‘অন্নং ব্রহ্মেতি ব্যজানাৎ’! উপনিষদে উদ্ধৃত ‘অন্নই ব্রহ্ম ইহা জানিলেন’ শব্দবন্ধ খোদাই হয়েছে কলেজ-বাড়ির গায়ে। পুরুলিয়ার অখ্যাত বোঙাবাড়ি গ্রামে রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠের উল্টোদিকে সেই কলেজপ্রাঙ্গণে শুরু হচ্ছে একটি নতুন অধ্যায়। রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষার ঐতিহ্য, আদর্শে যা অনেকেই বৃহত্তর সর্বজনীন আবেদন বলে দেখছেন।
পুরুলিয়ার এই রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যাপীঠ কৃষি মহাবিদ্যালয়ের হাত ধরে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহশিক্ষার প্রবর্তন ঘটতে চলেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গিয়েছে। এত দিন অরুণাচল প্রদেশ, ছত্তীসগঢ়ে জনজাতি প্রধান কিছু এলাকায় মিশনের স্কুলে ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্রীদের দেখা যেত। কিন্তু একটি পূর্ণাঙ্গ কলেজে এই প্রথম সহশিক্ষার পথে হাঁটছেন মিশন কর্তৃপক্ষ। রামকৃষ্ণ মিশনের হাত ধরে এই প্রথম একটি কৃষি কলেজের প্রতিষ্ঠা ঘটছে। নদিয়ার বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত প্রথম কলেজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ পুরুলিয়ার কলেজটির। গত ১৬ অক্টোবর ক্লাস শুরুর পরে আগামী শনিবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। আসবেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ। নতুন কলেজ তথা পুরুলিয়া বিদ্যাপীঠের আশ্রমের সম্পাদক স্বামী শিবপ্রদানন্দ বলছিলেন, “৫০ বছর আগে বিদ্যাপীঠের মন্দির উদ্বোধনে এসে মঠের তখনকার প্রেসিডেন্ট মহারাজ স্বামী বীরেশ্বরানন্দজী স্থানীয় তরুণদের শিক্ষায় জোর দেন। সেটা মাথায় রেখে আমরা কলেজে জঙ্গলমহলের গ্রামের ছেলেমেয়েদের শিক্ষায় জোর দিচ্ছি। সহশিক্ষা চালুর বিষয়টিতে সায় দিয়েছেন বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষ।” তাঁর কথায়, “এই কৃষিশিক্ষা সর্বত্র স্থানীয় আবহাওয়া, ভূপ্রকৃতি বুঝে দূষণ এড়িয়ে ফসলের বৈচিত্র্য মেলে ধরবে এটাই আমাদের চেষ্টা। ছাত্রছাত্রীরা স্বনির্ভর হবেন, এটাও লক্ষ্য।”
চার বছরের স্নাতক কোর্সে এক এক বর্ষে ৬০ জনের পড়ার সংস্থান রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে কাছের, দূরের জেলার ৩৯ জন ছাত্রছাত্রী ভর্তি হয়েছেন। উৎসাহে একটু এগিয়ে ছাত্রীরাই। কলেজের অধ্যক্ষ প্রবীণ কৃষিবিজ্ঞানী সঞ্জীবকুমার ভট্টাচার্য। প্রয়াত ভাস্কর্য শিল্পী সুনীলকুমারের পালের শিষ্য সুনীলচন্দ্র পালের গড়ে তোলা কলেজবাড়িটির নাম কমলা মন্দির। কলেজ-বাড়িতেও স্বামী বিবেকানন্দের কৃষিভাবনার উদ্ভাস। স্বামী শিবপ্রদানন্দ বলছেন, “স্বামী বিবেকানন্দ বার বারই বিজ্ঞানসম্মত কৃষি ভাবনার কথা বলে গিয়েছেন। কলেজের শিক্ষাক্রমে সবুজ বিপ্লবের নানা ভুল শুধরনোর দিকগুলিও ভাবা হয়েছে।” নতুন কলেজটির তরফে সরকারি সাহায্যের জন্যও আবেদন করা হচ্ছে। কলেজ উদ্বোধন ও কৃষিমেলা উপলক্ষে রাজ্যেরপঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার, মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ পুরুলিয়া যাচ্ছেন।