• কালনার এই পুজোয় এসেছিলেন রামকৃষ্ণ
    এই সময় | ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • সূর্যকান্ত কুমার, কালনা

    একটা সময়ে এই পুজোকে কেন্দ্র করে বসত কৃষ্ণযাত্রার আসর। শুনতে আসতেন সাধক কমলাকান্ত। এ ছাড়াও নানা সময়ে এই পুজোয় পা পড়েছে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব, আনন্দময়ী মা, ভগবানদাস বাবাজি, ওঙ্কারনাথের মতো সাধরকেও। কালনা শহরের বড় কালীর পুজো ঘিরে রয়েছে এমনই নানা লোককথা।

    এক সময়ে এই শহর ছিল তন্ত্রসাধনার বড় কেন্দ্র। রয়েছে সিদ্ধেশ্বরী কালী, সাধন কালীর কুঞ্জ, আনন্দময়ী কালী, সিদ্ধান্ত কালী, সত্যনাথের কালী, যোগানন্দের কালী মন্দির। শহরে রয়েছে সাধক কমলাকান্তের জন্মভিটে, ভবা পাগলার আশ্রম।

    শহরের আরাধ্য দেবী সিদ্ধেশ্বরী যা প্রাচীন জৈন দেবী অম্বিকার পরিবর্তিত রূপ বলে মনে করা হয়। কালনা শহরের আরাধ্য দেবী সিদ্ধেশ্বরী কালীর মন্দির ও মূর্তি অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। সারা বছর দেবীদর্শন হলেও শুধুমাত্র কোজাগরী পূর্ণিমার পরের কৃষ্ণা পঞ্চমী থেকে কৃষ্ণা ত্রয়োদশী পর্যন্ত দেবী দিগম্বরী থাকেন বলে বন্ধ থাকে মন্দিরের দরজা।

    উচ্চতার নিরিখে শহরে রয়েছে বড় কালী, মেজ কালী, সেজো কালী। ব্রিটিশ রাজত্বে ভাগীরথী ঘাটে নিরঞ্জনের সময়ে মাপা হতো প্রতিমার উচ্চতা। উচ্চতার নিরিখে সর্বোচ্চ লক্ষণপাড়ার ভট্টাচার্য পরিবারের কালী প্রতিমা। ভট্টাচার্য পরিবারের বড় কালীর পুজো প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো। তাঁর কাছে প্রার্থনা করলে আশা পূরণ হয় বলে তাঁর অন্য নাম আশা দেবী।

    পরিবারের সদস্যদের দাবি, প্রাচীন রীতি মেনে পুজো চলছে।বর্তমান প্রজন্ম নিয়ে সাত পুরুষ ধরে পুজো চলে আসছে। দেবীর উচ্চতা ১২ ফুট। দেবীকে ডাকের সাজ পড়ানো হয় না। গায়ে থাকে মৃত্তিকার সাজ, নিবেদন করা হয় মহা–নৈবেদ্য। ভোগে থাকে মাছ, মাংস, মিষ্টি। থাকে চিংড়ি মাছের পদও।

    এই প্রতিমাকে ঘিরে রয়েছে অনেক অলৌকিক কাহিনিও।দেবীর পায়ে রুপোর নুপুর ও নাকে নাকছবি থাকে বলে পরিবারের কোনও মহিলা নুপুর বা নাকছবি পরেন না। শোনা যায়, একবার পরিবারের এক বধূ, যিনি বাড়ির রান্না করতেন, মেয়েকে দিয়েছিলেন রুপোর নুপুর। সেই সন্ধ্যায় বাড়ির ওই বধূ সর্পদষ্ট হন। শাশুড়ি দেবার কাছে প্রার্থনা করেন, ছেলের বউয়ের যেন কোনও ক্ষতি না–হয়। তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।

    আজও রীতি মেনে মশাল জ্বালিয়ে পুজো হয়। আগে এই এলাকা বনে ভরা ছিল। বাঘের উপদ্রব ছিল। বাঘের হাত থেকে বাঁচতে মশাল জ্বালানো হতো। সেই রীতি আজও মানা হয়।

  • Link to this news (এই সময়)