• রাতে বিলে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ দুই যুবক, পাড়ে অপেক্ষায় বাবা
    আনন্দবাজার | ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • কালীপুজোর সকাল থেকে রাত, কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে লাগোয়া মথুরা বিলের ধারে ঠায় বসে ছিলেন বৃদ্ধ শ্যাম বর্মা। ছেলে তলিয়ে গিয়েছে বিলের জলে। ছেলেরই খোঁজ মেলার প্রতীক্ষায় তিনি। পুলিশ ও প্রতিবেশীরা তাঁকে ঘরে ফিরে যাওয়ার কথা বললেও শোনেননি বৃদ্ধ।

    পুলিশ জানায়, রবিবার রাতে ব্যারাকপুর ও নদিয়া জেলা ঘেঁষা মথুরা বিলে ডিঙি নৌকা নিয়ে ‘প্রমোদ ভ্রমণ’ করার সময়ে নৌকা উল্টে তলিয়ে যান দুই যুবক। সাঁতরে কোনও রকমে পাড়ে উঠতে পারেন তাঁদের আর এক সঙ্গী। তিনিই এলাকায় বিষয়টি জানালে মাঝরাত থেকে খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। তবে সোমবার রাত পর্যন্ত নিখোঁজ বিশ্বনাথ বিশ্বাস ও করণ বর্মার খোঁজ মেলেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

    ব্যারাকপুর মহকুমার অন্যতম বড় ওই বিলটি প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার লম্বা। ঘাটে বেঁধে রাখা মৎস্যজীবীদের একটি ডিঙি নৌকা নিয়ে তিন যুবক বিলের জলে রবিবার রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, অমাবস্যার আগের রাত হওয়ায় বিলে কিছুই ঠাহর হচ্ছিল না। দু’-এক জন মৎস্যজীবী তখনও বিলে ছিলেন। নৌকাডুবির ঘটনা তাঁরাও প্রথমে বুঝতে পারেননি।

    প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানায়, বিল সংলগ্ন সারদাপল্লির বাসিন্দা বিশ্বনাথ, করণ ও তাঁদের বন্ধু সুদীপ্ত শিকদার নেশা করে নৌকা নিয়ে ঘোরার পরিকল্পনা করেছিলেন। নৌকায় উঠেও তাঁরা নেশা করছিলেন। মত্ত অবস্থায় দাঁড় বাইতে গিয়ে উল্টে যায় সরু নৌকাটি। সুদীপ্ত কোনও রকমে সাঁতরে পাড়ে উঠলেও বাকিরা তলিয়ে যান। পুলিশ সুদীপ্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই তথ্য পেয়েছে।

    ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর) গণেশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘ডুবুরি নামিয়েও তলিয়ে যাওয়া দু’জনের খোঁজ মেলেনি। লাটবাগান থেকে ৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর সদস্যেরা খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন। জেঠিয়া থানা নজর রাখছে।’’ ‘কাঁচরাপাড়া রেফিউজি ফিশারম্যানস কোঅপারেটিভ সোসাইটি’র সম্পাদক অনুপকুমার দে বলেন, ‘‘আমরা রাত ১০টা নাগাদ নৌকাডুবির কথা জানতে পারি। আমাদের সমবায়ের সদস্যেরা জাল ও নৌকা নিয়ে খোঁজ শুরু করেছিলেন রাত থেকেই। এত বড়, গভীর বিলে ডুবে গেলে সহজে খুঁজে পাওয়া কঠিন।’’ তিনি আরও জানান, মৎস্যজীবীদের সচেতন হতে হবে, যাতে বাইরের কেউ নৌকা নিয়ে জলে না নামতে পারেন।

    শ্যাম বলেন, ‘‘ছেলে হয়তো নেশা করেছিল। আমরা ক’জন বাবা-মা জানতে পারি? আর পারলেই বা কী করতে পারি? অপেক্ষা করছি খোঁজ পাওয়ার।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)