এসআইআর নিয়ে উদ্বাস্তু-চাপে বিজেপি, সামাল দিতে সিএএ শিবির
আনন্দবাজার | ২৩ অক্টোবর ২০২৫
বঙ্গে ভোটার তালিকার আমূল সংশোধন (এসআইআর) না-হলে এই রাজ্যে নির্বাচন হতে দেবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন বিজেপি নেতারা। পদ্ম শিবির থেকে এসআইআর নিয়ে প্রতিদিনই নানা হুমকি-হুঁশিয়ারি শোনা যাচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী এবং রোহিঙ্গাদের বাদ দিতেই এই সংশোধন। কিন্তু উপযুক্ত নথি না-থাকায় বাদ পড়ার আশঙ্কায় রয়েছেন হিন্দু উদ্বাস্তুদের একাংশও। যা গত তিনটি নির্বাচনে ছিল বিজেপির ভোট-ব্যাঙ্ক। যা নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে বিজেপি নেতাদের।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনকে (সিএএ) হাতিয়ার করে আপাতত এসআইআর-এ সম্ভাব্য ‘ক্ষতি’ এড়াতে চাইছে বিজেপি। মতুয়া, নমঃশূদ্র অংশ এখন বিজেপির বড় ভোট-ব্যাঙ্ক। ওই অংশের মানুষের অনেকেই অতীতে বাংলাদেশ থেকে এসেছেন। ইতিমধ্যে দলের হরিণঘাটার বিধায়ক অসীম সরকার মতুয়াদের নাম বাদ যাওয়ার ‘আশঙ্কা’য় বিভিন্ন মন্তব্য করে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন। এই আবহে বুধবার দলের বিধাননগর কার্যালয়ে সিএএ বিষয়ক বিশেষ কর্মশালা করেছে বিজেপি। সেখানে ছিলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বি এল সন্তোষ, সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনসল প্রমুখ। সূত্রের খবর, বৈঠকে সিএএ দিয়ে এসআইআর-এর সম্ভাব্য বিপদ মোকাবিলার রণকৌশল সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে প্রতিটি মণ্ডলে আগামী ৩০ অক্টোবরের মধ্যে অন্তত তিনটি করে সিএএ সহায়তা শিবির খোলার কথা বলা হয়েছে। নেতৃত্বের তরফে জানানো হয়েছে, সিএএ আবেদন করা থাকলে কারও নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে না। নির্বাচন কমিশনের তরফে আবেদনকারীদের অতিরিক্ত সময় দেওয়া হবে। সেই সময়ের মধ্যে শংসাপত্র জমা দিলে তাঁর নাম ভোটার তালিকায় ফের উঠে যাবে।
রাজ্য বিজেপির এক নেতার বক্তব্য, “কারও নাম বাদ গেলে তাঁর বাড়িতে কমিশনের লোক যাবেন। তখন যদি তাঁরা সিএএ-র আবেদনপত্র দেখান, তা হলে তাঁদের নাম ফের উঠে যাবে।’’ অন্য এক নেতার দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো বলেছিলেন, সবাই নাগরিক। সিএএ-এর কোনও দরকার নেই। কিন্তু ওই দিকে চাপ পড়লে এই দিকে আগ্রহ বাড়বে। এসআইআর-এ নাম বাদ পড়লে মানুষ দলে দলে সিএএ-তে নাগরিকত্বের আবেদন করবেন। যে হিন্দু উদ্বাস্তু ধর্মীয় কারণে পড়শি দেশগুলি থেকে ভারতে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দিতেই সিএএ।”
তবে এসআইআর আবহে সম্ভাব্য ‘আশঙ্কা’ থেকে নিজেদের ভোট-ব্যাঙ্ককে ‘আশ্বস্ত’ করতে বিজেপির শীর্ষ নেতারা মরিয়া। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বারবার বলেছেন, “এক জন হিন্দু ভোটারের নাম বাদ পড়বে না। এক জন ভারতীয় মুসলমানের নামও বাদ পড়বে না। হিন্দুদের নিশ্চয়তা (গ্যারান্টি) আমি। কারও নাম বাদ গেলে তাঁরা সরাসরি আমাকে যোগাযোগ করবেন, আমি আপনাদের নাম তোলার ব্যবস্থা করে দেব!” কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী সুকান্ত মজুমদারও এ দিন রায়গঞ্জের সাংসদ, অসুস্থ কার্তিকচন্দ্র পালের বাড়িতে গিয়ে দেখা করে বেরিয়ে দাবি করেছেন, ‘‘এসআইআর-এ বিভ্রান্তির কোনও কারণ নেই। যদিও তা করার চেষ্টা করছে তৃণমূল। যাঁরা ভারতীয় নাগরিক, তাঁদের নাম ভোটার তালিকায় থাকবে। বাংলাদেশ থেকে যে সমস্ত উদ্বাস্তু এসেছেন, অত্যাচারিত হয়ে ও’পার থেকে যে হিন্দুরা এসেছেন, তাঁদের সিএএ-তে আবেদন করতে হবে। সিএএ-র আবেদনের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পেলে তাঁদের নামও এসআইআর-এ উঠে যাবে।’’
কিন্তু বিজেপি শিবিরের মধ্যেই একাংশের আশঙ্কা, এখানে ভোটার তালিকায় নাম থাকলেও মতুয়া, নমঃশূদ্রদের অনেকে এখনও নাগরিকত্ব পাননি। ভোটার তালিকার জন্য কমিশন এর মধ্যে নাগরিকত্ব যাচাইও করেনি। যা এসআইআর-এ হবে। এবং সেই কারণেই আশঙ্কায় আছেন ওই অংশের মানুষ। এই প্রেক্ষিতেই কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘‘মৃত বা ভুয়ো ভোটারের নাম বাদ দেওয়া কমিশনের কাজ। নাগরিকত্ব যাচাই করা কিন্তু কমিশনের এক্তিয়ারে পড়ে না। অথচ বিজেপি সরকারের আমলে কমিশন সেটাই করতে চাইছে।’’ যদিও বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, “বিজেপি ক্ষমতায় থাকতে বাংলাদেশ থেকে আগত এক জন হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিস্টানের নামও তালিকা থেকে বাদ যাবে না। মৃত ভোটার, জাল ভোটার, অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গাদের নাম বাদ যাবে। চার জায়গায় একই নাম উঠে আছে, সেটা এক জায়গায় থাকবে। এই নিয়ে কোনও মানুষের কোনও আশঙ্কা কিংবা ভাবনা নেই।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘ঠিকঠাক এসআইআর হলে বাংলায় এক কোটির বেশি নাম বাদ যাবে।”