‘নিজস্বতা বজায় রেখে ছবি করতে হবে’ - মুক্তি পেল অন্নপূর্ণা বসুর ছবি ‘স্বার্থপর’। একান্ত সাক্ষাৎকারে অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক।
বর্তমান | ২৩ অক্টোবর ২০২৫
তথ্য বলছে, আপনার ১৮৪টা ছবি হয়ে গেল?
তাই নাকি? গুনিনি। তবে কাছাকাছিই হবে (হাসি)।
‘স্বার্থপর’-এ অভিনয় করতে রাজি হয়েছিলেন কেন?
গল্পটা আমার খুব ভালো লেগেছিল। ভাই-বোনের গল্প। একে অপরকে দারুণ ভালোবাসে। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়, যে দু’জনেই অসহায়। টাকার জন্য সম্পত্তি বিক্রি করতে বাধ্য হয় ভাই। আর বোনের হয়তো টাকার প্রয়োজন নেই। কিন্তু বাড়ির উপর যে আবেগ জড়িয়ে আছে, তা নিয়ে ঝগড়ার সূত্রপাত। ঝগড়ার মধ্যেও যে কতটা ভালোবাসা রয়েছে, তা দেখা যাবে। আমার আইনজীবীর চরিত্র।
আপনাদের তো এখনও যৌথ পরিবার?
এটা ঈশ্বরের আশীর্বাদ। বাবা, ঠাকুরদার শিক্ষাটাই এমন যে, সকলে মিলেমিশে থাকো। হাতের পাঁচ আঙুল সমান নয়। পরিবারে সকলে একরকম হবেন না। সকলের বিদ্যে বুদ্ধি, রোজগার একরকম নয়। কিন্তু ছোটখাট জিনিস নিয়ে আমরা মাথা ঘামাব না। যার বেশি আছে, সে একটু বেশি দেবে। যার কম আছে, সে কম দেবে।
ছবির গল্পের সঙ্গে বাস্তবের মিল পেলেন?
আমাদের পরিবারে মতপার্থক্য হয়েছে। কিন্তু ঝগড়া হয়ে আইন-আদালত পর্যন্ত গড়ায়নি। আসলে মনোমালিন্য হলেও বাড়ির বাকি সদস্যরা মিটমাট করে দেন। আর যাঁদের মধ্যে মতপার্থক্য হল, তাঁরা সেটা মেনেও নেন।
ইন্ডাস্ট্রির বহু বদল দেখলেন, কোন পরিবর্তনটা ভালো?
টেকনিক্যাল ব্যাপারে অনেক এগিয়ে গিয়েছে টলিউড। অন্য কোন দিকে কতটা এগিয়েছে, বলতে পারলাম না (হাসি)।
অনেকেই বলেন, ‘বাংলা সিনেমার পাশে দাঁড়ান’, আপনি এ ব্যাপারে কী বলবেন?
আমি কখনও এ কথা বলব না। কোনও জিনিস খারাপ হওয়ার পরেই, কেউ দুর্বল হলে তবেই তো বলা হয়, ‘পাশে দাঁড়ান’। খারাপ না হলে তো বলতেন না। খারাপটা করল কে? আমরা দুর্বল হলাম কীভাবে? তার পিছনে তো নিজেদের অযোগ্যতাই রয়েছে। খুব নিষ্ঠার সঙ্গে আগেকার লোকজন কাজ করতেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভালো রেজাল্টও হতো। একটা উদাহরণ দিই। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের ছবি ‘মৌচাক’। এখনও দেখলে মন ভালো হয়ে যায়।
এখনকার বাংলা ছবি সেই উচ্চতায় পৌঁছবে?
না। কারণ এখনকার ছবির ক্ষেত্রে ভাষাটা বাংলা থাকছে। কিন্তু মেকিংটা বাংলা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। আমাদের নিজস্বতা একশো শতাংশ বজায় রেখে ছবি করতে হবে। বিশ্বাসযোগ্য করতে হবে। ‘স্বার্থপর’ একশোর মধ্যে একশো বাংলা ছবি। আমার পছন্দ হয়েছে বলেই কাজটা করলাম।
পুরনো ছবির কথা উঠল, এনটিওয়ানের ১০ নম্বর ঘরের কথা মনে পড়ে?
ও বাবা! ঠিক পুকুরের ধারে। মনে পড়লে মনকেমন করে। ওখানে তখন সিনিয়ররা বসতেন। কালী বন্দ্যোপাধ্যায়, শেখর চট্টোপাধ্যায়, উৎপল দত্ত, অনুপকুমার, রবি ঘোষ — ওঁরা বসতেন। আমি জুনিয়র। ওদের আড্ডাটা শোনার জন্য ওই ঘরে বসতাম। একটা রসিক আড্ডা হতো। আর একটা আড্ডা হতো সিরিয়াস। দু’রকম আড্ডাই ভীষণ এনজয় করতাম (হাসি)।
কাজ তো এখন অনেক কমিয়ে দিয়েছেন?
এখন কাজ প্রায় করিই না। নাতি, নাতনিকে নিয়ে সময় কাটে। বই পড়ি। পড়া বই আবার নতুন করে পড়ি। আর ছবি দেখা আগের থেকে কমে গিয়েছে। নতুন কোনও ছবি ভালো হয়েছে শুনলে দেখি। ‘অপরাজিত’ দেখেছিলাম। খুূব ভালো লেগেছিল।