প্রত্যুষার জন্মদিনের জন্য কেনা জামা পড়েই, নাতনি খুনেও নির্বিকার দাদু
বর্তমান | ২২ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা ও সংবাদদাতা, বারুইপুর: ডিসেম্বরেই পাঁচ বছর হত সোনারপুরের প্রত্যুষা কর্মকারের। ২০ ডিসেম্বর জন্মদিন। একরত্তি মেয়েকে পাহাড়ে নিয়ে গিয়ে সেই দিনটা পালনের পরিকল্পনাও নিয়েছিলেন কর্মকার দম্পতি প্রশান্ত-উমা। গোলাপি রঙের একটি ফ্রক কেনা হয়েছিল ওই দিনটির জন্যই। কিন্তু আলমারিতেই পড়ে রইল তার সেই পছন্দের রং। ছোট্ট প্রত্যুষাই যে আর নেই! শোকে বিহ্বল সবাই। তবে দাদু প্রণব ভট্টাচার্য নন। নাতনিকে খুন করার পরও নির্লিপ্ত। বারুইপুর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি। সেখানে দিব্যি আছেন। অনুশোচনার লেশমাত্র নেই চোখে-মুখে। একপ্রকার খোশ মেজাজেই দিন কাটাচ্ছেন।
পরিবার সূত্রে খবর, মেয়ের পঞ্চম জন্মদিনটি বিশেষভাবে পালনের কথা ভেবে রেখেছিলেন প্রত্যুষার বাবা-মা। মেয়েকে চোখের জলে বিদায় জানিয়ে এখন তাঁরা বিপর্যস্ত। ভেস্তে গিয়েছে যাবতীয় ভাবনা। পরিকল্পনা। এক মুহূর্তে কেউ যেন বুকের উপর পাথর চাপিয়ে দিয়েছে। কোদালিয়া কদমতলার পাড়ায় ‘চিনি’ নামে সবাই ডাকত ওই শিশুকে। পাড়ার কাকু-জেঠু, যাঁদের কোলে চেপে বড় হচ্ছিল ফুটফুটে শিশুটি, তাঁরাও যেন ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না। আদরের ‘চিনি’কে শেষ বিদায় জানাতেও তাই মন চাইছিল না তাঁদের। মঙ্গলবার শিশুর পারলৌকিক কাজ সম্পন্ন করেন তার বাবা প্রশান্ত। তবে ‘খুনি’ দাদুর সঙ্গে বাড়ির অন্য সদস্যদের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল না বলেই জানা গিয়েছে। সূত্রের খবর, খুনের কিছুদিন আগে থেকেই প্রত্যুষাকে নিয়ে সব সময় অভিযোগ করতেন দাদু। বিরক্ত করে, কথা শোনে না... সর্বক্ষণ তিরিক্ষি মেজাজ আছড়ে পড়ত ওই শিশুর উপর। একবার প্রত্যুষার মাথা পর্যন্ত দেওয়ালেও ঠুকে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। এই নিয়ে জামাইয়ের সঙ্গেও বাগবিতণ্ডায় জড়িয়েছিলেন প্রণব।
এখন গ্রেফতারের পর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে বারুইপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৮১ বছরের ওই বৃদ্ধ। পুলিশের পাহারায় সেখানে আছেন তিনি। জানা গিয়েছে, সকাল-বিকেল খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে বাকি রোগীদের সঙ্গে খোশগল্প, সবই করছেন। স্বাভাবিকভাবেই। তবে মেজাজ একদম সপ্তমে। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের বলছেন, কেন তাঁকে হাসপাতালে রাখা হয়েছে! জেলে নিয়ে গেলেই তো হয়। রাউন্ডে গিয়ে চিকিৎসক যখন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘নাতনিকে মারলেন কেন?’ তখন অবশ্য অন্য গল্প বলেছেন অভিযুক্ত। উত্তর ছিল—‘স্ত্রী ও মেয়ে আমাকে বিরক্ত করত। সেই রাগ নাতনির উপর মিটিয়েছি।’ অন্য রোগীর আত্ময়ীরা তাঁকে দেখার জন্য উঁকিঝুঁকি মারছেন ওয়ার্ডে। কীভাবে ওই দাদু এত নির্লিপ্ত, তা ভেবেও অবাক সবাই। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রত্যুষাকে কোপানোর পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে শ্বাসরোধ করেছিল অভিযুক্ত। যে ছুরি দিয়ে একরত্তি শিশুটিকে কোপানো হয়েছিল, সেটি উদ্ধারের জন্য বৃদ্ধকে কর্মকার বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে। হবে ঘটনার পুনর্নির্মাণও।