কম রয়েছে মানে তা সীমার মধ্যেই রয়েছে। সীমা ১২৫ ডেসিবল। এছাড়া, আমরা সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বায়ুদূষণের উপরেও নজর রেখেছিলাম। তখনও পর্যন্ত সারা ভারতের অন্যান্য বড় শহরের তুলনায় কলকাতায় দূষণ কম ছিল।’ প্রশ্ন হল, এই এক রাতের প্রভাব কতদিন থাকবে? মঙ্গলবার সকালেও নিউটাউনের দূষণের সূচক ছিল ২৩৫, আর যাদবপুরে ১৯৮।