ট্রাম্পের ফোন মোদিকে, তেল সমঝোতায় আসছে শুল্ক-স্বস্তি! দুই শক্তিধরের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে মরিয়া ভারত
বর্তমান | ২৩ অক্টোবর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: মঙ্গলবার তিনি বলেছিলেন, ‘নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং আমাকে বলেছেন রাশিয়া থেকে তেল ক্রয় বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদি সেটা না করা হয়, তাহলে কিন্তু আরও চড়া শুল্ক চাপাব ভারতের উপরে।’ এর কোনও জবাব দেয়নি নয়াদিল্লি। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই অবস্থান থেকে সরে এলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বুধবার সকালে নিজেই মোদিকে ফোন করে দীপাবলির শুভেচ্ছা জানান। এবং পরে নিজেই বলেন, ‘মোদির সঙ্গে বাণিজ্য নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। মোদি আমাকে বলেছেন, রাশিয়ার থেকে তেল একটু কম কিনবে ভারত।’ অর্থাৎ, এদিন তিনি আর বললেন না যে, রাশিয়া থেকে তেল কেনা একেবারেই বন্ধ করে দেবে ভারত! এই ফোন কূটনীতির মধ্যেই শোনা যাচ্ছে, ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি প্রায় নাকি চূড়ান্ত। আর সেই চুক্তির অন্যতম ফলশ্রুতি হতে চলেছে, আমেরিকায় রপ্তানিকৃত ভারতীয় পণ্যের উপর ট্রাম্পের জারি করা ৫০ শতাংশ শুল্ক কমে যাওয়া। সরকারি সূত্রের খবর, মার্কিন শুল্ক নাকি ১৫-২০ শতাংশে নেমে যেতে পারে। যদি এই জল্পনা সত্যি হয়, তাহলে বিষয়টিকে ভারতের জয়ই বলা যেতে পারে। কারণ, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ও মিত্রতা বন্ধ করার বিনিময়ে আমেরিকার সঙ্গে চুক্তি যে হচ্ছে না, সেটা স্পষ্ট।
একে বলা যেতে পারে বাণিজ্য-কূটনীতি! ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রমাণ করার দরকার যে, কোনও একটি রাষ্ট্র অবাধে রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য অথবা সামরিক, সবরকম মৈত্রী সম্পর্ক রেখে যাবে আর সেই রাষ্ট্রের সঙ্গে তিনি দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি করবেন, এরকম হবে না। অথচ ১৪০ কোটি জনসংখ্যার বাজার অর্থনীতি, আমেরিকার যাবতীয় কর্পোরেশনের সবথেকে লাভজনক গন্তব্য এবং বৃহত্তম গণতন্ত্র, এই আদর্শ কম্বিনেশনের ভারতকে শত্রু করে তোলার নির্বুদ্ধিতাও দেখাতে পারবেন না। সুতরাং প্রথমে তিনি আন্তর্জাতিক মহলকে বার্তা দিতে ভারতের উপর সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক বলবৎ করলেন। এবং লাগাতার নয়াদিল্লিকে চাপে রেখে শর্ত দিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বন্ধ করতে হবে। কিন্তু ব্ল্যাকমেল এবং নার্ভের এই লড়াইতে ব্যাপক সংযম দেখিয়েছে ভারত। একবারও আমেরিকাকে সরাসরি আক্রমণ করা হয়নি। আবার ওয়াশিংটনের শঙ্কা বাড়িয়ে চীন-রাশিয়ার সঙ্গে জোট বাঁধার বার্তাও দেওয়া হয়েছে। মস্কোর সঙ্গে সম্পর্ক যে নষ্ট করা হবে না, সেই অবস্থানও স্পষ্ট জানানো হয়েছে। তাই অবশেষে ট্রাম্প কিছুটা হলেও সুর নরম করে মুখরক্ষার ফর্মুলা খুঁজতে বাধ্য হলেন। তবে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করা যাবে না, সেই খোঁচা প্রচ্ছন্নভাবে ছিল তাঁর গলায়।
মোদির সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপের ২৪ ঘণ্টা পর, আজ বৃহস্পতিবার দিল্লিতে রাশিয়া থেকে একঝাঁক সামরিক উপকরণ ক্রয় এবং ভারত-রাশিয়া যৌথ উদ্যোগে উৎপাদনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন হবে। সুতরাং দিল্লি-মস্কো বন্ধুত্ব অটুটই থাকছে। আবার আমেরিকাও বাধ্য হল ভারতকে পাশে পেতে। দায় যে ট্রাম্পেরই ছিল, সেটা ক্ষুদ্র এক বিবৃতিতে বুঝিয়েও দিয়েছেন মোদি। এও উল্লেখ করতে ভোলেননি যে, তিনি নয়, ফোন করেছিলেন ট্রাম্প নিজে। পক্ষান্তরে ওভাল অফিসে বসে ট্রাম্প বলেছেন, ‘মোদি ইজ আ গ্রেট পার্সন...অনেক বছর ধরে আমার প্রিয় বন্ধু....আমরা বাণিজ্য নিয়ে অনেক কিছু চর্চা করলাম।’ এমনকী ভারতীয় অধ্যাত্মদর্শনও শুনিয়ে বললেন, ‘প্রদীপ জ্বালানোর এই উৎসবের এক উদ্দেশ্য আছে। অন্ধকার থেকে আলো, অজ্ঞানতা থেকে চৈতন্যে উপনীত হওয়ার প্রতীক হল দীপাবলি।’ ভারতকে লাগাতার আক্রমণ করে যাওয়া ট্রাম্পের কি তাহলে দীপাবলির আবহে চৈতন্য হল? নাকি বহুজাতিক কর্পোরেটদের চাপ যে, ভারতের হাত ছাড়লে সর্বনাশ হবে আমাদের?