• বিশ্বের দূষণ শীর্ষে দমবন্ধ দিল্লি, আটে কলকাতা
    আনন্দবাজার | ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • লজ্জা আর বিড়ম্বনার এমন সমাপতনের দিন সচরাচর আসেনি ভারতের দূষণ-চিত্রে।

    সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দীপাবলির রাতে ক্ষতিকর আতশবাজির শব্দ আর ধোঁয়ায় আকাশ-বাতাস ভরিয়ে দিল দিল্লি। কলকাতায় ভোররাত অবধি শব্দবাজির দাপটে ঘুম ভেঙে কেঁপে উঠল দুধের শিশু থেকে সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ। আর সকালের ক্ষতিকর, ধাতব বাতাসে শ্বাস নিতে নিতে দিল্লিবাসী দেখলেন, তাঁদের শহর বায়ুদূষণে ‘সকল দেশের সেরা’। বাতাসের মান নিয়ে কাজ করা সুইৎজ়ারল্যান্ডের সংস্থা ‘আইকিউএয়ার’ সারা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত দশটি শহরের তালিকা প্রকাশ করেছে। সেই তালিকারশীর্ষে দিল্লি। পাঁচে মুম্বই। আটে তিলোত্তমা কলকাতা! লাহোর রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, কুয়েত সিটি তিনে, করাচি চারে।

    দূষণ রুখতে আপ আমলে বাজির উপরে নিষেধাজ্ঞা বসত দিল্লিতে। এ বছর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, ১৮ থেকে ২০ অক্টোবর দিল্লি ও সংলগ্ন জাতীয় রাজধানী অঞ্চলে ভোর ৬টা-৭টা এবং রাত ৮টা-১০টার মধ্যে শুধু পরিবেশবান্ধব সবুজ বাজিই পোড়ানো যাবে। অভিযোগ, সেই সুযোগ নিয়ে ‘বাচ্চাদের বাজি’ আর ‘বড়দের বাজি’, এই সঙ্কেতের আড়ালে দেদার নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি হয়েছে দিল্লিতে। ফেটেছে প্রচুর। তার জেরে এ বছর দীপাবলিতে জাতীয় রাজধানীতে বায়ুদূষণের সূচক গত তিন বছরকে ছাপিয়ে গিয়েছে।

    কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (সিপিসিবি)-এর শ্রেণিবিন্যাস বলছে, বায়ুর মানের সূচক ৩০১-৪০০-র মধ্যে থাকলে তা ‘খুব খারাপ’। ৪০১-৫০০ পর্যন্ত হলে ‘ভয়ঙ্কর’। এই মুহূর্তে দিল্লি, মুম্বই ও কলকাতা— তিনটি শহরই রয়েছে বিপদসীমার কাছাকাছি। সিপিসিবি-র পরিসংখ্যানে দিল্লিতে বায়ুদূষণের সূচক (একিউআই) আজ সকাল ৭টায় ছিল ৪৫১। নয়ডা, গুরুগ্রামে তা ছিল যথাক্রমে ৪০৭ ও ৪০২। সকাল ৯টায় দিল্লির দূষণ-সূচক সামান্য কমে ৩৫২-তে নামে। ২০২৪ সালে দীপাবলিতে তা ছিল ৩২৮ একিউআই, ২০২৩ সালে ২১৮, ২০২২ সালে ৩১২। বাজি ফাটার পরে বাতাসে যে ক্ষতিকর ধাতব উপাদান-সমন্বিত পিএম ২.৫ এবং পিএম ১০ কণা ছড়িয়ে পড়ে, তার সহনশীল ঊর্ধ্বসীমা প্রতি ঘনমিটারে ৬০ মাইক্রোগ্রাম। দিল্লির আনন্দ বিহারে তা ১৮০০ পেরিয়েছে। ১৫০০ পেরিয়েছে বেশ কিছু এলাকায়। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে বিজেপি, আরএসএসের বাজি ফাটানোর পক্ষে লাগাতার প্রচারের যৌক্তিকতা ও বাস্তবতা নিয়েও।

    বেসরকারি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ দিন কলকাতার বাতাসের মানের গড় সূচক ছিল প্রায় ২৪৫, যা ‘খারাপ’ শ্রেণিতে পড়ে। গড়িয়াহাট থেকে বেলঘরিয়া, রবীন্দ্রসদন থেকে ডানলপ— নানা অঞ্চল রাতে বাজির শব্দে কেঁপে উঠেছে। মুম্বইয়ে সূচক পৌঁছেছে ২৮৮-এ। দূষণের বড় অংশ এসেছে শিল্পাঞ্চল ও যানবাহনের ধোঁয়া থেকেও। পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, বাতাসের গতি না বাড়লে এই ঘনত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)