• এসআইআরের কাজে অনীহা! নির্বাচন কমিশনের শো-কজ রাজ্যের হাজার বিএলওকে
    বর্তমান | ২৩ অক্টোবর ২০২৫
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ভোটার তালিকার স্পেশাল ইন্টেনসিভ রিভিশনের বিজ্ঞপ্তি জারির আগেই রাজ্যে হাজারেরও বেশি বুথ লেভেল অফিসারকে (বিএলও) শো-কজ নোটিশ পাঠাল নির্বাচন কমিশন। এসআইআরের কাজে তাদের অনীহা কেন? ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওই বিএলওদের কারণ দর্শানোর নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। 

    এসআইআরের কাজে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কাজ বিএলওদের। ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ থেকে শুরু করে ভোটার যাচাইয়ের প্রাথমিক কাজ—সবটাই তাদের। কিন্তু জানা গিয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে কালীপুজোর আগে পর্যন্ত রাজ্যে প্রায় ৬০০’র বেশি বুথ লেভেল অফিসার কাজে যোগ দিতে অস্বীকার করেছেন। অর্থাৎ, বিএলও হিসেবে ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার বা ইআরও’র দেওয়া চিঠি তারা গ্রহণই করেননি। আবার প্রায় ৪০০’র বেশি বিএলও চিঠি গ্রহণ করার পর প্রশিক্ষণ পর্বে যোগ দেননি। সেই কারণে জেলা নির্বাচনী আধিকারিক তথা ডিইও এবং ইআরওরা ওই অফিসারদের চিঠি পাঠিয়ে জানতে চেয়েছেন, কেন তাঁরা নিয়োগপত্র গ্রহণ করছেন না? কেন তাঁরা নিয়োগ চান না? কেনই বা নিয়োগপত্র গ্রহণের পরও প্রশিক্ষণ পর্বে যোগ দিচ্ছেন না বিএলওরা? ৭২ ঘণ্টার মধ্যে এর জবাব দিতে হবে শো-কজের চিঠি পাওয়া বিএলওদের। 

    এবার নির্বাচন কমিশনের স্পষ্ট নির্দেশিকা ছিল, বিএলও হিসেবে কোনও অস্থায়ী কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। সেইমতো এপ্রিলের গোড়া থেকে স্থায়ী কর্মীদের বিএলও হিসেবে নিয়োগপত্র পাঠাতে শুরু করে কমিশন। মূলত শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরই এই কাজে নিয়োগ করা হয়ে থাকে। তখন থেকেই একাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকার বিএলও হিসেবে কাজে অনীহার খবর আসতে থাকে কমিশনের কাছে। তাই স্কুল শিক্ষাদপ্তরের সচিব বিনোদ কুমারকে চিঠিও পাঠিয়েছিল রাজ্য মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দপ্তর। ১৯৫০ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইন অনুযায়ী, কমিশন ভোট বা ভোটার তালিকা সংক্রান্ত কাজে স্থায়ী কর্মীদের ডেপুটেশনে নিয়োগ করে থাকে। কমিশনের তরফে নির্দেশিকা এলে স্থায়ী সরকারি কর্মীরা তা গ্রহণ করতে একরকম বাধ্য। সুপ্রিম কোর্টও এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের পক্ষেই রায় দিয়েছে। সেই রায় অনুসরণ করে কিছুদিন আগে বেশ কয়েকজন বিএলওর দায়ের করা মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, স্কুলে পড়াশোনার ক্ষতি না করে কমিশন যদি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিএলও হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে থাকে, তাঁরা ওই কাজ করতে বাধ্য। সূত্রের খবর, শো-কাজের চিঠি পাওয়া বিএলওদের উত্তরে সন্তুষ্ট না হলে এবার তাঁদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের উপযুক্ত ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে কমিশন। অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা কিন্তু এখনও বলছেন, শিক্ষকতা করে বিএলওর কাজ সামলানো সম্ভব নয়। 

    এরই মধ্যে সব রাজ্যের এসআইআর প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বুধবার দিল্লিতে সব রাজ্যের সিইওদের নিয়ে দু’দিন ব্যাপী বৈঠকে বসেছে কমিশন। জানা যাচ্ছে, কবে থেকে রাজ্যে রাজ্যে এসআইআর শুরু হবে, তার রোডম্যাপ এই বৈঠকেই তৈরি করে দেবে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারের ফুল বেঞ্চ। তবে রাজ্যে রাজ্যে ভোটার তালিকার ম্যাপিংই ছিল এদিনের বৈঠকের মূল বিষয়বস্তু।
  • Link to this news (বর্তমান)