পুতিনের থেকে ১০ হাজার কোটির মিসাইল, আজ কাউন্সিলের বৈঠক
বর্তমান | ২৩ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: রাজনৈতিক সভা সমাবেশে জওহরলাল নেহরু এবং ইন্দিরা গান্ধীকে যতই সমালোচনা করুন নরেন্দ্র মোদি, ভারতের বিদেশনীতি তাঁদের প্রদর্শিত পথেই চলতে বদ্ধপরিকর। অর্থাৎ আমেরিকা নয়, রাশিয়াকেই প্রকৃত বন্ধু হিসেবে বিবেচনা করা। সেকারণে ডোনাল্ড ট্রাম্প যতই হুঁশিয়ারি দিন, রাশিয়ার সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা থেকে বিরত হচ্ছে না ভারত। আজ, বৃহস্পতিবার দিল্লিতে হবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের ডিফেন্স অ্যাকুইজিশন কাউন্সিলের বৈঠক। আর সেখানে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশের সঙ্গে নতুন করে ১০ হাজার কোটি টাকার মিসাইল চুক্তির প্রস্তাবে অনুমোদন দেওয়া হবে বলে খবর। রাশিয়া থেকে যে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম ক্রয় করেছে ভারত, তাতে ব্যবহার করার জন্য কেনা হবে ওই সুপারসনিক ক্রুজ মিসাইলগুলি। আবার একইসঙ্গে আরও নতুন এস-৪০০ কেনা এবং ভারতে উৎপাদন সংক্রান্ত প্রোপোজাল পেপার নিয়ে আলোচনা করা হবে। অপারেশন সিন্দুর এবং তৎপরবর্তী যুদ্ধের সময় রাশিয়ার এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম এবং ভারতের অগ্নি একযোগে সবথেকে কার্যকরী ভূমিকা পালন করেছে। তাই মস্কো থেকে আরও বেশি করে মিসাইল ক্রয় করা হবে, যা এস ফোর হান্ড্রেড থেকে নিক্ষেপ করা যায়।
২০১৪ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর মোদির আমেরিকা প্রীতি ছিল প্রকট। কখনও ‘বারাক মাই ফ্রেন্ড’, কখনও ‘মাই ফ্রেন্ড ডোনাল্ড’ সম্বোধন করেছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে নির্বাচনী প্রচার পর্যন্ত করেছেন। আমেরিকায় গিয়ে স্লোগান দিয়েছেন, ‘আব কি বার, ট্রাম্প সরকার’! কিন্তু তারপরই রাশিয়ার ক্ষোভ স্পষ্ট হয়। সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করা হয়েছিল ভারতের বিদেশনীতি। ক্রমে রাশিয়াকেই যথারীতি ভারতের সবথেকে বেশি অস্ত্র ক্রয়ের দেশ হিসেবে গণ্য করেছে দিল্লি। ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়া থেকে সস্তা তেল ক্রয় করে সেই সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করা হয়েছে। অস্ত্র এবং জ্বালানি পাল্লা দিয়ে আমদানি হচ্ছে পুতিনের দেশ থেকে। পক্ষান্তরে ভারত থেকে ওষুধ, রাসায়নিক, ইলেকট্রিকাল উপকরণ, কৃষিজাত পণ্য এবং সমুদ্রজাত পণ্য আমদানি বাড়াচ্ছে মস্কো।
২০১৮ সালে পাঁচটি এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম আমদানি করার জন্য রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি করেছিল ভারত। তিনটি ডেলিভারি হয়ে গিয়েছে। আরও দু’টি আসছে। সেই সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। এস-৪০০ ট্রায়াম্ফ ডিফেন্স সিস্টেমকে ভারতীয় সামরিক বাহিনী নাম দিয়েছে ‘সুদর্শন চক্র’। এয়ারক্র্যাফ্ট, ড্রোন, ব্যালিস্টিক মিসাইলের আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম এই সুদর্শন চক্র। পাশাপাশি ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে হিন্দুস্তান এরোনটিকাল লিমিটেডে রুশ মিগ-২৯ ফাইটার জেটের আরডি ৩৩ এমকে ইঞ্জিন তৈরিও শীঘ্র শুরু হতে চলেছে। সুতরাং ট্রাম্পকে ভারতের স্পষ্ট ইঙ্গিত, রাশিয়ার সঙ্গে মিত্রতা নষ্ট করে আমেরিকার বন্ধুত্ব তার দরকার নেই। আমেরিকার ভারতকে প্রয়োজন নিজের স্বার্থে!