মঙ্গলবার রাতে মারওয়া গ্রামের জেলা হাসপাতালে মারা গিয়েছে চার মাসের হুসেন। তার আগে পিকিউ (PICU)-তে টানা চার দিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছিল সে। এই বয়সে অন্যান্য শিশুদের ওজন যেখানে অন্তত পাঁচ কেজি হওয়া উচিত, সেখানে হুসেন ছিল মাত্র আড়াই কেজির। তার কঙ্কালসার চেহারা, আধখোলা চোখ, বিবর্ণ ঠোঁট ছিল তার অসুস্থতার নিঃশব্দ দলিল। এতটাই দুর্বল ছিল সে যে, কেঁদে নিজের কষ্ট প্রকাশ করার শক্তিটুকুও তার ছিল না। জন্মের সময় হুসেনের ওজন ছিল ৩ কেজি। কিন্তু তার পর নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে তার ওজন অত্যন্ত দ্রুত হারে কমতে থাকে। সে মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তার উপর জানা যায়, জন্মের পর থেকে সে একটিও টিকা পায়নি। এর ফলে তার ছোট্ট শরীর আরও বিপদের সম্মুখীন হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত যা আর সামাল দেওয়া যায়নি।
পুলিশসূত্রে খবর, গত শনিবার ছেলেকে নিয়ে হাসপাতালে ছুটে এসেছিলেন মা আসমা বানো। শিশু চিকিৎসক হুসেনকে পরীক্ষা করে চমকে ওঠেন। দ্রুত তাকে ‘গুরুতর অপুষ্টিগ্রস্ত’ ঘোষণা করেন। হুসেনকে প্রথমে পাঠানো হয় নিউট্রিশন রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে, পরে নিয়ে যাওয়া হয় পিকিউ-তে। সেখানেই পরে তার মৃত্যু হয়। হুসেনের মৃত্যুতে তিন কর্মীর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর। নোটিস ইস্যু করা হয়েছে মেডিক্যাল অফিসার এসপি শ্রীবাস্তব, হেলথ ওয়ার্কার লক্ষ্মী রাওয়াত ও আশা কর্মী উর্মিলা সৎনামির বিরুদ্ধে। এদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, এঁরা সময়মতো শিশুর অব্যবস্থার খবর রাখেননি, ‘হাই রিস্ক কেস’ হিসাবে শনাক্তও করেননি।
উল্লেখ্য, হুসেনের মৃত্যু মধ্যপ্রদেশে অপুষ্টিতে শিশুমৃত্যুর প্রথম ঘটনা নয়। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আগস্টে শিবপুরীতে ১৫ মাসের দিব্যাংশীর মৃত্যু কিংবা শেওপুরে দেড় বছরের রাধিকার মৃত্যুই স্বাস্থ্য বিভাগের গাফিলতির জ্বলন্ত দলিল। পরিসংখ্যান তো আরও উদ্বেগজনক তথ্য দিচ্ছে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে সারা দেশে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে মারাত্মক ও মাঝারি অপুষ্টির গড় হার ছিল ৫.৪০ শতাংশ। মধ্যপ্রদেশে সেই হার ৭.৭৯ শতাংশ। শুধু তাই নয়, রাজ্যের ৫৫ জেলার মধ্যে ৪৫টিই কেন্দ্রীয় তথ্য অনুযায়ী ‘রেড জোন’-এর আওতাধীন, যেখানে ২০ শতাংশেরও বেশি শিশু বয়স অনুযায়ী অতি কম ওজনের। সরকারি হিসাব বলছে, এনআরসি কেন্দ্রে গুরুতর অপুষ্ট শিশুর জন্য বরাদ্দ মাত্র ১২ টাকা। এই বিষয়টি বিধানসভায় সম্প্রতি তুলে ধরেছিলেন মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস বিধায়ক বিক্রান্ত ভুরিয়া। তাঁর এক প্রশ্নের উত্তরে রাজ্য সরকার অপুষ্টি দূরীকরণে দিনপ্রতি বরাদ্দের তথ্য প্রকাশ করে। আর সেই তথ্য সামনে আসার পরই চক্ষু চড়কগাছ সকলের। ভুরিয়া বিধানসভায় বলেন, অপুষ্টিতে ভোগা বাচ্চাদের জন্য সরকার দিনে মাত্র ৮-১২ টাকা খরচ করে, অথচ সেখানে দিনপ্রতি গোখাদ্যের জন্য বরাদ্দ রয়েছে ৪০ টাকা। তবে রাজ্যের নারী ও শিশুকল্যাণ মন্ত্রী নির্মলা ভুরিয়া মেনে নিয়েছেন যে, অপুষ্টি প্রতিরোধে রাজ্যে তেমন কোনও বরাদ্দ নেই। তিনি জানিয়েছেন, ‘‘আমরা কেন্দ্রের কাছে অপুষ্টি দূরীকরণে আরও অর্থসাহায্যের আর্জি জানিয়েছি।’’