ভৈরব ব্যাটালিয়ন থেকে অশনি ড্রোন প্ল্যাটুনস, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভবিষ্যত আরও শক্তিশালী, ডিজি ইনফ্যান্ট্রি কী বললেন জানেন?...
আজকাল | ২৩ অক্টোবর ২০২৫
আজকাল ওয়েবডেস্ক: শৌর্য দিবসের আগে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভবিষ্যতের পরিকল্পনা সম্পর্কে একাধিক তথ্য প্রকাশ করলেন ইনফ্যান্ট্রির ডিরেক্টর জেনারেল লেফটেন্যান্ট অজয় কুমার। সেই তালিকায় রয়েছে ভৈরব কমান্ডো ব্যাটালিয়ন থেকে অশনি ড্রোন প্ল্যাটুনসের মতো শক্তিশালী বিভাগ।
ভৈরব কমান্ডো ব্যাটালিয়নকে ‘লিন-মিন ইউনিট’ বলে উল্লেখ করে বুধবার ইনফ্যান্ট্রির ডিরেক্টর জেনারেল নবগঠিত এই ব্যাটালিয়নগুলি উচ্চ গতিসম্পন্ন, চটপটে ও কৌশলগতভাবে সক্ষম ইনফ্যান্ট্রি ইউনিট, যা প্রচলিত ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন ও স্পেশাল ফোর্সের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করবে।
তিনি জানান, এই নতুন ইউনিটগুলি দ্রুত কৌশলগত হামলা দ্রুত মোতায়েনের জন্য গঠিত হয়েছে। যা সীমান্তবর্তী এলাকা ও উচ্চ-তীব্রতার পরিস্থিতিতে কার্যকর ভূমিকা নেবে।
প্রতিটি ভৈরব ব্যাটালিয়নে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জন সদস্য থাকবে, যাদের মধ্যে সিগন্যালস, আর্মি এয়ার ডিফেন্স ও আর্টিলারি রেজিমেন্ট থেকেও সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল কুমার আরও জানান, বর্তমানে পাঁচটি ভৈরব ব্যাটালিয়ন গঠন করা সম্পন্ন হয়েছে ইতিমধ্যেই। তাদের অপারেশন পরিচালনার জন্য মাঠে নামানো হয়েছে।
গত ১ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া ‘অন-দ্য-জব’ প্রশিক্ষণ আগামী ৩০ অক্টোবর শেষ হবে। এর পর থেকেই এই ইউনিটগুলি সম্পূর্ণরূপে অপারেশনাল হয়ে উঠবে এবং যেকোনও সামরিক অভিযানে অংশ নিতে প্রস্তুত থাকবে।
শৌর্য দিবস (যা আগে ইনফ্যান্ট্রি ডে নামে পরিচিত ছিল) উপলক্ষে ইনফ্যান্ট্রি ডিরেক্টর জেনারেল সেনাবাহিনীর নতুন ড্রোন প্লাটুন ‘আশনি’-র কথাও প্রকাশ্যে আনেন এদিন। তিনি জানান, প্রতিটি ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়নে এখন থেকে একটি করে ‘অশনি’ ড্রোন প্ল্যাটুন থাকবে।
মোট ৩৮০টি ড্রোন প্ল্যাটুন গঠন করা হবে। এই ড্রোন ইউনিটে থাকবে প্রায় ১০ প্রকারের ড্রোন। এর মধ্যে চারটি নজরদারির জন্য এবং ছ’টি যুদ্ধক্ষেত্রে আক্রমণ চালানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হবে।
এর মধ্যে থাকবে কামিকাজে ড্রোন, লয়টারিং মিউনিশন এবং নন-প্রিসিশন ড্রপিং ড্রোন। তিনি আরও জানান, সেনাবাহিনীর কাছে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক গাইডেড মিসাইল সিস্টেম এবং ফোলিয়েজ-পেনিট্রেশন রাডার সংযোজনের প্রক্রিয়াও চলছে।
এই রাডার এবং ড্রোন প্রযুক্তি সম্প্রতি এক অভিযানে তাদের কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে বলেও জানান তিনি। লেফটেন্যান্ট জেনারেল কুমার ‘অপারেশন সিঁদুরের’ কথাও উল্লেখ করেন, যা আধুনিক যুদ্ধের প্রকৃতি ও যৌথ সামরিক প্রস্তুতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘অপারেশন সিঁদুর প্রমাণ করেছে যে কৌশলগত পদক্ষেপগুলিকে বৃহত্তর সামরিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে সুনির্দিষ্টভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা কতটা প্রয়োজনীয়। এর পাশাপাশি সামরিক অভিযানে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনী এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার ঘনিষ্ঠ সমন্বয় ছিল, যা মাল্টি-ডোমেইন সিনার্জির একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। অপারেশনটি দেখিয়ে দিয়েছে আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযুক্তি, ড্রোন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং নির্ভুল অস্ত্রব্যবস্থা ভবিষ্যতের সামরিক লড়াইকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে’।
ইনফ্যান্ট্রির চলমান আধুনিকীকরণ এবং সক্ষমতা বৃদ্ধি সম্পর্কেও বিস্তারিত জানান লেফটেন্যান্ট জেনারেল। বলেন, ইনফ্যান্ট্রিকে আরও চটপটে, প্রাণঘাতী এবং প্রযুক্তিনির্ভর বাহিনীতে রূপান্তর করার জন্য ছয়টি মূল স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে সংস্কার চালানো হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, সেনাবাহিনীতে যুক্ত হচ্ছে ৭.৬২ মিমি অ্যাসল্ট রাইফেল, চতুর্থ ও পঞ্চম প্রজন্মের অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক অস্ত্র, নতুন রকেট লঞ্চার এবং লয়টার মিউনিশন, যা ড্রোন সহায়তায় নির্ভুল আঘাত হানতে সক্ষম।
গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য বাহিনীতে যুক্ত করা হচ্ছে কুইক রিঅ্যাকশন ফোর্স ভেহিকল, অল-টিরেন ভেহিকল ও লাইট স্পেশালিস্ট ভেহিকল, যা বিভিন্ন ভূখণ্ডে দ্রুত যাতায়াতের সুবিধা দেবে।
যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যবহৃত হচ্ছে আধুনিক সফটওয়্যার ডিফাইন্ড রেডিও (SDR), যা এনক্রিপটেড ও ইন্টার অপারেবল সংযোগ নিশ্চিত করবে, ফলে অপারেশনের সময় নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন সমন্বয় বজায় থাকবে। যুদ্ধক্ষেত্রের স্বচ্ছতা বাড়াতে সেনাবাহিনীতে যুক্ত হচ্ছে আরও উন্নত ড্রোন, নজরদারি রাডার ও থার্মাল ইমেজার, যা রিয়েল-টাইম পরিস্থিতি বোঝার ক্ষমতা বাড়াবে।
তিনি আরও জানান, সৈন্যদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য দেওয়া হচ্ছে এনআইজে লেভেল-IV ব্যালিস্টিক প্রোটেকশন গিয়ার, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, ট্যাকটিকাল শিল্ড ও উন্নত মানের সোলজার কিট।
প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হচ্ছে অত্যাধুনিক ট্যাকটিকাল সিমুলেটর, কনটেনারাইজড ফায়ারিং রেঞ্জ এবং ডিজিটালি সহায়তাপ্রাপ্ত যুদ্ধ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, যাতে সৈন্যরা আধুনিক যুদ্ধক্ষেত্রের বাস্তব চাহিদার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে।