খুব দ্রুত দেশ জুড়ে ভোটার তালিকার বিশেষ আমূল সংশোধন (এসআইআর) করার ঘোষণা করতে চলেছে নির্বাচন কমিশন। গত সেপ্টেম্বরের পরে আজ ফের দিল্লিতে রাজ্যগুলির নির্বাচনী আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমার-সহ অন্য নির্বাচনী কর্তারা। রাজ্যগুলিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোমর বেঁধে প্রস্তুতি নিতে। কারণ, খুব দ্রুত (ভাইফোঁটার পর যে কোনও দিন) এসআইআর-এর ঘোষণা করতে চলেছে কমিশন। তবে সব রাজ্যে এক সঙ্গে তা না করে, প্রয়োজনে যে রাজ্যগুলিতে আগামী বছর ভোট রয়েছে, মূলত পশ্চিমবঙ্গ, অসমের মতো রাজ্যগুলিতে আগে এসআইআর-এর চিন্তাভাবনা রয়েছে কমিশনের অন্দরে। তবে ভোটার তালিকার সংশোধন করতে গিয়ে পুর-পঞ্চায়েত ভোটের কাজ যাতে থমকে না যায়, তা-ও মাথায় রাখছে কমিশন।
নির্বাচনী আধিকারিকদের ওই বৈঠক চলবে আগামিকাল পর্যন্ত। ইতিমধ্যেই বিহারে ভোটার তালিকা আমূল সংশোধনের কাজ শেষ। কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, পুরনো তালিকার ভিত্তিতে ভোটারদের ম্যাপিং-এর কাজ কতটা এগিয়েছে, তা নিয়ে রাজ্য ধরে ধরে আলোচনা হয়েছে। প্রতিটি রাজ্যে বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও), বুথ লেভেল এজেন্ট (বিএলএ), জেলা ইলেকশন অফিসার (ডিইও)-দের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণের কাজ কতটা এগিয়েছে তা নিয়েও রাজ্যভিত্তিক আলোচনা হয়েছে।
আজ কমিশন জানিয়েছে, দেশ জুড়ে ভোটার তালিকা সংশোধনের ঘোষণার সাত দিনের মধ্যে বিএলওদের চূড়ান্ত প্রশিক্ষণ সেরে ফেলতে হবে। সূত্রের মতে, আজকের বৈঠকে জানানো হয়েছে, তালিকা সংশোধনের কাজ ঘোষণার ৩০ দিনের মধ্যে বিএলও-দের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে ‘এনুমারেশন’ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ সেরে ফেলতে হবে। ভোটার তালিকা সংশোধনের সময়ে ম্যাপিংয়ে যাঁদের মিল থাকবে না, তাঁদের নোটিস দিয়ে নথি চাইবে কমিশন। যে নথি যাচাইয়ের দায়িত্বে থাকবেন ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (ইআরও) এবং অ্যাসিস্ট্যান্ট ইলেকটোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসার (এইআরও)। কোনও ব্যক্তির নাম শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত তালিকায় থাকবে কি না সেই সিদ্ধান্ত নেবেন ইআরও এবং এইআরও।
কী ভাবে ভোটার তালিকার সংশোধন হবে, সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে রাজ্য পর্যায়ে সর্বদল বৈঠক ডাকতে হবে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে। আজ রাজ্য কমিশনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়েছে, মোটের উপরে ২০০২ সালের নথির ভিত্তিতে রাজ্যে ম্যাপিং-এর কাজ প্রায় শেষ। পশ্চিমবঙ্গে দু’দশক আগের তালিকা ও সর্বশেষ ভোটার তালিকার মিল প্রায় ৫৫%। বাকিদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় নথি নোটিসের মাধ্যমে চেয়ে পাঠিয়ে তা যাচাই করে দেখা হবে।
সূত্রের মতে, আজকের বৈঠকে সব রাজ্যে এক সঙ্গে ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ না করে বরং ধাপে ধাপে করার একটি প্রস্তাব এসেছে। আগামী বছরে পশ্চিমবঙ্গ, অসম, তামিলনাড়ু, পুদুচেরি ও কেরলের মতো পাঁচটি রাজ্যে ভোট। সূত্রের মতে, ওই পাঁচটি এবং তার সঙ্গে আরও কিছু ছোট রাজ্যে প্রথম দফায় ভোটার তালিকার আমূল সংশোধন সেরে ফেলার কথা ভাবা হয়েছে। যে রাজ্যগুলিতে ২০২৭ সালে নির্বাচন হবে পরবর্তী ধাপে সেগুলির ভোটার তালিকা সংশোধন করার কথা ভাবা হয়েছে। তবে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি কমিশন।
চলতি বছরেই গুজরাতে পুর ও পঞ্চায়েত ভোট রয়েছে। যে ভোটের দায়িত্বে রয়েছে সেই রাজ্যের নির্বাচন কমিশন। এসআইআর করতে গিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে যে ভোটগুলি হয় (পুর ভোট, পঞ্চায়েত ভোট), সেগুলির তালিকা সংশোধনের কাজ যাতে থমকে না যায়, তা কমিশনকে মাথায় রাখার জন্য অনুরোধ করেছে একাধিক রাজ্য।