বিহার ভোট: নতুন ভোটব্যাংক ‘পরিযায়ী শ্রমিক’দের মন জয়ে মরিয়া প্রতিটি দলই
বর্তমান | ২৩ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: বাবুলাল যাদব এখনও জানে না যে সে, আট-দশদিন ছুটি পাবে কি না। এরকম হয়নি আগে। সামনেই ছট পুজো। ২৮ অক্টোবর সমাপ্ত হবে। ছট পুজোয় বিহারের মহুয়ায় বাড়িতে ফিরে পরিবারের সঙ্গে উৎসবে সামিল হওয়া প্রতি বছরের নিয়ম। সাধারণত দীপাবলির ছুটিতে গিয়ে ছট পুজো সমাপ্ত করে তারপর আবার দিল্লির প্রীত বিহারে ফিরে আসে বাবুলাল। কাজ করে একটি রেস্তরাঁয়। কিন্তু এবার দীপাবলির ছুটি নেয়নি সে। কারণ, তার লক্ষ্য ছট পুজোয় বাড়ি যাওয়া এবং তারপর একেবারে ভোট দিয়ে ফেরা। ভোট দেওয়ার জন্য থেকে যাওয়ায় আবার কাজ থেকে বিতাড়িত হতে হবে না তো? এই আশঙ্কায় এখনও সে মালিককে জানায়নি কিছু। আবার এদিকে সমস্যা হল, স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিউয়ের (এসআইআর) পর যদি ভোট না দেয়, তাহলে আগামী দিনে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ গেলে কী হবে? এবার যেমন বহু পরিযায়ী শ্রমিকের নাম বাদ গিয়েছে। আর সেই কারণেই এবারে ভোটটা দিতে মরিয়া বাবুলাল। আরও বেশি সমস্যা সেই পরিযায়ীদের, যাদের এলাকায় ভোট ১১ নভেম্বর। ছটপুজোয় গিয়ে কর্মস্থলে ফিরে এসে আবার ভোট দিতে যাওয়া একপ্রকার অসম্ভব। আবার এত লম্বা ছুটিও মিলবে না। ফলে উভয় সংকট।
বিহারের ভোটপর্বে এই পরিযায়ীদের ভোট পেতে মরিয়া হয়ে ঝাঁপিয়েছে সব পক্ষ। ২০২৩ সালের কাস্ট সেন্সাস থেকে জানা যাচ্ছে, বিহারের আড়াই কোটিরও বেশি মানুষ রাজ্যের বাইরে যায়-থাকে। ভোটের সময় তারা ফেরে। অন্য ভোটে সকলের পক্ষে ফেরা সম্ভব হয় না। কিন্তু এবারের বিষয়টা আলাদা। এসআইআরের আতঙ্কের আবহে কমবেশি সকলেই ভোট দিতে উদগ্রীব। দিওয়ালি বা ছটে যদি বাড়ি যাওয়া না হয়, না হবে। কিন্তু ২০২৫ সালে যে তারা ভোট দিয়েছে, সেই রেকর্ডটা যেন থাকে। ফলে এবারের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক ভোট দেবে বলে হিসেব কষছে রাজনৈতিক দলগুলি। আর সেই কারণেই এনডিএ, মহাজোট ইন্ডিয়া হোক বা প্রশান্ত কিশোরের দল, সকলেরই পাখির চোখ এই পরিযায়ীরা। জানা যাচ্ছে, প্রতিটি দলের নির্বাচনী ইস্তাহারে আলাদাভাবে জায়গা পাচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিক ইস্যু। অর্থাৎ উচ্চবর্ণ, অনগ্রসর, মহাদলিতের মতো জাতপাতের সমীকরণের পাশাপাশি এবার একটি বড় ভোটব্যাংক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে পরিযায়ী শ্রমিকরা। এই পরিযায়ীদের মধ্যে কমবেশি সব জাতিগোষ্ঠীই অন্তর্ভুক্ত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই উচ্চবর্ণের মানুষজন অন্য রাজ্যে সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় ভালো চাকরি করেন অথবা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। অন্যদিকে, অনগ্রসরদের সিংহভাগই শ্রমিক। কিন্তু এবার তাদের সব রাজনৈতিক দল একটাই ব্র্যাকেটে দেখছে—পরিযায়ী ভোটব্যাংক!