স্কুল সার্ভিস কমিশনের নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের ইন্টারভিউ এ বার আঞ্চলিক ভিত্তিতে হতে চলেছে। বুধবার শিক্ষা দফতর সূত্রে এমনটাই জানা গিয়েছে। অধিকাংশ চাকরিপ্রার্থীরই অবশ্য দাবি, এই ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া কেন্দ্রীয় ভাবে করতে হবে। যদিও শিক্ষা দফতরের যুক্তি, ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে গেলে আঞ্চলিক ভাবে ইন্টারভিউ নেওয়া ছাড়া উপায় নেই।
পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজের সুবিধার জন্য এসএসসি-র পাঁচটি অঞ্চল রয়েছে। সেগুলি হল উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমাঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল। ২০১৬ সালে শেষ বারের এসএসসি-তে অঞ্চলভিত্তিক ইন্টারভিউ হয়েছিল। অবশ্য সম্প্রতি উচ্চ প্রাথমিকের যে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া চলছে, তা কিন্তু আর অঞ্চলভিত্তিক নেই।
উচ্চ প্রাথমিকের ইন্টারভিউ কেন্দ্রীয় ভাবেই সল্টলেকে এসএসসি-র প্রধান কার্যালয়ে হচ্ছে। এমনকি, প্রাথমিকে নিয়োগের ইন্টারভিউও এখন অঞ্চলভিত্তিকের বদলে কেন্দ্রীয় ভাবে হচ্ছে। চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের প্রশ্ন, উচ্চ প্রাথমিকের ইন্টারভিউ যদি কেন্দ্রীয় ভাবে হতে পারে, তা হলে নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশের ইন্টারভিউ কেন কেন্দ্রীয় ভাবে হবে না?
কেন কেন্দ্রীয় ভাবে ইন্টারভিউ চাইছেন চাকরিপ্রার্থীরা? তাঁদের একাংশের মতে, অঞ্চলভিত্তিক ইন্টারভিউয়ে অনেক সময়ে অঞ্চল অনুযায়ী নম্বরের তারতম্য হয়ে যায়। কোনও কোনও অঞ্চলে নম্বর বেশি ওঠে। কোনও কোনও অঞ্চলে নম্বর তুলনামূলক ভাবে কম হয়। এমন অভিযোগ আগেও উঠেছে। তা ছাড়া, অঞ্চলভিত্তিক ইন্টারভিউয়ে স্বচ্ছতার অভাব থাকে বলেও অনেক চাকরিপ্রার্থীর অভিযোগ।
নবম-দশমের এক চাকরিপ্রার্থী বলেন, ‘‘ইন্টারভিউয়ে ১০ নম্বর থাকছে প্রশ্নোত্তর-পর্বে। কী ভাবে ক্লাসে পড়াব, তার জন্যও থাকছে ১০ নম্বর। নিয়োগের ক্ষেত্রে এই ২০ নম্বর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই ইন্টারভিউ স্বচ্ছ ভাবে হোক। তাই ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শেষ হতে সময় লাগলেও কেন্দ্রীয় ভাবেই করা হোক।’’
যদিও শিক্ষা দফতরের যুক্তি, কেন্দ্রীয় ভাবে ইন্টারভিউ নিতে কয়েক মাস সময় লেগে যেতে পারে। এ বার এসএসসিতে নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ মিলিয়ে শূন্য পদের সংখ্যা ৩৫৭২৬। ইন্টারভিউয়ে ১০০টি শূন্য পদের জন্য ১৬০ জনকে ডাকা হবে। নিয়ম অনুযায়ী, লিখিত পরীক্ষায় ন্যূনতম যোগ্যতামান যত নম্বর ধরা হবে, সেই নম্বর যত জন চাকরিপ্রার্থী পাবেন, তাঁদের সবাইকে ইন্টারভিউয়ে ডাকা হবে।
সব মিলিয়ে অনুমান, নবম-দশম এবং একাদশ-দ্বাদশ মিলিয়ে ৫০ থেকে ৬০ হাজারের মতো চাকরিপ্রার্থীকে ডাকা হতে পারে। এত চাকরিপ্রার্থীকে কেন্দ্রীয় ভাবে ডেকে নির্দিষ্ট সময়ে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা সম্ভব নয় বলেই শিক্ষা দফতরের দাবি।
যদিও যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের চাকরিপ্রার্থীদের মতে, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে লিখিত পরীক্ষার ফল বেরোবে। নভেম্বরের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া শুরু হলেও কি ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব? অঞ্চলভত্তিক ইন্টারভিউ দ্রুত শেষ করতে চেয়ে সেখানে কোনও রকম অস্বচ্ছতা থেকে যাবে না তো?
যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চের অন্যতম নেতা চিন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা স্বচ্ছতার জন্য চেয়েছিলাম, কেন্দ্রীয় ভাবে ইন্টারভিউ হোক। কিন্তু সময়ের অভাবে তাকরতে না পেরে আঞ্চলিক ভাবে যদি হয়, সে ক্ষেত্রে অঞ্চলভিত্তিক নম্বরের তারতম্য যেন না হয়, সেই বিষয়ে এসএসসিকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে।’’