• উকিল বাবদ রাজ্যের ব্যয় ৬৫ কোটি
    আনন্দবাজার | ২৩ অক্টোবর ২০২৫
  • পাঁচ বছরে রাজ্য সরকারের আদালতে বিভিন্ন মামলা লড়ার জন্য শুধু উকিলদের ফি বাবদ খরচ হয়েছে ৬৫.৪৭ কোটি টাকা। তথ্যের অধিকার আইনে আরটিআই কর্মী অমিতাভ চৌধুরী রাজ্য সরকারের আইন দফতরে এই নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। সেখান থেকে তিনি যে তথ্য পান, তাতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৯-২০ থেকে ২০২৩-২৪, এই পাঁচ অর্থবর্ষ মিলিয়ে রাজ্য সরকার এ টাকা খরচ করেছে।

    তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিভিন্ন মামলায় জেরবার রাজ্য সরকার। বিশেষ করে গত পাঁচ-ছ’বছরে এই মামলার সংখ্যা বেড়েছে। নিয়োগ দুর্নীতি থেকে ডিএ, আর জি কর থেকে ভোট পরবর্তী হিংসা, বহু ক্ষেত্রেই বিরোধীরা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অথবা সিবিআই তদন্ত চেয়ে। এবং বহু ক্ষেত্রেই মামলা হাই কোর্টের পরে সুপ্রিম কোর্টে এসেছে। শুধু নিয়োগ দুর্নীতিতেই একাধিক মামলা হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। এই সব মামলা লড়ার ক্ষেত্রে রাজ্য নির্ভর করেছে দেশের একাধিক প্রথম সারির আইনজীবীর উপরে। অনেক সময়ই বিজেপি, সিপিএমের মতো বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছেন, এই সব আইনজীবীর পিছনে রাজ্যের মানুষের করের টাকা খরচ করছে সরকার। অমিতাভ চৌধুরী যে তথ্য রাজ্য আইন দফতর থেকে জেনেছেন, তাতে এই খরচের প্রসঙ্গটি আরও স্পষ্ট হয়েছে।

    এই তথ্য হাতে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ তথা প্রাক্তন আমলা জহর সরকার। রাজ্য সরকারের আইন দফতরের লিখিত তথ্য তিনিও দেখেছেন বলে জানিয়েছেন জহর। তাঁর কথায়, ‘‘পাঁচ বছরে উকিলের ফি বাবদ প্রায় সাড়ে ৬৫ কোটি টাকা খরচ করার কথা স্বীকার করেছে রাজ্য। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। সেটি যোগ করলে খরচ আনুমানিক ৭৫ থেকে ১০০ কোটি টাকা হবে বলেইআমার ধারণা।”

    জহরের দাবি, সুপ্রিম কোর্টে রাজ্যের হয়ে লড়ার জন্য ওই পাঁচ বছরে দুই প্রথিতযশা আইনজীবী পেয়েছেন ২২ কোটি আর ৭.৮ কোটি টাকা। অন্য দিকে, তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, “বিজেপি সরকার এক দিকে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করছে। আর রাজ্য সরকার পেশাদার নিয়োগ করে তাঁকে তাঁর নির্ধারিত পারিশ্রমিক দিয়েছে। এর মধ্যে কোনটা অন্যায়, মানুষই বলবেন।” তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, গুজরাত, মহারাষ্ট্র, উত্তরপ্রদেশ সরকার মামলা লড়তে কত টাকা খরচ করে, সেটাও দেখা হোক। কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোবে!

    রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, সুপ্রিম কোর্ট বা হাই কোর্টে ছোটখাটো ফৌজদারি মামলা হামেশাই লড়তে হয় যে কোনও রাজ্যকে। কিন্তু এটা ঘটনা, গত কয়েক বছর পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে ‘হাই প্রোফাইল’ মামলা ধারাবাহিক ভাবে লড়ে যেতে হচ্ছে। বড় বড় আইনজীবীকে দাঁড় করাতে হয়েছে। এই মামলাগুলির রাজনৈতিক দিকও রয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি, ডিএ, আর জি কর, উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে মামলার মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মামলা লড়ছে রাজ্য। এর মধ্যে উপাচার্য নিয়োগ মামলায় তো রাজ্যপালের উকিলের টাকাও সরকারি কোষাগার থেকেই যাচ্ছে। যে হিসাব জহর দিয়েছেন, তাতে ২০২১ সালে ভোট-পরবর্তী হিংসার সিবিআই তদন্ত নিয়ে মামলা, ওবিসি তালিকা সংরক্ষণ, আর জি কর মামলাও রয়েছে। কিন্তু আরটিআই-এর মাধ্যমে যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, তা ২০২৪-এর মার্চ পর্যন্ত। আর জি কর মামলা শুরুই হয় ওই বছরের অগস্টে। তার পর থেকে রাজ্যকে শীর্ষ কোর্টে সেই মামলা লড়তে হচ্ছে।

    জহরের বক্তব্য, “সরকারে কাজ করার সুবাদে আমি জানি, রাজ্য নিজের দায়িত্ব পালন করতে গেলে মামলায় অনেক টাকা ব্যয় হয়। তার মধ্যে অন্যায় কিছু নেই। কিন্তু এই অঙ্ক বিপুল। আর এটাও খেয়াল রাখতে হবে, কিসের জন্য সাধারণ মানুষের করের টাকায় এই মামলা লড়া হচ্ছে। এই মোটা অর্থের বিশাল অংশ খরচ হয়েছে শিক্ষক নিয়োগের দুর্নীতি ঢাকা দিতে আর রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতার টাকা পিছিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত মামলায়।”
  • Link to this news (আনন্দবাজার)