কালীপুজো উপলক্ষে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন রীতি রেওয়াজ মেনে চলা হয়। কিন্তু বর্ধমানের গুসকরা শহরে সর্বজনীন কালীপুজোয় থাকে অভিনব সম্প্রীতির বার্তা। এখানকার কালীপুজোয় মুসলিম পরিবার থেকে আসা কদমা এনে তবেই পুজো হয়। প্রতিমার হাতে কদমা না দেওয়া পর্যন্ত পুজো শুরু করা যাবে না। সম্প্রীতির এই মেলবন্ধনে এলাকার সমস্ত হিন্দু-মুসলিম পরিবার এক হয়ে কালীপুজোর উৎসবে সামিল হন। ছোট থেকে বড়ো সকলের অংশগ্রহণে এবারও নানা অনুষ্ঠান চলছে। বৃহস্পতিবার ভাইফোঁটা পর্যন্ত চলবে নানান কর্মসূচি। এমনটাই জানিয়েছেন পুজো উদ্যোক্তারা।
পূর্ব বর্ধমানের গুসকরা পুরসভা এলাকায় সুকান্ত স্মৃতি সংঘের এই সর্বজনীন কালী আরাধনা এবার পঁচিশ বছরের। শুরু থেকেই এখানকার সকল ধর্মের মানুষজন এক হয়ে এই পুজোর অনুষ্ঠানে যোগ দেন। রীতি রেওয়াজ মেনে সাবেকি প্রতিমা এনে পুজো হয়। এখানকার কালীপ্রতিমার হাতে থাকা কদমা কিন্তু আসে মুসলিম পরিবার থেকে। সেই কদমা মায়ের হাতে দেবার রীতি রেওয়াজ আছে এখানে। পঁচিশ বছর ধরে এভাবেই চলে আসছে। আর পুজো কমিটির অধিকাংশ সদস্যই মুসলিম।
জানা গেছে বছরের পর বছর ধরে কালী প্রতিমার হাতে দেওয়া কদমা আনা হয় সুকান্তপল্লির আলি হোসেন মণ্ডলের পরিবার থেকে। ওই কদমা প্রতিমার হাতে দেওয়া ছাড়াও নৈবেদ্য সাজানো থালাতেও দেওয়া হয়। পুজো কমিটির সম্পাদক ইন্দ্রজিৎ দাস জানান, এখানকার পুজোয় চাঁদা তোলা থেকে শুরু করে নানা অনুষ্ঠান এবং বিসর্জন পর্যন্ত সব কিছুতেই হিন্দু-মুসলিম এক হয়ে কাজ করেন। পুজো উপলক্ষে ভোগের যে প্যাকেট প্রথম দেওয়া শুরু হয় শুকুর সেখের বাড়ি থেকে। সম্প্রীতির এই পরিবেশে এক ভিন্ন পরম্পরা এখানকার পুজোয়। গুসকরা পুরসভা এলাকায় এই ধরনের পুজোর আয়োজন করার জন্য কমিটির সদস্যদের সাধুবাদ জানালেন পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের অধ্যক্ষ অপার্থিব ইসলাম। তিনি বলেন, যেখানে জাতপাতের ভেদাভেদ নিয়ে নানাভাবে উস্কানি চলছে সেখানে এই রীতি রেওয়াজ সমাজকে অনেকটাই সচেতন করবে।
এদিকে যাঁদের নিয়ে সম্প্রীতির বার্তা সেই আলি হোসেন মণ্ডলের দাবি, আমাদের দেওয়া কদমা দিয়ে এখানে পুজো হয় বলে আমরা ধন্য। পুজোর মণ্ডপে মোমবাতি জ্বালানো, প্রসাদ নেওয়া সবই করি শ্রদ্ধার সঙ্গে। বাড়ির ছোট বড়ো সকলে মিলে পুজোর কটা দিন আনন্দ উৎসবে কাটান বলে জানিয়েছেন তিনি। সারা বছরের মধ্যে এই কটাদিন তারা যে অপেক্ষায় থাকেন সে কথাও জানিয়েছেন।