• চুরির আগে মদ-মাংস-গাঁজা দিয়ে পার্টি মহেশতলায়, ডাক্তারের ফাঁকা বাড়ি থেকে লোপাট টিভি, গয়না, সিলিন্ডার, ৩ আত্মীয় সহ ধৃত ৬
    বর্তমান | ২৩ অক্টোবর ২০২৫
  • শুভ্র চট্টোপাধ্যায়, কলকাতা: মহেশতলার বাসিন্দা ডাঃ শুভশ্রী ঘোষ পুজোর ছুটি কাটাতে বিশাখাপত্তনমে গিয়েছিলেন পরিবার নিয়ে। তাঁরা রওনা হয়েছিলেন ২৮ সেপ্টেম্বর। ৬ অক্টোবর বাড়ি ফেরার পর তাঁদের চক্ষু চড়কগাছ। দেখেন জানালার কাচ ভাঙা। দরজার তালাটিও কেউ ভেঙে রেখে দিয়েছে। ভিতরের অবস্থা তথৈবচ। লণ্ডভণ্ড গোটা বাড়ি। বিছানায় পড়ে রয়েছে মদের বোতল। আলমারি থাকা অলংকার সবই নিয়ে গিয়েছে চোরের দল। শুধু ৪০ গ্রাম ওজনের গয়নাই নয়, খোয়া গিয়েছে দু’টি বড় এলইডি টিভি, রান্নার গ্যাসের দু’টি সিলিন্ডার, ওভেন, তিনটি ল্যাপটপ, নগদ টাকা। সব মিলিয়ে দশ থেকে বারো লক্ষ টাকার সামগ্রী নিয়ে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। এরপরই মহেশতলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে পরিবার। তবে শেষরক্ষা হয়নি। মহেশতলা থানার হাতে ধরা পড়েছে চুরির ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ দুষ্কৃতী। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে চুরি যাওয়া সামগ্রীর একাংশ।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর সময় মহেশতলায় কোন বাড়ি ফাঁকা, তা আগে থেকেই রেকি করে দেখে নিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। তারা মূলত ফাঁকা বাড়িকেই টার্গেট করত। এই ডাক্তারের বাড়িতে চুরি করতে যাওয়ার সময় মদের বোতল, মাংস আর গাঁজা সঙ্গে করেই নিয়ে গিয়েছিল। ঠিকই করে রেখেছিল, চুরির আগে জমিয়ে পার্টি করবে তারা। রাত দেড়টা নাগাদ তালা ও জানালার কাচ ভেঙে বাড়িতে ঢোকার পর ঘরের আলো জ্বালিয়ে তারা সোজা চলে যায় বেডরুমে। বিছানাতেই বসে মদের আসর। মাংসের পাশাপাশি চিপস ও কিছু ভাজাভুজিও সঙ্গে নিয়ে এসেছিল তারা। ঘণ্টাখানেক পার্টি চলার পর মনের সুখে চলে জিনিস হাতানো। সব জিনিসই আলাদা আলাদা করে প্যাকিং করার পর ভোর সাড়ে চারটে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে সঙ্গে আনা ভ্যানে তোলে তারা। তারপর ত্রিপল দিয়ে ঢেকে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।

    চুরির ঘটনার তদন্তে নেমে বাড়ি ও এলাকার সিসি ক্যামেরার ছবি সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা। তখনই ধরা পড়ে চুরির সামগ্রী ভ্যানে তুলে নিয়ে যাচ্ছে দু’জন। বাকি তিনজন ছিল পিছনে। ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্তকারী অফিসাররা বুঝতে পারেন, সেলিম, অজয় সিং ও জয় সিংয়ের গ্যাং এতে জড়িত। তাদের খোঁজ করতে গিয়ে তদন্তকারী অফিসার রীতেশ সিং জানতে পারেন, তারা মহেশতলা এলাকাতেই ঘর ভাড়া নিয়ে রয়েছে। কয়েকদিন আগে সেখানে তল্লাশি চালিয়ে দু’জনকে ধরা হয়। বাকি তিনজনকে পাকড়াও করা হয় হাওড়ার সন্ধ্যাবাজার এলাকা থেকে।

    ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, তারা কোথাও বেশিদিন থাকে না। বিভিন্ন এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে বড়জোর দু’-তিন মাস থাকে। ওই সময় ঘুরে ঘুরে দেখে নেয় কোন বাড়ি তালাবন্ধ। এরপর সেখানে হানা দেয়। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই ফাঁকা বাড়িতে চুরির আগে মদ-মাংস খেয়ে পার্টি করে তারা। মোচ্ছবের পর জিনিস হাতানোর কাজ শুরু করে। এক জায়গায় অপারেশন করার পর ওই এলাকা ছেড়ে অন্য জায়গায় গিয়ে ঘরভাড়া নেয়। তারা মহেশতলায় বাড়ি ভাড়া গিয়েছিল মাসখানেক আগেই। মহেশতলার পাশাপাশি বজবজ এলাকায় একাধিক ফাঁকা বাড়িতেও তারা পুজোর সময় চুরি করেছে বলে জানা গিয়েছে। চুরির সামগ্রী কম দামে কোন কোন দোকানে বিক্রি করত, কারা সেসব জিনিস কিনত, ধৃতদের জেরা করে তা জানার চেষ্টা করছেন তদন্তকারীরা।
  • Link to this news (বর্তমান)